• অপরাধ ও দুর্নীতি

সুন্দরী অভিনেত্রী মডেলদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করাই ছিলো মাসুদের পেশা!

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ৩০ মে, ২০১৯ ১৭:৩০:১৬

সামির আল মাসুদ (২৩) উচ্চ মাধ্যমিকের পর আর পড়েননি। তবে তথ্যপ্রযুক্তিতে আগ্রহী হয়ে এক সময় জড়িয়ে পড়েন হ্যাকিং গ্রুপে। শুরু করেন ফেসবুক আইডি হ্যাক করা। জনপ্রিয় মডেল, অভিনেত্রী ও উঠতি তারকাদের ফেসবুক আইডি টার্গেট করে দখলে নিতেন অনায়াসে। তারকাদের ফেসবুক আইডি দখলে নিয়ে তাঁদের বার্তা বক্সে হুমকি দিতেন আপত্তিকর ছবি ও তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার। দাবি করতেন মোটা অঙ্কের টাকা। কখনো টাকায় সমাধান করতেন, কখনো আবার টাকা হাতিয়ে নিয়েও ফিরত দিতেন না আইডি। তারকাদের কাছ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে আয় করা এসব টাকা তিনি ব্যয় করতেন নেশা করে। সর্বশেষ সামির আল মাসুদের আক্রমণের শিকার হন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৮-এর প্রথম রানারআপ নিশাত নাওয়ার সালওয়া। নিশাতের আইডি নিজের দখলে নেওয়ার পর টাকা দাবি করেন সামির। ১০ হাজার টাকা দেওয়ার পরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি তাঁর ফেসবুক আইডি। পরে তিনি বাধ্য হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনার ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের শরণাপন্ন হন নিশাত নাওয়ার সালওয়া। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করেন। ঘটনার তদন্তে নেমে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ বুধবার বিকেলে সামির আল মাসুদকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর সামির আল মাসুদ চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছেন বলে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ জানিয়েছেন। ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘নিশাত নাওয়ার সালওয়ার কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিয়েছিলেন সামির। সেই সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেপ্তার করি আমরা। গ্রেপ্তারের পর তিনি জানিয়েছেন, জনপ্রিয় ও উঠতি নারী মডেলদের টার্গেট করতেন। এরপর টার্গেট পিপলদের ফেসবুক বন্ধু হয়ে তাদের আইডি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতেন। পরে টাকা চেয়ে হুমকি দিতেন। এদের ভেতরে যদি কারো আইডিতে ন্যুড ছবি পাওয়া যেত তাঁর কাছ থেকে বেশি টাকা দাবি করতেন। না দিতে চাইলে হুমকি দেওয়া হতো।’ সিনিয়র সহকারী কমিশনার বলেন, ‘শুধু নিশাত নয়, সময়ের জনপ্রিয় ২০ জনেরও বেশি অভিনেত্রী ও মডেলের ফেসবুক আইডি নিয়ন্ত্রণে নেন সামির আল মাসুদ। এদের ভেতরে তরুণ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পূজা চেরী, টিভি অভিনেত্রী শারলিনা হোসেন, শাহতাজ মুনিরা হাশেম, উপস্থাপিকা ও মডেল মারিয়া নূর এবং এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকারের ফেসবুক আইডিও নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল হ্যাকার সামির আল মাসুদ।’ ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘যেসব তারকার আইডি হ্যাক করত টাকার বিনিময়ে তাঁদের অধিকাংশের আইডি ফিরত দিয়েছে বলে জানিয়েছে সামির আল মাসুদ। তবে, টাকা দিলেও অনেক মডেল-অভিনেত্রীকে তাঁদের ফেসবুক আইডি ফেরত দেয়নি সামির। সামির আল মাসুদ অ্যানোনিমাস নামের একটি হ্যাকিং গ্রুপের সদস্য। এ ছাড়া ডনস টিম ও সাইবার শটসহ আরো কয়েকটি হ্যাকিং গ্রুপ আছে বাংলাদেশে। এসব গ্রুপে আমাদের সাইবার ক্রাইমের অনেক সদস্য যুক্ত আছেন কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে। আমরা নজর রাখছি তাদের গতিবিধির ওপর। গ্রুপের সদস্যরা অপরাধে জড়িয়ে পড়লে আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘এখানে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। সাইবার দুনিয়ায় ব্যবহারকারী কোন ধরনের ছবি বা ভিডিও রাখবে সেটা তাকে ঠিক করতে হবে। অযাচিত ঝামেলা এড়াতে খুব সাবধানে ব্যবহার করা উচিত ফেসবুক। অপরিচিতদের ফেসবুকে নেওয়াটা ঠিক নয়। কারণ আমাদের আশপাশেই অপরাধীর অভাব নেই। এ ছাড়া এনআইডির নামে ফেসবুক ইউজার নেম থাকলে খুব বেশি ঝামেলায় পড়তে হয় না ব্যবহারকারীকে।’ সাইবার ক্রাইম বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, সামির আল মাসুদ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়লেও নিজেকে পরিচয় দেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে। অতিরিক্ত সময় ফেসবুক ব্যবহার করার ফলে এক সময় হ্যাকিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন সামির। শুরুর দিকে বেছে বেছে তরুণ নারী মডেল অভিনেত্রীদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। বন্ধুত্বের আবেদনে সাড়া দেওয়ার পর টু ফ্যাক্টর অথরিটি ও ট্রাস্টেড কন্টাক্টারের মাধ্যমে মডেল-অভিনেত্রীদের ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নিতেন সামির আল মাসুদ। সূত্র আরো জানায়, এরপর শুরু হতো হ্যাকার সামিরের দ্বিতীয় ধাপের কাজ। এই ধাপে, পিক্সআর্ট নামে সফটওয়্যারের মাধ্যমে মডেল-অভিনেত্রীদের আইডির নামে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করা হতো। খোলা হতো জিমেইল অ্যাকাউন্টও। নকল এনআইডি তৈরি করার পর সাবমিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট গেট অপশনে গিয়ে তারকাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিজের দখলে নিয়ে নিত। এরপর ঢুকে পড়তেন তারকাদের ফেসবুক ইনবক্সে। ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর তথ্য ও ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। ফেসবুক আইডির ফ্যান, ফলোয়ার সংখ্যা ও তারকার জনপ্রিয়তা বুঝে চাওয়া হতো অর্থ। সাইবার ক্রাইম বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি কলাবাগান থানার আরেকটি মামলায় প্রথমে সাইবার মনিটরিং টিমের হাতে গ্রেপ্তার হন হ্যাকার সামির। প্রায় দেড় মাস কারাগারে থাকার পর গত ২৫ মার্চ জামিনে বের হয়ে আবারও নারী মডেল ও অভিনেত্রীদের টার্গেট করা শুরু করেন সামির। সূত্র: এনটিভি অনলাইন

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo