• বিশেষ প্রতিবেদন

উলিপুরে ইনকিউবেটর মেশিন তৈরী করে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী রেজা

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৯ জানুয়ারী, ২০২০ ১৮:২৯:২৫

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে রেজাউল ইসলাম রেজা নামে এক উদ্যোক্তা নিজে ইনকিউবেটর মেশিন তৈরী করে তার মাধ্যমে বেইজিং হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে। তার দুটি ইনকিউবেটর মেশিনে ১৭০০ ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে বারশ’ থেকে তেরশ’টি। তার এই কর্মকান্ডর খবর পেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্যোক্তারা এসে ইনকিউবেটর মেশিন তৈরী করে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও সফল এই উদ্যোক্তা স্বপ্ন দেখছে প্রসেসিং প্লান্ট তৈরীর মাধ্যমে হাঁস মোটাতাজা করে তার মাংস বাজারজাত করার। বুধবার সরজমিন উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মধূপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় রেজাউল ইসলাম রেজার সাথে। এই উদ্যোক্তা জানান, প্রথমে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করে শুরু করেছিলেন ছাগলের খামার। ৬ মাসের মধ্যে ১৫০টি ছাগলের মধ্যে ৭৫টি পিপিআর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। লস হয় আড়াই লাখ টাকা। হতোদ্যম না হয়ে ইউটিউবে বেইজিং হাঁস সম্পর্কে জেনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কুড়িগ্রাম হাঁস প্রজনন কেন্দ্রে হাঁস না পেয়ে লালমনিরহাট থেকে এক উদ্যোক্তার কাছ থেকে ২শ’ ডিমপাড়া বেইজিং হাঁস কিনে আনেন। পরে ছাগলের সেড ব্যবহার শুরু করেন। হাঁসের চলাচলের জন্য দেড় একর জমিতে তিনটি বড় পুকুর তৈরী করেন। এরমধ্যে ইউটিউবে বেইজিং হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানের পদ্ধতি দেখে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে ৩০০ বাচ্চা ফোটানোর মত ইনকিউবেটর মেশিন উদ্ভাবন করেন। এতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ২৮ দিন পর বাচ্চাগুলো খোলস থেকে বেড়িয়ে আসার পর সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেন। লভ্যাংশ বেড়ে যাওয়ায় ছোট ইনকিউবেটর ভেঙ্গে এখন ৫ হাজার ও ১২ হাজার বাচ্চা ফোটানোর ইনকিউবেটর তৈরী করেন। এতে তার ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায়। রেজা জানান, প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তিনি এখন বিক্রি করছেন ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়। মাসে তার ১৩ হাজার বাচ্চা বের হয়ে আসে। খরচ বাদ দিয়ে মাসে আয় হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালি, সিলেট, চট্রগ্রাম, ভৈরব, হবিগঞ্জ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট থেকে ক্রেতা এসে তার কাছ থেকে বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ একরের মত দৈর্ঘ্যরে ৩টি পুকুর থেকে বিনা খরচে তিনি বছরে ৫/৬ লাখ টাকা মাছ বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। রেজার বাবা আব্দুল করিম জানান, ২০১৫ সালে আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করি। এরপর বাড়ীতে এসে ছেলেকে নিয়ে ছাগলের খামার শুরু করি। সেটাতে লস করার পর ছেলে বেইজিং হাঁস পালনে আগ্রহ হয়। তার উদ্যোগের ফলে এখনআমাদের খামার অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন এখানে ৪জন লোকের কর্মসংস্থান ছাড়াও প্রতিদিন গড়ে ৮/৯জন লোক কাজ করছে। আমার ৪ সন্তানের মধ্যে রেজা সবার বড়। রেজাউল ইসলাম রেজা আরো জানান, আমার হাঁসের বাচ্চার ডিম তৈরীর ইনকিউবেটর মেশিন দেখে তিন জেলায় গিয়ে আমি ইনকিউবেটর মেশিন তৈরী করে দিয়েছি। এরমধ্যে রংপুর থেকে একজন আড়াই লাখ টাকা খরচ করে ১৫ হাজার বাচ্চার একটি, নীলফামারী থেকে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে ১৩ হাজার বাচ্চার একটি এবং সিলেট থেকে একজন ১০ হাজার বাচ্চা ফোটানের মেশিন তৈরী করে দিয়ে এসেছি। স্নাতক পাশ করা এই উদ্যোক্তা অভিযোগ করেন তার এই কাজে জেলা বা উপজেলা থেকে কোন সহায়তা করা হয়নি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি এটি করেছেন। বেকার যুবকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। রেজাউল ইসলাম রেজার স্বপ্ন প্রসেসিং প্লান্ট তৈরীর মাধ্যমে হাঁস মোটাতাজা করে তার মাংস বাজারজাত করার। বড় আকারে করলে খরচ পরবে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা। তিনি ছোট আকারে এই প্লান্ট করার স্বপ্ন দেখছেন। যাতে তার প্রসেসিং প্লান্ট থেকে দেশে এবং বিদেশে হাঁসের উন্নতজাতের মাংস সরবরাহ করতে পারেন।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo