• উদ্যোক্তা খবর

গোপালপুরে শীতল পাটির ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে একটি পরিবার 

  • উদ্যোক্তা খবর
  • ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১৭:৩০:২০

ছবিঃ সিএনআই

গোপালপুর প্রতিনিধিঃ বাঙালি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে শীতল পাটি, প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প হলো এই শীতল পাটি। মুর্তাগাছের বেত দিয়ে নয়নাভিরাম বুননের মাধ্যমে তৈরি হয় মসৃন এই মাদুর; সর্বত্র ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলো। শীতল পাটি ছাড়া গ্রামের বিয়ে ছিল কল্পনাতীত।  কালের পরিক্রমায়, আধুনিক আসবাবপত্রের কারনে শীতল পাটির জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পরেছে। পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিচর্যার অভাবে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে হুমকির পরেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যারা পাটি বানাতো তাদের স্থানীয়ভাবে বলা হতো পাইততা। নগদা শিমলা ইউনিয়নের বাইশকাইল গ্রামে পাইততা পাড়া নামক সমাজে প্রায় ২৫০টি হিন্দু পরিবারের বসবাস ছিলো। স্থানীয়রা জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাইশকাইলের পাইততা পাড়ায় গনহত্যা চালায়। গুলিতে ২০এর অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই মূলত হিন্দু পরিবারগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ এবং দেশের অন্যত্র সরে যেতে থাকে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে একমাত্র বৃদ্ধ নরেশ চন্দ্র চন্দ (৮৫) পূর্ব পুরুষের পাটি বানানোর পেশা ধরে রেখেছেন। পাটি বুননের কাজে সহায়তা করেন তার স্ত্রী বৃদ্ধা কমলা রাণী (৮০) এবং হাট বাজারে বিক্রি করেন তাদের একমাত্র পুত্র মন্তোস চন্দ্র চন্দ(৪৫)।

একমাত্র পরিবারটি যেকোন মুহূর্তে দেশের অন্যত্র চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কথা জানান তারা।

বৃদ্ধা কমলা রাণী জানান, আমরা একটি পরিবার হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়, উৎসব, পূজা পার্বণ একাই করতে হয়, কেউ মারা গেলে দাহ করার মানুষ পাই না। আমাদের অনেক জমি বেদখল হয়ে আছে, কিছুদিন আগে গণভবনে গিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা হয়নি, তবে লিখিত আবেদন দিয়ে এসেছি।

বৃদ্ধ নরেশ চন্দ্র চন্দ বলেন, আমরা দুজনেই চোখে কম দেখি, তবুও অনেক কষ্টে ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে পাটি বানাই, আমার স্ত্রী বুননের কাজ করে। একটি পাটি বানাতে ৩-৪দিন সময় লাগে, বেত কিনতে হয়। প্রতি পাটি ৪০০-৭০০টাকা বিক্রি হয়। শীতল পাটি বানাতে সময় লাগে ৬-৭দিন এগুলো ২হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। 

তিনি আরো বলেন, সরাসরি আমাদের কেউ কিছু না বললেও, মাঝে একটি হিন্দু পরিবার হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাড়ির সীমানা নিয়েও বিভিন্নভাবে আমাদের মানসিক চাপে রাখা হয়। আমাদের সমস্যা সমাধান হলে, আমরা এখানেই থেকে যাবো।

গোপালপুরের ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র চন্দ বলেন, বাইশকাইল গ্রামে আমাদের পূর্ব পুরুষের বাড়ি ছিল। গনহত্যার পর থেকেই মূলত হিন্দু পরিবারগুলো বিভিন্ন স্থানে যেতে থাকে, আমরাও গোপালপুর চলে আসি। ঐ পরিবারটি একা হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়ে গেছে। গোপালপুর উপজেলায় একটি মাত্র পরিবার পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তারা চলে গেলে গোপালপুরে পাটি বানানোর ঐতিহ্য পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ঐতিহ্যটি টিকিয়ে রাখতে এবং গনহত্যার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গোপালপুর শাখার সভাপতি হরিপদ দেব মঙ্গল বলেন, পরিবারটি একা হয়ে যাওয়ায় ঐখানে টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে, তাদের জমি সংক্রান্ত একটি মামলা আদালতে চলমান থাকায় এখন পর্যন্ত তারা সেখানে রয়েছে।

নগদা শিমলা ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান সোহেল বলেন, ডিজিটালের ছোঁয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাটির চাহিদা কমে যাওয়ায় মূলত বিভিন্ন পেশায় তারা স্থানান্তরিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পরিবারটিকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। সরকার যদি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ঐতিহ্যটি টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করে তবে অবশ্যই তাদের নিকট পৌঁছানো হবে। 

উপজেলার সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. এখলাছ মিয়াজানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রকল্প আমাদের উপজেলায় চালু নেই, নরেশ চন্দ্র চন্দকে বয়স্ক ভাতার আওতায় এনে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

ইউএনও সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, এবিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে পরে বিস্তারিত জানাবো।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo