• স্বাস্থ্য

শিবচরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ ৯১ সাপে কাটা রোগী, আছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম

  • স্বাস্থ্য
  • ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:৪০:০৭

ছবিঃ সিএনআই

মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ দেশজুড়ে গত কয়েক মাস বিরাজ করছে সাপ আতঙ্ক। বিশেষ করে আলোচনায় রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া)। পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদ বেষ্টিত মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার চরাঞ্চল ও নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকায় চলতি বছরের প্রথম থেকেই রাসেলস ভাইপার সাপের প্রকোপ দেখা দেয়। এতে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত তিন মাসে ৯২ জন সাপেকাটা রোগী ভর্তি হন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৯১ জন।

চরাঞ্চলের রোগী অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে সুস্থ হওয়ার পর সাপেকাটা অসংখ্য রোগী এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসছে।তথ্য বলছে, উপজেলায় সাপে কাটা রোগী বেড়েছে। মানুষও আতঙ্কিত। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, সময়মতো হাসপাতালে এলে রোগী বাঁচানো সম্ভব। অধিকাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। তাদের কাছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত আছে। শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাসে ৯২ জন সাপেকাটা রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ১২ জন রোগী বিষধর সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন। অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে ১১ জন রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন। ৯০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এবং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এক রোগীকে হাসপাতালে আনার পরপরই মারা যান।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসের ১ তারিখে পাটজাগ দিতে গিয়ে উপজেলার চরজানাজাত এলাকার কৃষক সুলতান বেপারী (৫০) রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন। পরে দ্রুত তাকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে স্বজনেরা। পরে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে 'বিষধর' সাপের কামড় বলে নিশ্চিত হন। পরে তাৎক্ষণিক মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকেরা। অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পর রোগী সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি। সর্প দংশনের শিকার সুলতান বেপারী সুস্থ হয়ে উঠলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে।

এরপর থেকে শিবচর ও আশেপাশের এলাকার সাপের কামড়ে আহত রোগীরা আসতে শুরু করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।এরপর গত ৭ জুলাই পদ্মা বেষ্টিত চরজানাজাত থেকে মমিন শেখ নামের এক ব্যক্তি বিষধর সাপের ছোবলে আক্রান্ত হন। পরে সাপসহ (রাসেলস ভাইপার) রোগীকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। একই দিন রাত ১টার দিকে উপজেলার বাঁশকান্দি এলাকা থেকে সাপের ছোবলে গুরুতর আহত সজীব হাওলাদার নামের এক যুবককে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। পরে তাদের অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে তারা উভয়ই সুস্থ হন। পরবর্তীতে আরও একাধিক রোগী অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ সুস্থ হয়ে উঠেন।সুলতান বেপারীসহ একাধিক রোগী জানান, শিবচর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২/৩ দিনের মধ্যেই অনেক রোগী সুস্থ হয়েছেন। এখন সাপে কাটলেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চলে আসে আক্রান্তরা।

আগে হাসপাতালে সাপেকাটা রোগীর চিকিৎসা হয়, অনেকেই জানতো না। তাছাড়া আগে হাসপাতালে ততটা গুরুত্বও দিতো না। বর্তমানে গুরুত্বসহকারে রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে।চরজানাজাত এলাকার বাসিন্দা আহম্মেদ হাওলাদার (৬০) নামে এক কৃষক বলেন, ৩০ আগস্ট আমিসহ কয়েকজন সকালে ধান ক্ষেতে গেলে আমার পায়ে হঠাৎ সাপে কামড় দেয় ৷ সাপটি মেরে হাসপাতালে নিয়ে আসলে জানতে পারি সাপটি রাসেলস ভাইপার। এরপর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে এখন আমি সুস্থ। হাসপাতালের চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।

এতে আমি খুবই সন্তুষ্ট।শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.ফাতিমা মাহজাবিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম রয়েছে। শেষ হওয়ার আগেই আমরা চাহিদা দিয়ে থাকি। সাপেকাটা রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এলে যথাযথ চিকিৎসার মধ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।তিনি আরও বলেন, মূলত গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে এখনো সেই পুরোনো ধারণা রয়েছে যে সাপে কাটলে ওঝার কাছে নিতে হয়। যার কারনে হাসপাতালে আসতে দেরি করে, চিকিৎসাসেবা প্রদানেও দেরি হয়ে যায়। ফলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। তাই অপচিকিৎসা না দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে আনতে হবে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম রয়েছে। দ্রুত চিকিৎসা দিতে পারলে প্রাণে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। চিকিৎসকরাও সাপে কাটা রোগীর ব্যাপারে খুব যত্নশীল।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo