• অপরাধ ও দুর্নীতি

সম্রাটের শীষ্য ক্যাসিনো সাঈদও কি গ্রেফতার হচ্ছেন?

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ০৬ অক্টোবর, ২০১৯ ১৬:৪০:৩৪

সিএনআই ডেস্ক: চলমান মাদক ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে সবশেষ গ্রেফতার হয়েছেন আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার অন্যতম সহযোগী এনামুল হক আরমান। রোববার ভোরে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অভিযানে বেশ কয়েকজন দাগি অপরাধী ধরা পড়লেও ক্যাসিনো সম্রাটের অন্যতম সহযোগী মমিনুল হক সাঈদ এখনও অধরা। রাজধানীতে মাদক ও ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর গা ঢাকা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের এ কাউন্সিলর। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের (ক্যাসিনো সম্রাট) শিষ্য তিনি। ঢাকায় সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা দেখভাল করেন তিনি। এ কারণে মতিঝিল ও পল্টন এলাকায় ক্লাবগুলোতে যাতায়াতকারীদের কাছে তিনি ক্যাসিনো সাঈদ নামে পরিচিত। স্থানীয়রা জানান, মমিনুল হক সাঈদকে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর বানানোর পেছনে রয়েছেন যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ওরফে ক্যাসিনো সম্রাট। সম্রাটকে ম্যানেজ করেই তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী হন। অন্য দলের যারা প্রার্থী ছিলেন তাদের বেশিরভাগকেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করেন। নিজ দলের যারা প্রার্থী ছিলেন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হয় টাকার বিনিময়ে। কাউন্সিলর হওয়ার পর সাঈদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ভবন দখল করে গড়ে তোলেন টর্চার সেল। তার হুকুম কেউ তামিল না করলেই টর্চার সেলে এনে নিপীড়ন করা হয়। কাউন্সিলর হয়ে সম্রাটের এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু করেন সাঈদ। সম্রাটের ঢাকার ক্যাসিনোগুলো দেখভালের দায়িত্ব ছিল তার। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া ও ফকিরেরপুল ইয়াংমেনস ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনোর ছড়াছড়ি। এর মধ্যে ইয়াংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্রাটের শিষ্য খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বাকি পাঁচটি ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন সম্রাটের লোকজন। সম্রাটের ক্যাসিনোর দেখাশোনা করতেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক ওরফে সাঈদ। তারা এক বছর আগে পল্টনের প্রীতম–জামান টাওয়ারে ক্যাসিনো চালু করেছিলেন। অভিযান শুরু হওয়ার পর মমিনুল সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। গত ২৩ জুন বিনা অনুমতিতে মমিনুল হকের বিদেশ ভ্রমণ আটকাতে পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে চিঠি দেয় ডিএসসিসি। অথচ কিছু দিন আগেও তিনি আবার বিনা অনুমতিতে সিঙ্গাপুরে গেছেন বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার। ক্যাসিনো সাঈদের সেকেন্ড-ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করতে থাকেন জামাল। জামালের মাধ্যমেই আরামবাগ ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো-জুয়ার আসর বসাতেন সাঈদ। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ ভবনে টেন্ডারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে জামালের পাশাপাশি কামরুল হাসান রিপন ছিল সাঈদের অংশীদার। সাঈদের বিরুদ্ধে ক্যাসিনোবাণিজ্যের পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগও আছে। প্রভাব খাটিয়ে বনে গেছেন বিভিন্ন ক্লাবের নেতা। ক্যাসিনোকাণ্ডে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা জিকে শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম, মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, গেণ্ডারিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু, রুপম ভুঁইয়া এবং অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম প্রধান। গ্রেফতার অভিযানে প্রায় সবার কাছে থেকে মোটা অংকের নগদ টাকা, অবৈধ অস্ত্র, স্বর্ণ, মাদক জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সম্রাটের কাছ থেকে কী পাওয়া গেছে তা এখনও জানা যায়নি। এ পর্যন্ত ৮ ক্যাসিনো হোতা আটক হলেও অধরা রয়ে গেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার ও কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ। এরা দুজন সম্রাটের ক্যাসিনো ব্যবসার দেখভাল করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সাঈদ অভিযান শুরুর পর থেকে সিঙ্গাপুরে পলাতক। আর আবু কাওসার কিছু দিন দেশের বাইরে থেকে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। মাদক-সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর ১৮ অক্টোবর থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৪০টির মতো অভিযান পরিচালিত হয়েছে। -যুগান্তর

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo