• স্বাস্থ্য

বন্যার সময় শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যা, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

  • স্বাস্থ্য
  • ২৬ আগস্ট, ২০২৪ ১৪:২২:৫০

ছবিঃ সংগৃহীত

স্বাস্থ্য ডেস্কঃ বন্যার মতো এই কঠিন দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশুরা। তাদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বন্যার সময় শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা পানি দূষিত হওয়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস এবং সংক্রামক রোগের বিস্তারের কারণে হতে পারে। এই ধরনের রোগের প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।বন্যার সময় সবচেয়ে সাধারণ রোগগুলোর মধ্যে একটি হলো ডায়রিয়া রোগ। যেমন কলেরা এবং আমাশা। এই রোগ সাধারণত দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায়। এর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বারবার পাতলা পায়খানা হওয়া, শরীরে পানি শূন্যতা, পেটব্যথা, বমি এবং জ্বর। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS) খুবই কার্যকর, যা শরীরে পানি শূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া, সংক্রমণ ব্যাকটেরিয়াল হলে আজিথ্রোমাইসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। ডায়রিয়ার সময়কাল ও তীব্রতা কমাতে জিঙ্ক সাপ্লিমেন্টও প্রয়োজনীয়।

তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, সঠিক স্যানিটেশন মেনে চলা এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করা।বন্যার সময় ঠান্ডা ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকার কারণে শিশুদের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, যেমন নিউমোনিয়া এবং ব্রঙ্কাইটিস। এই ধরনের সংক্রমণের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং বুক ব্যথা। ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হলে অ্যামোক্সিসিলিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে, এবং জ্বর নিয়ন্ত্রণে প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিশুকে উষ্ণ, পরিষ্কার এবং শুকনো রাখতে হবে এবং আশ্রয়স্থলের পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল নিশ্চিত করতে হবে।টাইফয়েড জ্বর হলো আরেকটি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি, যা দূষিত খাদ্য বা পানি গ্রহণের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, পেটব্যথা, দুর্বলতা এবং মাথাব্যথা।

টাইফয়েডের চিকিৎসায় আজিথ্রোমাইসিন বা সেফট্রিয়াক্সন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে যাতে শরীরে পানিশূন্যতা না হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে বা জটিলতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হতে পারে। টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার এবং সঠিক খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।ত্বকের সংক্রমণও বন্যার সময় একটি সাধারণ সমস্যা হতে পারে, যা দীর্ঘ সময় ধরে পানির মধ্যে থাকার এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে হয়। এর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ত্বকে লালভাব, ফুলে যাওয়া, চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং ফোসকা। ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণের জন্য ক্লোট্রিমাজল জাতীয় অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য ফ্লুক্লক্সাসিলিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। ক্ষতস্থান জীবাণুমুক্তভাবে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখা জরুরি। সংক্রমিত স্থান শুকনো রাখতে হবে এবং শিশুকে শুকনো পোশাক পরানোর চেষ্টা করতে হবে। ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার এবং শুকনো রাখলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।

বন্যার সময় মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়, যা ডেঙ্গুর মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা, পেশী ও গিঁটের ব্যথা এবং ত্বকে র‍্যাশ। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় শরীরের পানি শূন্যতা যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এনএসএআইডি (NSAID) বা ব্যথার ঔষধ এড়িয়ে চলা উচিত, শুধুমাত্র প্যারাসিটামল দেওয়া উচিত। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশারি ব্যবহার এবং মশা তাড়ানোর জন্য রিপেলেন্ট ব্যবহার করা উচিত, যাতে নতুন করে সংক্রমণ না হয়।বন্যার সময়ের ট্রমাটিক অভিজ্ঞতা এবং বাস্তুচ্যুতি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে উদ্বেগ, বিষণ্নতা, ঘুমের সমস্যা এবং অন্তর্মুখী আচরণের মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসায় কাউন্সেলিং এবং মানসিক সমর্থন অত্যন্ত জরুরি। পরিবারের সমর্থন একটি স্থিতিশীল এবং সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুকে বিভিন্ন কার্যকলাপে ব্যস্ত রাখা উচিত যাতে মনোযোগ সরানো যায় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অনুভূতি ফিরিয়ে আনা যায়।

প্রাথমিক হস্তক্ষেপ এবং কমিউনিটি সাপোর্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব।বন্যাজনিত রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সাধারণ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা, সঠিক স্যানিটেশন সুবিধা স্থাপন করা, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করা এবং রোগ জটিল দিকে যাওয়ার আগেই শিশুর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এই পদক্ষেপগুলো বন্যার সময় শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক হতে পারে এবং রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। প্রতিটি জীবন খুবই মূল্যবান। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo