নারী পুরুষের গড় আয়ু নিয়ে একটি গবেষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। দু’বছর আগে করা ওই গবেষণায় দেখা গেছে, দুনিয়াব্যাপী পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশী বাঁচে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের গড় আয়ু ৭৪ বছর দুমাস। আর পুরুষদের গড় আয়ু ৬৯ বছর আট মাস।আর নারী পুরুষের গড় আয়ু ৭২বছর। ২০১৬ সালে করা ডব্লিউএইচওর করা ওই গবেষণার পর পুরুষদের তুলনায় নারীদের আয়ুষ্কাল বেশ কেন তা নির্ণয়ের কারণ অনুসন্ধানে মন দেন বিজ্ঞানীরা। এর কয়েকটি কারণ নির্ণয়ও করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে এসেছে। ভ্রূণ পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশীদিন বাঁচেন ভ্রুণের কারণে। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ডেভিড জেমস জানান, নারী ভ্রূণের চেয়ে পুরুষ ভ্রূণ বেশি হারে মারা যায়। XX হল নারী ক্রোমোজোম এবং XY হল পুরুষ ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমগুলো আমাদের জিন ধারণ করে থাকে। এক্স ক্রোমোজোমগুলোতে প্রচুর জিন রয়েছে যা আপনাকে জীবিত থাকতে সহায়তা করে। যদি আপনার এক্স ক্রোমোজোমে জেনেটিক ত্রুটি থাকে তাহলে একজন নারীর বিকল্প হিসেবে আরেকটা এক্স ক্রোমোজোম থাকে। কিন্তু পুরুষের এক্স ক্রোমোজোম একটাই থাকায় তাদের ব্যাকআপের কোন সুযোগ নেই। গবেষক জানান, ভিন্নতা শুধু পাখিদের ক্ষেত্রে। পাখির পুরুষের এক্স ক্রোমোজোমের দুটি কপি থাকে। এ কারণে তারা মেয়ে পাখিদের চেয়ে বেশি সময় বাঁচে। হরমোন পুরুষদের আয়ুষ্কাল তুলনামূলক কম হওয়ার জন্য টেস্টোস্টেরন হরমোনও দায়ী। গবেষকরা বলছেন, এটি এমন এক ধরণের হরমোন যেটি মূলত পুরুষের বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করে। যেমন- দীর্ঘ দেহ, শক্তিশালী পেশী, ভারী কণ্ঠ এবং লোমশ শরীর ইত্যাদি। সাধারণত বয়: সন্ধিকালে ছেলেদের শরীরে এই টেস্টোস্টেরন হরমোন নি:সরণ হয়। তাই এ সময়টায় পুরুষদের মৃত্যুর হার বেশী থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের এই হরমোন বেশি থাকার কারণে তারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে উৎসাহী হয়, যেমন লড়াই করা, খুব দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল বা গাড়ি ড্রাইভিং এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও পুরুষের মধ্যে বেশি থাকে। এই হরমোনের কারণেই যেকোনো দুর্ঘটনায় পুরুষদের মৃত্যু হার বেশী। যুদ্ধেও পুরুষদের মৃত্যু বেশী হয় এই হরমোনে। পুরুষাঙ্গ কোরিয়ান বিজ্ঞানী হান-নাম পার্ক ১৯ শতকের চৌসুন রাজবংশের আমলের কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে তিনি ৮১ জন নপুংসক ব্যক্তির ওপর বিস্তারিত গবেষণা করেন। জানতে পারেন যে, তাদের প্রত্যেকের যৌনাঙ্গ বয়:সন্ধির আগেই অপসারণ করা হয়েছিল। ওইসব নপুংসকরা ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। যেখানে ওই দেশেল অন্য পুরুষদের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৫০ বছর। এ থেকে ধারণা করা হয়, পরুষাঙ্গবিহীন পুরুষ সেটা মানুষ হোক বা কোন পশুপাখি, তারা বেশি সময় বাঁচে। জিন জেনেটিক গঠনের কারণে পুরুষরা নারীদের তুলনায় কম বাঁচে। জাপান, রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের লোকজনের জেনেটিক বিশ্লেষণ শেষে গবেষকরা এ তথ্য জেনেছেন। অভ্যাস ও আচরণ মানুষের আবাস, আচরণ ও অভ্যাসও আয়ুষ্কালের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। পৃথিবীর যেসব এলাকা সংঘাতপূর্ণ, সেসব এলাকায় থাকা পুরুষদের আয়ুষ্কাল কম হয়ে থাকে।ধূমপান, মদ্যপান ও অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ওপরও নির্ভর করে আয়ুষ্কাল। যেমন- রাশিয়ার পুরুষরা ওই দেশের নারীদের চেয়ে ১৩ বছর আগে মারা যায়। এর কারণ রাশিয়ার পুরুষরা প্রচুর অ্যালকোহল গ্রহণ করে। আয়ুষ্কাল বেশী হলেও রোগে-শোকে ভোগেন নারীরা নারীদের আয়ুষ্কাল বেশী হলেও তাদের সুস্থতা স্থায়ী হয় না। জীবনের এক পর্যায়ে তারা নানা ধরণের অসুখ বিসুখে জর্জরিত হয়ে থাকে। বেশীরভাগ দেশে ১৬ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীরা, একই বয়সের পুরুষদের তুলনায় বেশী চিকিৎসক দেখিয়ে থাকেন। ব্যবধান কমে আসছে ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে ২০৩০ সাল নাগাদ নারী ও পুরুষের মধ্যে আয়ুষ্কালের ফারাক শুধু এক বছর নয় মাস থাকবে। কাজ বিজনেস স্কুলের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক লেস মেহিউয়ের নেতৃত্বে আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুরুষ ও নারীর জীবনকাল ২০২৩ সাল নাগাদ সমান সমান হবে। এর মানে হচ্ছে ভবিষ্যতে নারী ও পুরুষের মধ্যে আয়ুষ্কালের এই ব্যবধান আর থাকবে না।
মন্তব্য ( ০)