মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, অপরাধী যেই হোক তার বিচার হবেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সকল সদস্য হত্যার সাথে জড়িত, অবশ্যই তাদের বিচার হতে হবে।
তিনি বলেছেন, যারা নিজেকে ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে বড় প্রমাণ করার জন্য এই অপকর্মগুলো করেছে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। অপরাধী মানে অপরাধী, সে পুলিশেরই হোক আর যেই হোক। পুলিশের যদি বিচার করা না হয়, তাহলে রাষ্টের অন্য নাগরিকের বিচার করলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তাই বিচারের বাইরে কেউ থাকবে না। বিষয়গুলো তদন্ত করে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী ও শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় কালে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিসসহ অপর সমন্বয়করা আন্দোলনে শহীদ শিবালয় উপজেলার রফিকের বাবা মো: রহিজ উদ্দিন, সাটুরিয়ার শহীদ আফিকুল ইসলাম শাদের বাবা মো: শফিকুল ইসলাম, আহত মো: আরমান হোসেন, হাসনা হেনা, সিয়াম মোল্লাসহ আগত আহতদের কথা শোনেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
মিডিয়া কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এ কথাগুলা দেবেন, কোনো চাপ এলে আপনারা পাশে থাকবেন এবং আমরা পাশে আছি। এ কাল পিটগুলো যেভাবে দেশে একটা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তারা যদি পরে কোনোভাবে আপনাদের চাপে রাখে, তবে মনে রাখবেন এর শিকার কোনো না কোনো দিন তাদের হতে হবে।
সারজিস আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব সময় আপনাদের পাশে আছে এবং আমরা শতভাগ একমত। এসব কাল পিটদের বিচার হতে হবে। পরে তারা কোনো ভাবে আমার ভাই বোনদের হুমকি তো দূরের কথা, বিন্দুমাত্র কথা বলারও যদি সাহস দেখায়, আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
একটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন, আমাদের শহীদদের পরিবারের যে ভাইয়েরা আছেন, তাদের ব্যবহার করে অনেকে মামলা দিচ্ছে, যেখানে কিছু নির্দোষ মানুষের নাম ঢুকিয়ে দিচ্ছে এবং হয়রানি করছে। কেউ কেউ এসব মামলায় নাম দেওয়া, নাম কাটা নিয়ে ব্যবসা করছে। এ ভাবে যেন কেউ শহীদদের নামের অপব্যবহার না করতে পারে, সাবধান করেন সারজিস।
শহীদদের স্বজন ও আহতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে আমরা সম্মান দিয়েছি, ঠিক একই ভাবে ২০২৪ এর ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের একেক জনও কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা। সেজন্য তাদের স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা প্রতিটি জেলায় যাচ্ছি, আমাদের মেইন উদ্দেশ্য হলো এ আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলা, যারা নিজেদের জীবন দিয়েছেন, তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা। আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমাদের অনেক ভাই ঋণ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের নিয়ে কী করতে পারি, সেজন্য আমাদের আসা।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবদুল্লাহ সালেহীন অয়ন, কাজী ইসমাইল হোসেন রুদ্র, সামিয়া মাসুদ মুমু, মুবাশ্বিরুজ্জামান হাসান মৃধা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মেহরাব হোসেন সিফাত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মো. হৃদয় হোসেন, নিউ ক্যাসল আইন অ্যাকাডেমির আদিনা খান, ঢাকা কলেজের খন্দকার রায়হা, (ঢাবি), এআইইউবির কাজী জুবায়েরসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সকালে মতবিনিময় সভা করেন সারজিসসহ কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা।
দুপুরে আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তারা। বিকেলে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে।
মন্তব্য ( ০)