• মুক্তমত

বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গেস্টরুম সংস্কৃতি বন্ধের আহ্বান!

  • মুক্তমত
  • ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ ১৬:৩৯:০০

রাত ৯টা বাজতেই হলের গণরুমগুলোতে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। সবাই আয়রন করা কাপড় পরে সুন্দরভাবে সেজেগুজে বাধ্য ছেলের মতো খোলা মাঠে কিংবা হল প্রাঙ্গণে দাঁড়ায়। ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে শুরু হয় গেস্টরুমের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। ততক্ষণে ১ম, ২য়, ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা এবং হলের বটনেতারা এসে হাজির গেস্টরুমে। ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১ম বর্ষের নবাগত শিক্ষার্থীদের ওপর চালিত হয় মানসিক নির্যাতনের স্টিমরোলার। প্রথমেই দাঁড় করানো হয় সারিবদ্ধভাবে। ৯টা ৪৫ মিনিটের পর যারা গেস্টরুমে এসেছে, তাদের সামনে নিয়ে আসা হয়। সময়মতো না আসার কারণ জানতে চাওয়া হয়। তারপর শুরু হয় সবার সামনে অকথ্য ভাষায় গালাগাল। ১০টা বাজতেই ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ১৫/২০ জন করে কয়েকটি দলে ভাগ করা হয়। তাদের ঢোকানো হয় গেস্টরুম তথা কনসেনট্রেশন সেলে। এর জন্য রয়েছে নানা আজগুবি নীতি। এর অন্যতম হল, ১. হাসা যাবে না। (অথচ সিনিয়ররা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করবে, হাস্যকর কথা বলবে হাসানোর জন্য)। ২. যে কোনো প্রশ্নের উত্তরে ‘জি ভাই’ এবং ‘না ভাই’ ছাড়া আর কিছু বলা যাবে না (বস্তুত, সহমত ভাইয়ের প্রশিক্ষণ এখানেই দেয়া হয়ে থাকে)। ৩. টি-শার্ট, চটি জুতা ও পাঞ্জাবির সঙ্গে প্যান্ট কিংবা পাজামার সঙ্গে শার্ট পরা যাবে না। আরও কতগুলো আজগুবি নিয়ম-কানুন রয়েছে। এখানে সিনিয়র ভাইদের কথাই আইন। কী বলেছেন তা বিবেচনা না করে ‘জি ভাই’ কিংবা ‘না ভাই’ বলা বাধ্যতামূলক। প্রতিটি দল যখন গেস্টরুমের সামনে আসে সারিবদ্ধভাবে, তখন সামনের সদস্য গেস্টরুমে বিদ্যমান ভাইদের উদ্দেশে সালাম দেয়। অতঃপর হাত মিলিয়ে নিজের নাম, ডিপার্টমেন্ট, জেলা ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে সামনে থেকে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে উচ্চতা ঠিক থাকা চাই। খাটোরা থাকে সামনের সারিতে এবং লম্বারা পেছনে। তারপর শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। একজন একজন করে সামনে আনা হয়। জানতে চাওয়া হয়- কেন সে অমুক ভাইকে অমুক স্থানে সালাম দেয়নি। অথবা সালাম দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু হাত মেলায়নি। চুপ করে থাকে সালাম না দেয়ার অপরাধে মহাঅপরাধী এই ছেলে। সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে শুরু হয় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। অনেক হলের গেস্টরুমে শারীরিক নির্যাতনও করা হয়। গেস্টরুমে আরও জানতে চাওয়া হয়- গত পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে কেন উপস্থিত ছিলে না। জিজ্ঞেস করা হয়, ক্লাস বড় নাকি প্রোগ্রাম বড়? এছাড়া গেস্টরুমে আগামী কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। উপস্থিত না থাকলে কঠোর শাস্তির হুশিয়ারি প্রদান করা হয়। রাত ১টা পর্যন্ত চলে এই নিপীড়ন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থী হয়ে পড়ে মেরুদণ্ডহীন। তারা তাদের অধিকার আদায় করতে জানে না। সেই সুবাদে হল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দুর্নীতি আর অপকর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণ করে। গণমাধ্যমগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত এসব নির্যাতনের কোনো খোঁজখবর রাখে না। অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জঘন্য গেস্টরুম প্রথা বন্ধ করা হোক। নিশ্চিত করা হোক শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা। মাহবুবুর রহমান সাজিদ : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo