• স্বাস্থ্য

চাটমোহর হাসপাতাল বর্তমানে চিকিৎসা সেবায় হযবরল অবস্থা, দেখার নেই কেউ!

  • স্বাস্থ্য
  • ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১৫:২২:০০

ছবিঃ সিএনআই

পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আশা সেবা প্রত্যাশীরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না বলে তাদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। হাসপাতালে যেকোন জরুরী রোগী গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কাঙ্খিত সেবা প্রদান না করে পাবনা সদরে অথবা রাজশাহী মেডিকেলে পাঠিয়ে দেন। যেসকল রোগী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাদেরও সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে ডাক্তার নার্সদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। 

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল ১০টা। হাসপাতালে সেবা নিতে ইতিমধ্যে চলে এসেছেন গ্রামের অনেক নারী পুরুষ। হাসপাতালের আউটডোরের সামনে অপেক্ষা করছেন তারা ডাক্তার দেখাবেন বলে। কিন্তু নেই কোন ডাক্তার। অনেক সময় পরে একজন আউটডোরের রুমে গিয়ে বসলেন। সবাই তাকে দিয়ে দেখাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সে ছিলেন একজন সেকমো। তিনি একাই শিশু থেকে শুরু করে সকল রোগী দেখছেন আর পরীক্ষার জন্য তার মনোনীত একটা ডায়াগনষ্টিকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কোন গরীব রোগী যদি টেষ্ট করাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলে তিনি প্রেসক্রিপশনই করছেন না। অনেক রোগী অনুনয় বিনয় করলে সাধারন মানের ঔষধ লিখে দিচ্ছেন। 

এছাড়া হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, জরুরী বিভাগের গেটের সামনেই বেশ কয়েকটি কুকুর দল বেধে বসে আছে। অনেক সেবা প্রত্যাশী কুকুর দেখে ভয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে না। রোগীদের বাথরুমের অবস্থা এতোটাই নোংরা আর দুর্গন্ধ যা একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী। 

খাবারের মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। কিছুদিন পূর্বে চাটমোহরের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা হাসপাতালে গিয়ে খাবার প্রস্ততকরন রুমে প্রবেশ করে রোগীদের জন্য রাখা সুজিতে পোকা দেখতে পায়। এছাড়াও এঘটনার পরে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে একটি শিশুর মাথায় পরিচ্ছন্ন কর্মী কতৃক সেলাই করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। 

ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি সেন্টার ও উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রেগুলো কতৃপক্ষের সঠিক তদারকির অভাবে ভঙ্গুর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায়  চাটমোহর হাসপাতাল বর্তমানে চিকিৎসা সেবায় হযবরল অবস্থা। এ যেন দেখার কেউ নেই। 

হাসপাতাল নিয়ে আশিক হোসাইন নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে অভিযোগ করে লিখেছেন, সকাল ৯টায় আমার বোনের মেয়েকে ঠান্ডা জনিত রোগে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়েছি। সকাল ৯টার পর থেকে এখন রাত ১২টা বাজে কোন ডাক্তার কিংবা নার্স এসে একটি বারও এই রোগীর কোন খোঁজ খবর নেয়নি। এমন হাসপাতাল চাটমোহরে থেকে লাভ কি?

সুমনা আফরীন নামের একজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, কিছুদিন আগে আমার আম্মু হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তার অক্সিজেন নেওয়া খুব দরকার ছিল। ইমার্জেন্সীতে নিয়ে যাওয়ার পরে দেখি কর্তব্যরত ডাক্তার আর কয়েকজন নার্স গল্পে মশগুল হয়ে আছেন। একটা রোগী গেলে প্রশ্ন করবে কেন এসেছেন কি হয়েছে রোগীর, না তাদের কোন হেলদোলই নেই। তারপর অক্সিজেনের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দিয়ে বলল এটা বাইরে থেকে নিয়ে আসুন তারপর রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হবে। তাহলে বুঝুন তারা একজন রোগীর প্রতি কতটা দায়িত্বশীল।

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বৃদ্ধ জয়নব খাতুন বলেন, আমার অনেক দিন ধরে ডায়বেটিস সাথে হাই প্রেসার। দোকান থেকে ঔষধ কিনে খাওয়ার সাধ্য আমার নেই। তাই সরকারি হাসপাতালে এসেছিলাম কিছু ঔষধ নিবো বলে। কিন্তু তারা শুধু এক পাতা আয়রন আর একপাতা ক্যালসিয়াম দিয়ে আমাকে বিদায় করে দিলো। আমাকে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষাও করালো না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বুলবুল হাসপাতালের বিরুদ্ধে আনিত নানা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চাটমোহর হাসপাতালের সামগ্রীক সব কিছু নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই চলছে। সুপেয় পানি সরবরাহে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ব্যবস্থা করা আছে। তবে এই হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২২টি, সেখানে ডাক্তার আছেন ৮জন। আমাদের হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা কর্ণার আছে। সেখানে বিভিন্ন কর্ণার ভাগ করা আছে। এক একটি কর্ণার চেম্বারে একজন ডাক্তার ও একজন সেকমো থাকবে। কিছুদিন আগে সূজির মধ্যে পোকা এবং পরিচ্ছন্ন কর্মী দ্বারা রোগীর মাথায় সেলাই করানো বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

পাবনা জেলার সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, চাটমোহর হাসপাতালের অনিয়ম নিয়ে ইতিমধ্যে আমাদের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo