• মুক্তমত

অদেখা পুরুষ নির্যাতন, বর্তমান প্রেক্ষাপট

  • মুক্তমত
  • ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১৪:৪০:৩৭

নিজস্ব প্রতিবেদনঃ সময়ের অন্তরালে নারী নির্যাতনের মতো পুরুষও নির্যাতিত হচ্ছে তাদের ‘স্ত্রী’ অর্ধাঙ্গিন সঙ্গীর কাছ থেকে। তবে এ নির্যাতন দেখা যায় না। কোট-কাচারি আর থানায় নারী নির্যাতনের মতো ভুরি ভুরি অভিযোগ দায়ের হয় না। কেন হয়না ? ছোট্ট একটা প্রশ্ন থাকলেও জমাটবাধা পুরুষের চক্ষুলজ্জা, সংসার টিকিয়ে রাখা, আত্নসম্মানবোধ  বজায় রাখতেই অদেখায় থেকে যায় পুরুষের অপ্রকাশিত নির্যাতনের আর্তনাত। সম্প্রতি দাম্পত্যের কলহের কারণে রাজধানী ঢাকায় এক ‘পুলিশ সদস্যের আত্মহত্যা’র ঘটনা ফোকাসে এসেছে। আত্মহত্যার ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। পর্দার আড়ালে পুরুষরা আজ অবলা নারীর কাছ থেকে কিভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। রাজধানীর মিরপুর পুলিশলাইনের আব্দুল কুদ্দুস নামে পুলিশ সদস্য মৃত্যুর আগে ফেসবুকে তার টাইমলাইলে আবেগঘন স্টেটাস দিয়েছিলেন। মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী না করলেও ইংগিত টেনেছেন তার স্ত্রী ও শ্বাশুড়ীকে নিয়ে। লিখেছিলেন ‘আমার মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করব না। ভেতরের যন্ত্রণাগুলো বড় হয়ে গেছে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। প্রাণটা পালাই পালাই করছেৃ।’ মানুষ যে সহজে আত্মহত্যা করে না, আত্মহত্যার পিছনে কোন না কোন কারণ থাকে। দীর্ঘদিন ধরে চেপে রাখা কষ্ট, না বলার যন্ত্রণা। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও আত্নহত্যার ঘটনা ঘটছে। কারণগুলো হচ্ছে দাম্পত্য কলহ, পরকীয়া ঘটনায়। আজকের পরকীয়া প্রেমের মহামারী ধারণ করেছে পশ্চিমা সংস্কৃতি আর ভারতীয় স্টার জলসা, জি বাংলা সিরিয়াল নাটকের হাত ধরে। পুলিশের ওই সদস্যের নাম শাহ আব্দুল কদ্দুস। আত্মহত্যার জন্য কাউকেই দায়ী না করলেও অবিবাহিত তরুণদের কাছে রেখে গেছেন এক সতর্কবার্তা। লিখলেন, ‘অবিবাহিতদের প্রতি আমার আকুল আবেদন আপনারা পাত্রী পছন্দ করার আগে পাত্রীর মা ভালো কিনা তা আগে খবর নেবেন। কারণ পাত্রীর মা ভালো না হলে পাত্রী কখনই ভালো হবে না। ফলে আপনার সংসারটা হবে দোজখের মতো।’ কী পরিমাণ কষ্ট পেলে আত্মহত্যার পূর্বে এ কথা লেখা হয় তা সহজেই অনুমেয়। তাঁর এ অনাকাংখিত মৃত্যু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দিচ্ছে, কী নির্মমতা তৈরি হয়েছে পুরুষদের জীবনে। কথায় বলে, নদীর পানি ঘোলাও ভালো, জাতের মেয়ে কালোও ভালো’। পুলিশ সদস্য শাহ আব্দুল কদ্দুস চিরাচরিত সত্যটাই বলে গেছেন জীবন দিয়ে। আজ স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সভ্যতার যুগে আঙ্গুলের বাটন আর রঙিন টিভির পর্দা কেড়ে নিচ্ছে হিতাহিত জ্ঞান আর শুদ্ধ সংস্কৃতিবোধ। ক্রমাগত মানুষ ধর্ম হতে সরে যাচ্ছে। যদিও বিশ্বে মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে, মুসল্লীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ঈমানের জোর বাড়ছে না। মানুষ এখন পুজিবাদী যুদ্ধে লড়াইয়ে মহা ব্যস্ত। নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। পুরুষরা এখন নারীর ক্ষমতার অধীনে কাজ করছে। সারাবিশ্বে আজ যে হারে নারী নির্যাতন আর ধর্ষণের খবর বিশ্বমিডিয়ায় উঠে আসছে, সে হারে তলে তলে অগণিত পুরুষ নারীর কাছে নির্যাতনের শিকার হলেও তা উঠে আসছে না। কঠিন হৃদয়ের পুরুষ, সে নির্জনে চোখের জল ফেলে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য নানান প্রতিকূলতার সাথে সৃষ্টির আদিকাল হতেই লড়াই করে যাচ্ছে। এখন কথা উঠতে পারে, নারীরা তো এখন কর্মজীবি হয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কাজ করছে। সম-অধিকার আদায়ে কোটা পুরণে আন্দোলন করছে। মুখ্য কথা যে, নব্বই সালের পর হতে আমরা নারীর ক্ষমতায়নে পুরুষহীন নেতৃত্বে জীবন ভোগ করছি। সে যাক, বিয়ের পূর্বে কনে দেখার আগে যে কনের জাতবংশ দেখতে হয় এ প্রচলিত নিয়ম এখনো রয়েছে। পরিবর্তন না হলেও যোগ হয়েছে নতুন সংস্কৃতি। যৌতুকের তুলনায় এখন মোহরানা তথা কাবিননামার অংক প্রবৃদ্ধি যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যৌতুকের তুলনায় মোহরানার অংক এখন বেশি দেখা যায়। পাত্র সে টাকা বিয়ের রাতে মোহরানা পরিশোধ করতে পারুক আর না পারুক, পরবর্তীতে যেকোন পরিস্থিতিতে এই অংকবৃদ্ধি  প্রয়োগ করা যাবে। বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে, প্রেম প্রতারণা, প্রতারক নারীদের বিয়ে বাণিজ্য ঘটনা। অল্প কয়েক দিন ঘর সংসার। পরে অন্য প্রেমিকের সাথে আড্ডা বিলাস, দেহশয্যা। অতঃপর মন চাইলে ডিভোর্স! নয়তো বনিবনা না হলে সোজা থানায় দেনমোহর কিংবা যৌতুক নির্যাতনের মামলা। বর্তমানে পুরুষদের জন্য আরেকটি আতঙ্ক হয়ে যোগ হয়েছে। সেটা হচ্ছে কোনভাবে সম্পর্কের অবনতি ঘটলেই ধর্ষণের অভিযোগ। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। বিয়ের প্রতিশ্রæতিতে দু’মনের ইচ্ছাতেই শারীরিক সম্পর্ক। অতঃপর কোনক্রমে বৈবাহিক সম্পর্ক না হলে উঠে ধর্ষণের অভিযোগ। এটাকে ‘প্রতারণা’ না বলে ধর্ষণের অভিযোগ টেনে চরম লজ্জায় ফেলছে পুরুষদের। আসলে ধর্ষণ কী? ‘ধর্ষণ’ হচ্ছে এক ধরণের যৌন আক্রমণ। একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌন সঙ্গম বা অন্য কোন ধরণের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটনাকেই ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান কিংবা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন- কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি) এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত’। তাহলে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক, ইচ্ছায় দৈহিক সম্পর্ক অতঃপর সম্পর্কের অবনতি হলে সেটা কি প্রতারণার অভিযোগ না হয়ে দুঃখজনক সেটা ধর্ষণের অভিযোগ টানা হচ্ছে। ভারতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের তথ্যানুযায়ী একটি রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৩৮ হাজার ৯ শত ৪৭টি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে ১০ হাজারের বেশি অভিযোগ, বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণের। সেদেশের আইনজীবী বিনয় শর্মা জানিয়েছেন, কোনো সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলেই নারীরা ধর্ষণের অভিযোগ করছেন। কেউ কেউ আবার টাকার লোভে অভিযোগ করছেন। কিছুদিন আগেই পাঁচ লাখ রূপির বিনিময়ে এক নারী এ ধরনের অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। একজন গবেষক ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ২০১৩ সালে গবেষণা করে বলেছেন, এক তৃতীয়াংশ নারী সম্পর্কের অবণতি ঘটে যাওয়ার পর ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।’এ চিত্র আমাদের দেশে প্রত্যক্ষমান। নারীদের সুরক্ষায় যতোগুলো আইনী ব্যবস্থা রয়েছে, এর বিপরীতে পুরুষদের নারী দ্বারা নির্যাতনের আইনি ব্যবস্থা তেমন দেখা যায় না। যার কারণে পুরুষরা পর্দার আড়ালে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সামাজিকভাবে চলতে চক্ষুলজ্জা আর পরিবারের কথা চিন্তা করে দিনের পর দিন সহধর্মিণী তথা স্ত্রী নামক নারীর অকথ্য নানান নির্যাতন-নিপীড়ন, ভয়ভীতি প্রকাশহীনভাবে সহ্য করে যাচ্ছেন। নির্যাতিত পুরুষের কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ দৈহিক-আর্থিক, কেউ সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। যার কারণে মানসিক টর্চারের কারণে অনেক সময় আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয় পুরুষদের মনে। ইচ্ছে করলেই নির্যাতনের কথা বলতে পারছেন না। নারীদের ক্ষেত্রে সবধরণের আইনী ব্যবস্থা থাকার থাকায় একজন নারী আইনের অপশক্তি প্রয়োগ করে ইচ্ছে করলেই ঘটনা সাজিয়ে পুরুষের বিরুদ্ধে থানা কিংবা আদালতে নির্যাতন বা যৌতুক মামলা দিতে পারছেন। একজন পুরুষকে অতিষ্ঠ করতেই যে একটি মামলাই যথেষ্ট, এই মুখ্যম শক্তিটাকে কাজে লাগাচ্ছেন আজকের নারীরা। আদালত ও আইনজীবিরা বলছেন, নারী নির্যাতনের মধ্যে যৌতুক আইনের মামলাগুলোর অধিকাংশই মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। কারণ হিসেবে দেখা যায়, কোন কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া, সিদ্ধান্তের দ্বিমত, মনমালিন্য কিংবা ডিভোর্স (তালাক) প্রসঙ্গ কিংবা উচ্ছৃঙ্খল স্ত্রীকে শাসন বা স্ত্রীর পরকীয়া বাধা দিলে সেই স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজন থানায় বা আদালতে এসে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০-এর ১১(খ) অথবা যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০-এর ৪ ধারায় মামলা ঠুকে দেন। এই যে একটা কঠিন সময় দাঁড়িয়েছে। আইন যেহেতু নারী-পুরুষের উভয়ের ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান। তাই নারী সুরক্ষার মতো পুরুষ সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। কেননা, একজন নারী এক বা একাধিক পুরুষকে অতি সহজেই অপরাধী করে তুলতে পারে। হোক সেটা মিথ্যা, বানোয়াট। তবুও সেটা আদালত শুনে। তাই পুরুষ সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন প্রয়োজন। তা নাহলে দাম্পত্যের কলহের দরুণ শাহ আব্দুল কদ্দুস ওই পুলিশ সদস্যের মতো আত্মহত্যা মতো ঘটনা বৃদ্ধি পাবে, তাহলে এর দায়ভার কে নিবে? একপক্ষের জন্য সুরক্ষার আইন, আরেক পক্ষের জন্য আইনহীন বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতে থাকলে রাষ্ট্র ও সামাজিক শাসন এবং আইনের প্রতি অনাস্থা তৈরি হবে। তাই বিষয়টি ভাবার রয়েছে। বর্তমান ঘরে ঘরে পুরুষ নির্যাতন নিরসনে পুরুষ সুরক্ষার আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে । এস কে দোয়েল সাংবাদিক ও কলামিস্ট তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo