• সমগ্র বাংলা

গাইবান্ধায় বরেন্দ্রের খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে

  • সমগ্র বাংলা
  • ২৬ জানুয়ারী, ২০২০ ১৬:১৪:৩৬

গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ  ফিজিবিলিটি যাচাই না করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গাইবান্ধায় অপরিকল্পিতভাবে খাবার পানি সরবরাহ কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ায় তা এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের সেচ এলাকায় সুবিধাভোগীদের মধ্যে খাবার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ কর্মসূচির আওতায় গাইবান্ধার ৫টি উপজেলায় ১৪টি পৃথক প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য ওই সময় ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬১ হাজার ২৫৬ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সেচপাম্প সংলগ্ন স্থানে একটি ওভারহেড ট্যাংক এবং ওই এলাকায় প্রাথমিকভাবে ৬ থেকে ৮ হাজার ফুট পানি সরবরাহ পাইপ বসানো হয়। ওভারহেড ট্যাংকের পানি ধারণ ক্ষমতা ২৫ হাজার লিটার। সেচ পাম্প এলাকার সুবিধাভোগী সদস্যদের পরিবারের খাবার পানি সমস্যা নিরসনেই এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বৌলেরপাড়া, বাড়ইপাড়া, আনালেরতাড়ি, পূর্ব বারবলদিয়া, দক্ষিণ গিদারী ও খামার বোয়ালী, সাদুল্যাপুরের ইসবপুর ও গয়েশপুর, সুন্দরগঞ্জের চন্ডিপুর ও ছাপরহাটি, গোবিন্দগঞ্জের কাঠালবাড়ি, বাতাইল, ছোট সাতাইল ও খুরশাইল এবং পলাশবাড়ী উপজেলার পশ্চিম দুবলাগাড়ীতে এই ১৪টি প্রকল্প স্থাপন করা হয়। প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৮০৪ টাকা ব্যয় করা হয়। এসব প্রকল্পের সাহায্যে মোট ১ হাজার ৫৯০টি পরিবারে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের সাথে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পান্ট সংযুক্ত না করায় সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্যাপুর ও সদর উপজেলার ১০টি পানি সরবরাহ প্রকল্প এক জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়ে। এসব এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানিতে অতিরিক্ত আয়রন এবং আর্সেনিকের আধিক্য থাকায় স্থানীয় লোকজন খাবার এবং ব্যবহারের পানি হিসেবে তা গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়নি। ফলে ওই তিন উপজেলায় পানি সরবরাহ প্রকল্প চালু হতে না হতেই এর কার্যক্রম মুখ থুবরে পড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে, গাইবান্ধার পশ্চিমাংশ তথা গোবিন্দগঞ্জে ও পলাশবাড়ী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন মূলত: বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে চিহ্নিত, এরমধ্যে রয়েছে গোবিন্দগঞ্জের কামদিয়া, রাজাহার, শাখাহার, সাপমারা, কাটাবাড়ি ও গুমানিগঞ্জ এবং পলাশবাড়ীর হোসেনপুর ও কিশোরগাড়ি ইউনিয়ন বরেন্দ্রভূক্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত। শুরুতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বরেন্দ্র এলাকায় কৃষি উন্নয়নে পানি সেচ সরবরাহের মধ্যে দিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে তারা বরেন্দ্র বহির্ভূত এলাকায় তাদের কার্যক্রম স¤প্রসারিত করে। তারা সেচ সরবরাহ ছাড়াও অন্যান্য কর্মসূচিও গ্রহণ করে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে খাবার পানি সরবরাহ, খাল-বিল ও পুকুর খনন, বৃক্ষ রোপন, ফলজ বৃক্ষের চারা বিতরণ, কৃষক ও মৎস্য চাষী প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এদিকে বরেন্দ্র এলাকায় পানি মোটামুটি আয়রন মুক্ত। কিন্তু বরেন্দ্র বহির্ভূত এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিতে আয়রন ও আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রবল। ফলে গোবিন্দগঞ্জে ও পলাশবাড়ী উপজেলা এ সংস্থার পানি সরবরাহ কার্যক্রম সফল হয়েছে। ওই দুটি উপজেলায় স্থাপিত ৪টি প্রকল্প এখনও চালু রয়েছে। সেখানে ২ হাজার ৩শ’ পরিবার খাবার পানি সংগ্রহের সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু বরেন্দ্র বহির্ভূত সুন্দরগঞ্জে, সাদুল্যাপুর ও সদর উপজেলায় ১০টি প্রকল্প চালু করা সম্ভব হয়নি। সদর উপজেলার দক্ষিণ গিদারী প্রকল্প এলাকার এক শিক্ষিত কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, আমাদের বাড়ীর নলকুপে প্রচুর আয়রন। ফলে নলকুপের পানিতে কাপড় কাঁচলে তা লাল হয়ে যায়। ওই পানি ব্যবহার করে আমরা শান্তি পাই না। বরেন্দ্র প্রকল্পে ভালো পানি পাবো সে আশা ছিলো। কিন্তু তাদের দেয়া পানিতেও প্রচুর আয়রন। তাই আমরা ওই পানি ব্যবহার করতে রাজি হইনি। এদিকে গত ১৯ জানুয়ারী গাইবান্ধা কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির এক সভায় বরেন্দ্রের পানি সরবরাহ প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রকল্পটিকে একটি ভালো উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থাসহ এটি এ অঞ্চলে পুনরায় চালু করার জন্য বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এধরণের একটি ছোট পানি পরিশোধন পান্ট স্থাপনে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলী এজাজুল ইসলাম জানান, এই মুহুর্তে ওই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ পাওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। তবে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত পেলে এ সম্পর্কে এব্যাপারে তথ্য জানানো সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, স্থানীয়ভাবে একটি পরিকল্পনা নেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এ এলাকার ভূ-গর্ভের ২০ ফুট পর্যন্ত নীচ স্তরে পানি মোটামুটি স্বচ্ছ। এ স্তরে স্যালোমেশিন বসিয়ে বিকল্প পন্থায় ওভারহেড ট্যাংকে পানি তুলে তা পাইপ লাইনের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের মধ্যে সরবরাহ করা যেতে পারে। তাতে সহনীয় পর্যায় আয়রন থাকলেও সমস্যা হবে না। এধরণের একটি স্যালো মেশিন স্থাপনে মোটর পাম্প এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক ব্যয় মিলে প্রয়োজন হবে ৫০ হাজার টাকা। এ টাকা কোথা থেকে আসবে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, এ অর্থের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo