রংপুর ব্যুরো: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ২০২৪ সালে ছাত্র জনতার যে অর্জন তা যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে হবে। কোন দলাদলি কিংবা অন্য কোন কারণে যদি এই অর্জন বিনষ্ট হয় তাহলে পলাতক শেখ হাসিনার দোসররা আবার নতুন করে ষড়য়ন্ত্রের সুযোগ পাবে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুরের ঐতিহাসিক পাবলিক লাইব্রেরী শহীদ মিনার মাঠে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন ২০২৪ এর ছাত্র জনতার অদ্ভুত্থানের যে স্পিরিট আজ যে কোন মূল্যে তা ধরে রাখতে হবে।সারজিস বলেন ২০২৪ সালে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি এই স্বাধীনতা হারিয়ে ফেললে আর তা অর্জন সম্ভব হবে না।বিপুল সংখ্যক ছাত্র জনতা এই মত বিনিময় সবাই অংশ নেন। সকাল থেকে খন্ড খন্ড মিছিলে মুখরিত হয় পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ।
আমাদের দেশে সিস্টেমের মাধ্যমে যে ক্যান্সার তৈরী হয়েছে,সেই ক্যান্সার নির্মূল করে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে যেতে হবে। এজন্য আমাদের ধৈর্য ধরে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে হবে এবং আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তবে ছাত্র-জনতাকে বলতে চাই, আমরা কোনো অথরিটি না, আমরা প্রেসার গ্রুপ। সেই প্রেসার গ্রুপ হয়েই কাজ করে যেতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী সারজিস আলম।
সারজিস বলেন, রংপুর বিভাগের বরাদ্দ কম, দেশের প্রথম সারির সিটি করপোরেশন, বিশ্ববিদ্যালয় বছরে যে বাজেট পায়, পুরো রংপুর বিভাগ সেই বাজেট পায়নি। এভাবে ১৬ বছর ধরে রংপুর বিভাগ বাজেট বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। এই রংপুরে এখন একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারি নাই। সেরা কোনো মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করতে পারি নাই। তাই রংপুর বিভাগের উন্নয়নে আমাদের অধিকার আদায়ে আওয়াজ তুলতে হবে। আওয়াজ তোলার এখনই উত্তম সময়। এখন আওয়াজ তুলবেন কিনা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
তিনি আরো বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা একটি যৌক্তিক দাবি।এই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১ হাজার কোটি টাকা দরকার। তারপরও বাস্তবায়ন করা হয়নি তিস্তা মহাপরিকল্পনা। অন্যদিকে এই ফ্যাসিস্ট সরকার পদ্মা সেতু ও পদ্মা রেল সেতু বাস্তবায়নে ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অথচ ১ কোটি মানুষের জন্য তিস্তা মহাপরিকল্পনা করেনি। শুধু তাই নয় রংপুর বিভাগের ৮ টি জেলা রয়েছে, সেই জেলাগুলো ২য় সারির জেলা, রংপুর বিভাগ দ্বিতীয় সারির বরাদ্দ পয়। এই বৈষম্য আর মানি না।
সারজিস আলম বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার অনেক ভাইকে মামলা দিয়ে আদালতের বারান্দায় চক্কর দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে। অনেকের জীবন ধ্বংশ করে দিয়েছে, চাঁদাবাজি করেছে, হামলা করেছে, দখল করেছে। সেই একই কাজ আমরা যদি করি তাহলে ১ হাজার ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা ধুলিসাৎ হবে। আমাদের এইসব থেকে বিরত থাকতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, সবসময় আমার অংশগ্রহণ থাকবে তবে শিক্ষার্থী হিসেবে আমার অগ্রাধিকার হবে পড়ালেখা। কেননা দেশকে একশত বছর এগিয়ে নিতে হলে কোয়ালিটিফুল রিসোর্চ দরকার। বাংলাদেশে ভারতসহ বিশ্বের অসংখ্য দেশের জনশক্তি লক্ষ কোটি ডলার নিয়ে যায় তাদের বেতন হিসেবে। তাই ওই পদগুলোর জন্য আমাদের তৈরী করতে হবে। ২০২৪ সালের স্প্রিট ধরে রাখতে হলে, তরুণ সমাজকে বাঁচাতে হবে। এজন্য মাদকের ছোবল থেকে দূরে থাকতে হবে। আমাদের পড়ালেখায় ফিরতে হবে।
উল্লেখ্য গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার পরে বিভিন্ন প্রশ্নত্তোর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রংপুর বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক আবু সাঈদ মিলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রকিব মাসুদ, জেলার সমন্বয়কারী ইমরান আহমেদসহ রংপুর বিভাগের ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীরা বক্তব্য রাখেন। এর আগে সকাল ১১টায় শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে রংপুরে আন্দোলনে নিহতদের পরিবার ও আহতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা।
মন্তব্য ( ০)