• মুক্তমত

ধর্ষণ থামেনি, ধর্ষণ চলছেই…

  • মুক্তমত
  • ১৩ জানুয়ারী, ২০২০ ১০:৩৯:৫৮

সিএনআই ডেস্ক: ধর্ষণ থামেনি। যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর কথা বলি, শারীরিক নিপীড়নের পর এখন তাকে মানসিক নিপীড়নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। নির্যাতনকারীকে সনাক্ত করতে তদন্তের সনাতন প্রক্রিয়াতো এখনও এড়ানো যায়নি। এই প্রক্রিয়া না হয় সইতে হলো দোষীকে ধরতে। কিন্তু এর বাইরে অসংখ্য পক্ষ অপেক্ষায় থাকে মেয়েটিকে নিপীড়ন করার জন্য। দৃশ্যত এই প্রক্রিয়াগুলোকে নিপীড়ন ভাবি না হয়তো আমরা। কারণ ওই প্রক্রিয়ায় আমরা নিজেরাই ব্যাপক, উৎসাহ উদ্দীপণার মধ্য দিয়ে যোগ দেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েটির নাম পরিচয়ের ইশারাও যখন দিচ্ছিলো না গণমাধ্যম, তখন দেখা গেলো কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে মেয়েটির পরিচয়ের ইঙ্গিত দিয়ে দিচ্ছেন দৃশ্যমাধ্যমে। নিপীড়নের রাতে যখন হাসপাতালে এসে পৌঁছায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী, তখন তাৎক্ষণিক ভাবে একজন শিক্ষক ও স্বজনের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়। সেই সময় মেয়েটি শুধু নিশ্চিত করেছিল, তাকে নির্যাতনকারী ছিল একজন। একজন ‘দাম্ভিক’ ছিল এমন কথা মেয়েটি বলেনি। বরং বলেছিল লোকটি ফুটপাতে ধরার পর মুহূর্তেই ও জ্ঞান হারিয়েছিল। আমরা পরে দেখতে পারি, মেয়েটির বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে নির্যাতনকারী ‘দাম্ভিক’ ছিল। এই ‘দাম্ভিকতা’ বিষয়টি পরবর্তীতে ‘মজনু’ নামের অভিযুক্ত আটকের পর বিভ্রান্তি তৈরি করে। কারণ সাধারণের মনে ‘দাম্ভিক’ এর যে রূপচিত্র তৈরি হয়েছিল, তা মজনু’র মধ্যে দেখতে না পেয়ে সাধারণের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি হয়। আমরা এখনও জানি না শেষ পর্যন্ত আদালতে কে দোষী প্রমাণিত হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত কখনোই চূড়ান্ত নয়। তারা নতুন কোনও সূত্র বা তথ্য যে কোনও সময় পেয়ে তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে ফেলতে পারেন। সুতরাং মজনু আসল না নকল অপরাধী তা প্রমাণ হোক তদন্ত এবং আদালতে। কিন্তু মেয়েটিকে তো ফিরে যেতে হবে পাঁচ জানুয়ারি রাত সাতটার আগের জীবনে। এজন্য তার দিকে রশ্মি দিয়ে সমাজকে দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, এই মেয়েটি সেই। মেয়েটি কোন বিভাগে, কোন অনুষদে পড়ে সেই বিষয়ে আমরা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে পড়বো, যখন তার শিক্ষকরা বা বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হবে ও এখন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয় হাজার হাজার বিভাগ এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়েটি হোক না একজন শিক্ষার্থী মাত্র। কিন্তু শিক্ষার্থীর অভিভাবকত্ব গ্রহণ করতে গিয়ে আমরা দেখছি, শিক্ষকরা মোটামুটি বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন মেয়েটি কোন বিভাগ বা অনুষদের। এটি মেয়েটির জন্য এক প্রকার পীড়নই বলতে হবে। কারণ ওই অনুষদের সকলের চোখ এখন ওকে খুঁজতে শুরু করেছে। অন্য অনুষদের চোখ মেয়েটির অনুষদের দিকে। মেয়েটিকে এমন কিছু বুঝতে দেওয়া ঠিক হবে না, তার জীবন এতটাই লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে যে স্বাভাবিক শিক্ষা জীবনে ফিরতে বিশেষ অভিভাবকত্বের প্রয়োজন। দরকার নেই বিশেষ অভিভাবকত্বের। পাঁচ জানুয়ারির সকালের মতই ফিরুক না বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমরা যতক্ষণ ওর দিকে নজর দিয়ে রাখবো, ততোক্ষণ পীড়ন চলতে থাকবে। তাই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য, ক্লাস করার জন্য বিশেষ কক্ষের দরকার নেই। থাকার জন্য বিশেষ ঘর বা বাড়ির দরকার নেই। দুর্ঘটনার আগে যেখানে যেমন থাকতো, তেমন ভাবেই জীবন যাপন করতে দিলেই ওর ওই বিভীষিকাময় রাত ফুরাবে। না হলে ওই রাত দীর্ঘ হতেই থাকবে। যারা হাসপাতাল এবং অন্যত্র এ কয়দিন মেয়েটিকে ঘিরে ছিলেন, তারা ঘটনার দিনের বর্ণনা এবং মেয়েটির সম্পর্কে গণমাধ্যম বা লেখা, বিবৃতিতে বলার সময় সংযত থাকুন। এই ইস্যুকে ব্যবহার করে নিজের বা নিজেদের অবস্থান বদল বা দৃঢ় করার চেষ্টা না করাই ভালো। কারণ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে, সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের সকলের আমলনামা আছে। আমরা শুধু তা ভুলে থাকি। পাঁচ জানুয়ারি রাত সাতটার আগে বা পরে ধর্ষণ কিন্তু থামেনি। প্রেমিক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করছে। ভাড়াটে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বাড়ির মালিকের দ্বারা। ধর্ষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না ৪,৫ বছরের শিশুও। ধর্ষক ধরা পড়ছে না এমন নয়। শাস্তিও হচ্ছে। কোনটা দ্রুত, কোনটার গতি ধীর। কিন্তু এভাবে কি ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই কি ধর্ষণ বন্ধ করবে? ধর্ষণ বন্ধ করার জন্য দরকার পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গীর বদল। আমরা আমাদের পুত্র সন্তানকে কী শিক্ষা দিচ্ছি, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার চোখ তৈরি করার। নিজেদের চোখটাই কি ঠিক হলো? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হাসপাতাল থেকে কোথায় নেওয়া হবে? এই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েও দেখলাম, আমাদের ছেলে সন্তানদের ওপর ভরসা রাখার মতো পরিবার আমরা তৈরি করতে পারিনি। আর মানসিক নিপীড়ন? মেয়েটিকে ছাড়িয়ে মা পর্যন্ত গড়িয়েছে বলেই, সাহস জোগানো মায়ের কণ্ঠেও মেয়েটিকে শুনতে হয়– ওতো রাতে একা এতোদূর যাওয়া ঠিক হয়নি। লেখক: তুষার আবদুল্লাহ বার্তা প্রধান, সময় টিভি

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo