• বিশেষ প্রতিবেদন

নীরব ভূমিকায় থাকবে বাংলাদেশ?

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৬ আগস্ট, ২০১৯ ২১:২৯:২০

ফের অশান্তি কাশ্মীরে। ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেয়ার প্রস্তাব ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাস হয়েছে ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার পর নিম্নকক্ষ লোকসভাতেও। এর আগে ওই প্রস্তাব ঘিরে সংঘাতের রূপ নেয় কাশ্মীর। প্রস্তাব পাস হওয়ায় স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে সেখানে। ইতোমধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে ভারত সরকার কাশ্মীরে রেকর্ডসংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে। ভারতের এমন নীতির বিরোধিতা করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন কাশ্মীরের অধিবাসীরা। ভারতনীতির বিরোধিতা করছেন পাকিস্তানসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের নেতৃবৃন্দও। কাশ্মীর পরিস্থিতির খবর রাখছেন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে- কী হতে যাচ্ছে কাশ্মীরে? কাশ্মীরে একধরনের স্বায়ত্তশাসন ছিল। সেটি আর থাকল না। ফলে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির আবেদনও শেষ হয়ে গেল। তাদের সামনে বিকল্প থাকছে ভারতকে মোকাবিলা করেই কাশ্মীরের মর্যাদা রক্ষা করা। গুণগতভাবেই সেখানকার রাজনীতি পাল্টে গেল। সশস্ত্র অবস্থা আরও জোরদার হবে। যেহেতু ভারতীয় সৈন্যসংখ্যা বিপুল, সেহেতু প্রাথমিকভাবে ভারতীয় সৈন্যরা ব্যাপক দমন-পীড়ন চালাবে। দমনে শান্তি আসবে? দমন-পীড়নে শান্তি এলে বিশ্বে এত অশান্তি থাকত না। দখলদারিত্বে অশান্তির পথই প্রশস্ত হয় মাত্র। কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে এবং হবে। কাশ্মীরে অশান্তি আগে থেকেই। ভারত দখলে শান্তি দিতে পারে কি-না? আমি তা মনে করি না। কারণ ভারত সেই স্থিতিশীলতার জন্য প্রস্তুত নয়। আমি বর্তমান পরিস্থিতিকে শেষ মনে করছি না। অনেক কিছুই দেখার বাকি আছে। অন্তত অশান্তি প্রশ্নে। ভারত সহজেই শান্তির পথ দেখাতে পারবে বলে মনে হয় না। ভারত কাশ্মীরে শান্তি আনতে পারবে না। আবার আজাদ, জম্মু, কাশ্মীরকেও এক করে ফেলার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছি না। বিষয়টি নির্ভর করবে আঞ্চলিক সামগ্রিক রাজনীতির ওপর। দক্ষিণ এশিয়ায় কী প্রভাব ফেলবে কাশ্মীর পরিস্থিতি? কাশ্মীর ও আসামের ঘটনা পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই প্রভাব ফেলবে। নতুন অনেক ঘটনার জন্ম দেবে, যা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে মধ্যপন্থার সুযোগ ক্রমশই সংকোচিত হচ্ছে। এ অঞ্চলজুড়ে ডানপন্থার উত্থান আরও বাড়বে। বিজেপি’র অবস্থান নিয়ে ভারতের মানুষের মধ্যেও দ্বিধা আছে… অবশ্যই, বিজেপি’র নীতি ভারতের অনেক মানুষই সমর্থন করছেন না। কিন্তু সেই মানুষদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। মোদি যে ধরনের রাজনীতি করছেন, তার প্রভাব ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর ওপরও পড়বে। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ঘটনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। মুসলিম বিশ্বের কিছু করণীয় আছে কি-না? আমি মুসলিম বিশ্বের অবস্থান-কে আসলে কোনো গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি না। ফিলিস্তিনে কী হচ্ছে, তা সবারই জানা। মুসলিম বিশ্ব কিছুই করতে পারেনি সেখানে। একইভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও কিছু করতে পারেনি মুসলিম দেশগুলো। কাশ্মীর নিয়েও কোনো ঐক্য দেখাতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। তাদের কথার কোনো মূল্য আছে বলে আমি মনে করি না। তাহলে কাশ্মীরে শান্তির প্রশ্নে কোন শক্তিকে গুরুত্ব দেবেন? আমি আপাতত বাইরের কোনো শক্তিকে এখানে গুরুত্ব দিতে চাই না। সংকট ও সমাধান নির্ভর করবে দুটি বিষয়ের ওপরে। প্রথমত, কাশ্মীরের অধিবাসীরা ভারতের দখলদারিত্ব কীভাবে মোকাবিলা করবে। দ্বিতীয়ত, ভারতের মধ্যকার মানুষ এটিকে কীভাবে দেখছে এবং আঞ্চলিক রাজনীতির প্রভাবটা কী হবে আসলে? এ সূচকগুলোর ওপরে আপনাকে তাকিয়ে থাকতে হবে। বাংলাদেশ সরকার কী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে বলে মনে করছেন? কাশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়ে এ মুহূর্তে বাংলাদেশ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলে মনে করি না। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিশ্বপরিসরে এমনিতেই ঝামেলায় আছে। কাশ্মীর নিয়ে বাংলাদেশকে নীরব ভূমিকাতেই দেখব, এমন বিশ্বাস রাখি। গণহত্যার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এ আশঙ্কা কতটুকু গুরুত্ব পাচ্ছে? কাশ্মীরে আসলে গণহত্যা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। বছর ধরে যদি পরিসংখ্যান করেন দেখবেন, প্রচুর মানুষকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে। হত্যার মাত্রা আরও বাড়বে। যদিও কাশ্মীরের বর্তমান খবর অনেকটাই পাওয়া যাচ্ছে না।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo