• সমগ্র বাংলা

বিজ্ঞাপন চিত্র নয়, এই কমিশনার ‘চা’ বিক্রি করেই সংসার চালান

  • সমগ্র বাংলা
  • ২৮ জানুয়ারী, ২০১৯ ১৭:০০:০৮

‘এক কাপ চা যদি বানায়া খাওয়ায়তে না পারি, কমিশনার হওয়ার পর কি করমু?’ একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে প্রখ্যাত অভিনেতা মোশাররফ করিমের কণ্ঠে এই সংলাপ মোটামুটি সবারই শোনা। কমিশনারের হাত থেকে কাপ নিতে ইতস্তত বোধ করছেন তার কর্মী। অথচ বাস্তব দুনিয়ায় সেই বিজ্ঞাপন চিত্রকেও হার মানিয়েছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক (৪২)। বিপুল ভোটের ব্যবধানে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েও আব্দুর রাজ্জাক (৪২) ফুটপাতের দোকানে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ১০ বছর ধরে তিনি ফুটপাতের একটি দোকানে চা বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার! আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি বাইমহাটি গ্রামে। তার পিতার নাম মো. নাজিম উদ্দিন। রবিবারও উপজেলা সদরের জামে মসজিদ ও বাইমহাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ফুটপাতের মুদি দোকানে আব্দুর রাজ্জাককে চা বিক্রি করতে দেখা গেছে। জানা গেছে, তিনি একজন সৎ, নিষ্টাবান ও জনদরদী হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত। এলাকাবাসীর অনুরোধে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মির্জাপুর পৌরসভার নির্বাচনে ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন আব্দুর রাজ্জাক। বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পৌরসভার পক্ষ থেকে তার ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য যে অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয় তার পুরোটাই এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে যে পরিমান সামান্য ভাতার টাকা পান সেটাকাও তিনি জনগনের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করে থাকেন। মুদি দোকানে চা বিক্রি করে যা আয় রোজগার করেন, তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান। ঘুণে খাওয়া সমাজে সততার বিরল দৃষ্টান্ত কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। সমাজের জন্য যদি কিছু করে যাওয়া যায় তাই চিরস্থায়ী এবং সাধারণ মানুষ এটাই মনে রাখবে। আমার সমাজ ও অন্যকে দেওয়ার মতো অনেক সাধ আছে, কিন্ত অর্থকড়ি না থাকায় দেবার সাধ্য কম। মানুষ আমাকে যে সম্মান ও ভালবাসে এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আমি মানুষের সেবা করে যেতে চাই, এটাই আমার চাওয়া ও পাওয়া। আব্দুর রাজ্জাকের পিতা মো. নাজিম উদ্দিন একজন দিনমজুর। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক বড়। বাবা দিনমজুর হলেও সততার সঙ্গে অন্যের বাসা বাড়ি ও ইট ভাটায় কাজ করে সংসার চালাতেন। এক সময় উত্তরাঞ্চল থেকে ইটভাটা শ্রমিক এনে বিভিন্ন ইটভাটায় সাপ্লাই দিতেন। কোনো দিন খেয়ে আবার কোনো না খেয়ে চলতো তাদের সংসার। দরিদ্রের সংসার হলেও শিক্ষার প্রতি আব্দুর রাজ্জাকের স্বপ্ন ছিল অনেক বড় হওয়ার। ১৯৯৬ সালে মির্জাপুর এস কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। অর্থের অভাবে এইচএসসি পাশ করা সম্ভব হয়নি। পরিবারের হাল ধরতে তাকে দিন মজুরী করতে হয়। পাশাপাশি সন্ধ্যায় মুদির দোকানে চা বিক্রি। বাবা মায়ের অনুরোধে ২০০৩ সালে বিয়ে করেন। বিয়ের পর এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা হন। বড় মেয়ে দৃষ্টি মনি আক্তার (১২) ৭ম শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে আব্দুর রহমান (৬) নার্সারিতে পড়াশোনা করছেন। মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র ও সাবেক ভিপি মো. শাহাদাত হোসেন সুমন বলেন, কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক একজন সৎ, দায়িত্বশীল, ন্যায়পরায়ন, ভাল ও উদার মনের মানুষ। তার মতো ভাল ও সৎ মানুষ সমাজে নেই বললেই চলে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo