• জাতীয়

যেভাবে হলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা থেকে জননেতা খোকা!

  • জাতীয়
  • ০৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১৬:৩৭:৩৮

সিএনআই ডেস্ক: রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা থেকে রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে জনগণের মন কেড়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। এমপি-প্রতিমন্ত্রী-মন্ত্রী এমনকি অবিভক্ত ঢাকার মেয়র পদে আসীন হয়েছিলেন খোকা। রাজনীতিতেও কম যাননি। একসময়কার দাপুটে বামপন্থী নেতা খোকা বিএনপিতে যোগ দিয়ে আমৃত্যু দলটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। টানা এক দশকেরও বেশি সময় ঢাকার নগরপিতা ছিলেন তিনি। ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল মেয়র বলা হয়ে থাকে তাকে। রাজনীতির বাঁকে বাঁকে পথ চলেছেন খোকা। রাজনীতির কঠিন পথ চলেছেন দৃঢ় পদে। ঢাকা মহানগর বিএনপিতে আলাদা একটি বলয় তৈরি করেছিলেন তিনি। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাসের বিপরীতে দীর্ঘসময় ঢাকার রাজনীতির মাঠ কাঁপিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে মির্জা আব্বাসের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এই দুনেতা দ্বন্দ্ব নিরসনে হিমশিম খেতে হয় বিএনপির হাইকমান্ডকে। খোকা বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে মার খেয়েছেন বারবার। ঢাকায় বহু রাস্তায় তার রক্তের দাগ রয়েছে। একবার তো গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল খোকার। আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে ঝাঝড়া হয়ে যায় তার বুক। গুলি লাগে তার মুখমন্ডলেও। বিএনপি খোকার অবদানকে মূল্যায়ন করেছে। ২০০১ সালে তাকে অবিভক্ত ঢাকা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছিল। শুধু মেয়রই নন, মন্ত্রিত্বও করেছেন খোকা। দুই দুবার মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তিনি। সেখানেও সফল বিএনপির এ অন্যতম নেতা। খোকা মানুষকে নিয়েই রাজনীতি করেছেন। জনপ্রতিনিধিত্ব করেছেন দীর্ঘ সময়। এমপি-মন্ত্রী-মেয়র পদে থেকে ঢাকার মানুষের হৃদয় জয় করেছেন খোকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় বাম রাজনীতিতে সক্রিয় হন খোকা। পরে বামপন্থী রাজনীতি ছেড়ে আশির দশকে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙা কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হলেও তা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পাহারা দিয়ে সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করেন। এতে খোকা পুরান ঢাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) থেকে বিএনপির মনোনয়নে জয়ী হন খোকা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেন খোকা। এর পর তাকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। পরে তাকে ঢাকার মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি বিপুল ভোটে অবিভক্ত ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হন। ২৯ নভেম্বর ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন তিনি। রাজনীতিবিদ খোকা প্রথমে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে দলকে শক্তিশালী করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল খোকার। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। পাশাপাশি খোকাকে সভাপতি ও আবদুস সালামকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। ওয়ান-ইলেভেনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দলে যে সংস্কারের দাবি উঠেছিল, তার প্রতি সাদেক হোসেন খোকার সমর্থন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে খোকা সেই অভিযোগ অস্বীকার করতেন। বিএনপির সবশেষ কমিটিতে খোকাকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। ২০১৪ সালের ১৪ মে সাদেক হোসেন খোকা চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। এর পর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময়কালে দেশে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা হয়। এর কয়েকটিতে তাকে সাজাও দেয়া হয়েছে। আজ বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা ৫০ মিনিটে নিউইয়র্কে মারা গেছেন খোকা। বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাদেক হোসেন খোকা দীর্ঘদিন ধরে কিডনির ক্যান্সারে ভুগছিলেন। শায়রুল কবির খান বলেন, সাদেক হোসেন খোকা নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে স্লোসেন ক্যাটারিং ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাদেক হোসেন খোকার লাশ দেশে আনা হবে কিনা, এটি জানতে চাইলে শায়রুল কবির বলেন, এ ব্যাপারে দলীয় নেতৃবৃন্দ আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo