• অর্থনীতি

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ পাবে ১ লাখ

  • অর্থনীতি
  • ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১৯:০৬:৩৮

সিএনআই ডেস্ক: কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বা কোন কারণে অবসায়িত হলে সেই ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা তাদের জমানো সব টাকা ফেরত পাবেন না। শুধু তাই নয়, গ্রাহকের নামে কোটি টাকা জমা থাকলেও তাকে মাত্র এক লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার বিধান রেখে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ এর প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এটি তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবনায় ‘তহবিল এর দায়’ বিষয়ক ধারা-৭ এর (১) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর অবসায়নের আদেশ হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ওই অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক আমানতকারীকে তার বীমাকৃত আমানতের সম পরিমাণ (যা সর্বাধিক এক লাখ টাকা অথবা সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত টাকার বেশি হবে না), তহবিল হতে প্রদান করবে। প্রস্তাবনার ৭ এর (২) এর ধারায় বলা হয়েছে, অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনও আমানতকারীর একাধিক হিসাব থাকলে ওই হিসাবে যদি একত্রে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকে তবুও তাকে সর্বাধিক এক লাখ টাকা কিংবা সরকারের পুর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত টাকার বেশি পরিশোধ করা হবে না। এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমানতকারীরা তখনই সুরক্ষিত থাকবে, যখন ব্যাংক থেকে লুটপাট বন্ধ হবে। তিনি বলেন, কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে এক লাখ টাকার বেশি পাবে না। এটা ঠিক আছে, অন্যান্য দেশেও আমানত সুরক্ষা আইনে এমনটি থাকে। তবে অন্যান্য দেশে ব্যাংক থেকে এভাবে টাকা লুটপাট হয় না। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমানত সুরক্ষা পেতে হলে গ্রাহকদের নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। নিজের টাকা ঝুঁকিপুর্ণ ব্যাংকে না রেখে ভালো ব্যাংকে রাখতে হবে। বিশেষ করে যে সব ব্যাংক ভালো, দেখেশুনে সেই সব ব্যাংকে টাকা রাখতে হবে। আর যেসব ব্যাংক দুর্বল, সুশাসন নেই, দুর্নীতির আখড়া, লুটপাট করে টাকা বের করে নেওয়া হয়, সেই সব ব্যাংক থেকে দূরে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, সব ব্যাংক সমান নয়। এদিকে অর্থনীতিবিদদের মতে আইনের খসড়াটি বড় আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমানত সুরক্ষা আইনে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন হলে এক লাখ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ পাবেন না গ্রাহক। এ ক্ষতিপূরণ খুবই কম। এতে গ্রাহকরা ধীরে ধীরে আমানত তুলে নেবেন। কারণ একজন গ্রাহকের ৫ লাখ টাকার এফডিআর আছে ব্যাংকে। ওই ব্যাংক অবসায়ন হলে ৪ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ক্ষতি হবে। এ আইনটি সঠিক হচ্ছে না। এতে ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবাহ কমবে। আর আমানত কমলে ঋণ দেয়ার ক্ষমতাও কমবে ব্যাংকের। আর ঋণ দিতে না পারলে বিনিয়োগ হবে না। যা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে বুঝেশুনে আইনটি করা উচিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতি ড. মইনুল ইসলাম বলেন, যদি এমন হয়, যে একজন গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকা আছে, আর ওই ব্যাংকটি অবসায়নের পর গ্রাহক সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ পাবেন না। এটি গ্রহণযোগ্য নয়, সঠিকও হবে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, আগের আইনেও এক লাখ টাকার কথাই আছে। এখন আমানত সুরক্ষায় আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। তারা বলছেন, আগেও অবসায়িত ব্যাংকে আমানতকারীর সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হতো। কোনও আমানতকারীর এক লাখ টাকা জমা থাকলে তিনি পুরো অর্থই ফেরত পেতেন। তবে বেশি থাকলেও সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেওয়া হতো। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘শিডিউল ব্যাংকিং স্ট্যাটিসটিকস’ শীর্ষক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংকে জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। প্রায় ১০ কোটি ২৯ লাখ অ্যাকাউন্টে এই অর্থ জমা আছে। এর মধ্যে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জমা আছে এমন অ্যাকাউন্টগুলোতে আমানতের পরিমাণ ৬১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকা বর্তমানে বিমা আইন দ্বারা সুরক্ষিত। অর্থাৎ কোনো কারণে ব্যাংক টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলেও বিমা আইনের সুরক্ষিত থাকবে মাত্র ৫.২৯ শতাংশ। বাকি প্রায় ৯৫ শতাংশ আমানত অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকদের মোট আমানতের মধ্যে ১০ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা বিমা সুরক্ষার বাইরে রয়েছে। এই অর্থ ব্যাংক বন্ধ হলে বা কোনো কারণে তারল্য সংকটে পড়লে ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। ওই প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্যক্তি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মোট আমানতের পরিমাণ ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। মোট ১০ কোটি ২৫ লাখ অ্যাকাউন্টে ওই অর্থ জমা আছে। এক লাখ টাকা পর্যন্ত অ্যাকাউন্টে আমানত আছে এমন অর্থের পরিমাণ ৬০ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। বিমা আইনে সুরক্ষিত থাকবে মাত্র ৬.৪৪ শতাংশ অর্থ। ব্যক্তিখাতের ৯৩.৫৩ শতাংশ আমানতই ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। প্রতিবেদনে সঞ্চয় হিসাবের মধ্যে অন্তত ৮ কোটি অ্যাকাউন্ট সাধারণ অ্যাকাউন্ট। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে এই অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়েছে। এতে জমার পরিমাণ ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এই অ্যাকাউন্টগুলোতে গড় জমা মাত্র ৯২৫ টাকা। প্রকৃতপক্ষে সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা অনেক কম, কিন্তু তাদের জমার পরিমাণ বেশি। মূলত ১ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা অ্যাকাউন্টধারীরা সঞ্চয়কারী। এই সঞ্চয়কারীদের অর্থকেই বিমা আইনের বাইরে রাখা হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘আইন অনুসারেই আমাদের চলতে হবে। তবে আমানতকারীদের যত বেশি অর্থ সুরক্ষিত হবে আমানতকারীরা তত বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। তাই বিমা আওতায় আনার পরিমাণটা বাড়ানো যুক্তিযুক্ত হবে।’

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo