• সমগ্র বাংলা

অপরাধ জেনেও আইন ভেঙে অনলাইনে বন্য প্রাণী বিক্রি

  • সমগ্র বাংলা
  • ১৪ জুলাই, ২০১৯ ১২:১৩:৪৪

নিষিদ্ধ হলেও অনলাইন বিক্রয় কেন্দ্র, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় বন্য প্রাণী। হাতবদল হওয়া এসব প্রাণীর মধ্যে বেশিরভাগই পাখি। রয়েছে কাঠবিড়ালি, কচ্ছপসহ অন্য প্রাণীও। আর অনুমোদন ছাড়া বিক্রি ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ এসব প্রাণী বিক্রির কৌশল হিসেবে তারা এগুলো বিদেশি বলে ঘোষণা দেয়। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২-এর ১১ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স অথবা অনুমোদন ছাড়া কারও কাছে বন্য প্রাণী, বন্য প্রাণীর কোনো অংশ, মাংস, ট্রফি অথবা বন্য প্রাণী থেকে উৎপন্ন দ্রব্য বা বনজ দ্রব্য পাওয়া গেলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। ধারায় দোষী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। একই ব্যক্তি একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত করাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। আইন এবং আইন প্রয়োগের মধ্যে চলছে দেশীয় বন্য প্রাণী কেনাবেচা। রাজধানীসহ সারা দেশেই বিক্রি হচ্ছে টিয়া, ময়না, শালিক, কাঠবিড়ালিসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী। হাটে-বাজারে বন্য প্রাণী বিক্রির ওপর কর্তৃপক্ষের কড়া দৃষ্টি থাকায় বিক্রেতারা বেছে নিয়েছেন ডিজিটাল দুনিয়া। দেশের সবচেয়ে বড় ‘অনলাইন মার্কেট প্লেস’ হিসেবে পরিচিত ‘বিক্রয় ডট কম’- এ বিক্রি হচ্ছে দেশীয় প্রাণী। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম এক জোড়া টিয়া পাখি বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। দাম চাইছেন সাড়ে তিন হাজার টাকা। ক্রেতা পরিচয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, তিন মাস আগে তিনি পাখি দুটি কিনেছেন, এখন বিক্রি করে দেবেন। আর কিনতে হলে যেতে হবে নারায়ণগঞ্জেই। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার রায়েরবাগের বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বিজ্ঞাপন দিয়েছেন দুটি বাজিগর পাখি এবং একটি শালিক পাখি বিক্রির জন্য। শালিক বিক্রি নিষিদ্ধ। ক্রেতা পরিচয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, শালিকটি তিনি ৫০০ টাকায় বিক্রি করবেন। গাছ থেকে পাখি ধরে কিছুদিন লালন করে তা অনলাইনে বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আরেক পাখি বিক্রেতা মুন্না। যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, টিয়া কিনতে হলে যেতে হবে নারায়ণগঞ্জে। ঢাকায় পাঠাতে তিনি আগ্রহী নন। কেবল বিক্রয় ডটকম নয়। দেশীয় পাখি বিক্রির হিড়িক চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও। পাখি বিক্রি ও লালন-পালনের বিক্রি গ্রুপ খুলে অবাধে বিক্রি চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের চতুরতা এবং অনলাইন মার্কেট প্লেসগুলো তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অদক্ষতাই বন্য প্রাণী বিক্রির হিড়িক বন্ধের মূল প্রতিবন্ধকতা। তবে সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করছে বন অধিদপ্তর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। সংস্থাটির পরিদর্শক আব্দুল্লাহ সাদিক বলেন, বিক্রয় ডট কমে দেশীয় পাখি ও প্রাণী বিক্রির বিষয়টা তারা জানেন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এ বিষয়ে তাদের কথা হয়েছে। ‘আমরা কিছুদিন আগেই তাদের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা এ ধরনের সব বিজ্ঞাপন সরিয়েও ফেলেছিল। কিন্তু কয়েক দিন ধরে আবার এমন বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে। আমরা তাদের সঙ্গে আবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।’ এই কর্মকর্তারা জানান, বিক্রেতারা বিজ্ঞাপনে লিখেন- ‘রিং নেক টিয়া’, ‘ইন্ডিয়ান টিয়া’। কিন্তু সবুজ রঙের টিয়া পাখিগুলো দেশি পাখি। বিক্রয় ডটকমের লোকেরা এটা বুঝতে পারে না।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo