• সমগ্র বাংলা

শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরীঘাটে নানামুখী ভোগান্তি

  • সমগ্র বাংলা
  • ২০ জানুয়ারী, ২০২০ ১০:৪৬:৫৮

শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরীঘাটে নানামূখী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এ রুটে যাতায়াতকারীরা। ঘনকুয়াশার কারনে ফেরী চলাচল বন্ধ থাকা, সড়কের বেহাল অবস্থা, নদীতে নাব্যতা সংকট, যাত্রী ছাউনির অভাব, বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজি, স্পেশাল সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, সিরিয়াল ভঙ্গ করা সহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার ফলে এ ঘাটে চালক ও যাত্রীদের ভোগান্তির মাত্রা চরম আকার ধারন করছে। বিষয়গুলো নিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী, চালক ও মালিক পক্ষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করলেও রহস্যজনক কারনে এগুলো সমাধানের কোন উদ্যোগ নেই কতৃপক্ষ ও প্রশাসনের মাঝে। ফলে দিনের পর দিন এ অনিয়ম গুলো নিয়মে পরিনত হতে চলছে।
জানাগেছে, শরীয়তপুর চাঁদপুর ফেরীঘাট দিয়ে প্রতিদিন খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট সহ দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মালবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন পারাপার হয়। বিশেষ করে চট্রগ্রাম থেকে খুলনা বিভাগে যাতায়াতায়ের খুব সহজ পথ এটি। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারনে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সারা রাত ফেরী চলাচল বন্ধ থাকার কারনে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের। সড়কের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে তৈরী হয়েছে ট্রাক, কার্গো পিকাপ সহ বিভিন্ন যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত পরিমানে ফগ লাইট ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য কুয়াশার কারনেই ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে এ ঘাটে। আর যাত্রীদের জন্য ছাউনির ব্যবস্থা না থাকায়, সারারাত জুড়ে যাত্রীদের পোহাতে হয় শীতের কাঁমড়।
বাসযাত্রী মিলন মিয়া বলেন, ফেরীতে লাইট না থাকায় কুয়াশার কারনে চলাচল করতে পারছেনা। এছাড়া এঘাটে বসার জন্যও ভাল একটি ছাউনি ব্যবস্থা নেই। তবে ঘাট কতৃপক্ষ বলছে, শুধু ফগ লাইট নয়, নদীতে পানি কম থায় নাব্যতা সংকেটের কারনেই ফেরী চলাচল ব্যহত হচ্ছে।
এদিকে শরীয়তপুর সদরের মনোহর বাজার থেকে ফেরীঘাট পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার এর এ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থার কারনে সড়ক পথেও যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি উল্টে পড়ে থাকতো এ সড়কে। বর্ষার কাঁদা-পানির পর বর্তমানে ধূলাবালিতে অসহনীয় হয়ে উঠেছে যাত্রী, চালক ও সড়কের আশেপাশে বসবাসকারী জনসাধারনের জীবন। বিশেষ করে ঐ রাস্তার বেইলী ব্রীজ গুলো যানচলাচলের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ন। কিছুদিন পরপরই দুর্ঘটনা ঘটে এ ব্রীজ গুলোতে। এছাড়া একটি চাঁদাবাজ চক্র সুযোগ পেলেই বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তায় চাঁদাবাজি শুরু করে।
ট্রাক চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, রাস্তার বেহাল দশার কারনে এমনিতেই খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়। তার মধ্যে আবার সুযোগ পেলেই নারায়পুর সহ বিভিন্ন নির্জন পয়েন্টে একটি চক্র গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি করে। আমরা কি করবো!!
শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিক কাদির বলেন, আমাদের ইব্রাহীমপুর ফেরীঘাট থেকে মনহোর পর্যন্ত সড়কটিতে বর্তমানেও কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া যে বেইলী ব্রিজগুলো রয়েছে সেগুলো এবং সড়কটি মেরামতের কাজ আগামী ফেব্রুয়ারী থেকে পুরো দমে শুরু হবে।
স্পেশাল সার্ভিসের নামে টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল ভঙ্গ করা এবং চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এখন শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরীঘাটে সুশৃঙ্খল নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া কাঁচামাল, মাছ, গ্যাস ও গরু বহনকারী ট্রাক থেকে প্রতিনিয়তই মাত্রারিক্ত টাকা আদায় করছে একটি চক্র।
ট্রাক চালক খোকন মিয়া বলেন, তিনদিন ধরে ঘাটে এসে বসে আছি কিন্তু আমরা পারাপার হতে পারছিনা। এদিকে ঘাটের লোকজন অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সিরিয়াল ভেঙ্গে গাড়ি পার করে দিচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই।
ঘাটের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে ইব্রাহীমপুর ফেরীঘাটে দায়িত্বরত বিআইডাব্লিউটিসির সহকারী ম্যানেজার আব্দুল মমিন বলেন, মূল্যত ঘন কুয়াশা ও ডুব চরের কারনে রাতে অনেক সময় ফেরী চলাচল বন্ধ থাকে। তবে উপরস্থ কতৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে, তারা শীঘ্রই এখানে ফগ লাইটের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে। আমরা আমাদের নিয়ম অনুযায়ী গাড়ি থেকে ভাড়া আদায় করছি।
এ বিষয়ে ঘাট ইজারাদার জিতু মিয়া বেপারী বলেন, ঘন কুয়াশা, রাস্তার বেহাল দশা সহ বিভিন্ন করনে এ ঘাট দিয়ে গাড়ি চলাচল খুবই কম। এ ঘাটে কাঁচামাল ও পচনশীল গাড়ি আগে ছেড়ে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সিরিয়াল ঠিক রাখার দায়িত্ব সম্পূর্ন টিসি কতৃপক্ষের হাতে। এছাড়া রাস্তায় চাদাঁবাজির বিষয়টি আমি প্রশাসনকে অবগত করেছি।
এ বিষয়ে সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, ঘনকুয়াশা ও নাব্যতা সংকটে এ ঘাট দিয়ে ফেরী চলা ব্যহত হওয়ায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছে। স্পেশাল সার্ভিসের নামে সিরিয়াল ভঙ্গ করে গাড়ি পারাপারের বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে দমন করেছি।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo