• বিশেষ প্রতিবেদন

শ্রীপুরে স্ট্রবেরি চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:৩৫:১১

ছবিঃ সিএনআই

শ্রীপুর, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এবার স্ট্রবেরি চাষে সাড়া ফেলেছেন এ এলাকার চাষিরা। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা সরবরাহ করছেন। তাদের দেখে অনেক কৃষক স্ট্রবেরি চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া, বরমী ইউনিয়নের বরমা, গাড়ারন, গাজীপুর ইউনিয়নের নিজ মাওনা, গোসিংগা ইউনিয়নের পেলাইদ এবং তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করা হয়েছে।

শীত প্রধান দেশের ফল হিসেবে স্ট্রবেরির প্রচলন থাকলেও এখন বাংলাদেশেও ব্যাপক চাষ হচ্ছে। বাজার চাহিদা, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় দিনদিন শ্রীপুরের কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরি চাষ। আকর্ষণীয় বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ ও উচ্চ পুষ্টিমানের জন্য স্ট্রবেরি অত্যন্ত সমাদৃত। ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন খাদ্যের সৌন্দর্য ও সুগন্ধ বৃদ্ধিতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। অল্প পুঁজি, স্বল্প শ্রম কিন্তু লাভ অনেক বেশি। এ ফল চাষে অল্প দিনেই সফলতার মুখ দেখেছেন এ উপজেলার অনেক কৃষকেরা।



জানা যায়, ১৭৪০ সালে ফ্রান্সে প্রথম স্ট্রবেরির চাষ শুরু হয়। পরবর্তীতে চিলি, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করে। শীতপ্রধান দেশের ফল স্ট্রবেরি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি সেসব এলাকায় বিভিন্ন জাতের স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে।

শ্রীপুর উপজেলা বরমী ইউনিয়নের বরমা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করতে হয়। এ জন্য পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টর দিয়ে ৫ থেকে ৬টি চাষ করে জমির মাটি ঝরঝরে করে নিতে হয়। তারপর সার, গোবর ও ক্যালসিয়ামের অন্য উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। বিঘা প্রতি স্ট্রবেরি চাষে খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।

ওই গ্রামের অপর কৃষক আশরাফুল জানান, মৌসুমের শুরুতে স্ট্রবেরির সাদা ফুল ফোটে। পরে হলুদ রঙ্গের ফল ধরে। সবশেষে পাকা লাল টুকটুকে রং ধারণ করে। উইন্টারডন জাতের একটি চারা গাছ থেকে মৌসুমে কমপক্ষে দুই কেজি ফল পাওয়া যায়।

বরমী ইউনিয়নের বরমা গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, লোক মুখে শুনে সাইফুল ইসলাম ভাইয়ের স্ট্রবেরি বাগান দেখতে ছুটে এসেছি। স্ট্রবেরী বাগান দেখে ভাল লেগেছে। বাগান থেকে নিজ হাতে ছিড়ে স্ট্রবেরী খেয়েছি। বেশ ভাল স্বাদ। সাইফুল ভাইয়ের বাগান দেখ আমিও স্ট্রবেরী বাগান করবো বলে ভাবছি। স্ট্রবেরি চাষে বেশি খরচ হয় সেচ দিতে। এ পর্যন্ত ২৫-৩০ বার সেচ দিয়েছেন। স্ট্রবেরির বাগান দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তারা গাছ থেকে স্ট্রবেরি নিজ হাতে ছিড়ে খাচ্ছে। অনেকেই এখন স্ট্রবেরির চাষ করার কথাও ভাবছে।



গাজীপুরে শ্রীপুরে স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন উপজেলার গোদারচালা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে শিক্ষিত বেকার যুবক তোফায়েল আহমেদ (২৮)। তিনি স্ট্রবেরি চাষ করে স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এটি সারা বিশ্বের জনপ্রিয় একটি ফল। দেখতে কিছুটা লিচুর মতো। অনেকে বাড়ির ছাদে চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা।

তিনি বলেন, টিস্যু কালচার ল্যাব থেকে মাদার গাছ কিনে চারা তৈরি করেন। এ চারা তিনি জমিতে রোপন করেন এবং অন্যদের কাছেও চারা বিক্রি করে থাকেন। প্রথম তিনি মাদার গাছ ৪০ টাকা করে কিনেন। পরে মাদার গাছ থেকে যে চারা উৎপাদন হয় তা নিজের চাহিদা মেটানো পর কৃষকদেও কাছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করেন। তিনি দেড় বিঘা জমিতে সাড়ে চারশ স্ট্রবেরি গাছ লাগিয়েছেন। দৈনিক ১৫ থেকে ২০ কেজি স্ট্রবেরি জমি থেকে তুলে থাকেন। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা বিক্রি করেন। এ পর্যন্ত তিনি দেড় লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন। আমার স্ট্রবেরি চাষ দেখে এলাকার অনেক কৃষক আগামী মৌসুমে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সরেজমিনে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ক্ষেতের পাশেই টানানো সাইনবোর্ড ‘রেডগ্রীন স্ট্রবেরি ভিলেজ। শীতের ফসল এই স্ট্রবেরির বর্তমান মৌসুম প্রায় শেষ। ক্ষেত পরিচর্যার পাশাপাশি অবশিষ্ট স্ট্রবেরি সংগ্রহের কাজ এখনো চলছে। ক্ষেতেই দেখা হয় যুবক তোফায়েলের সাথে। বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্ট্রবেরি সংগ্রহের কাজ শেষ করে চারা তৈরির কাজে মনোযোগ দেবেন।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, স্ট্রবেরি উচ্চমূল্য এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল। স্ট্রবেরি রসালো ও পুষ্টিকর ফল। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় এটি সারাবিশ্বে সমাদৃত। উচ্চ ফলনশীল স্ট্রবেরি বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করার মাধ্যমে বেকারত্ব এবং পুষ্টি ঘাটতিও পূরণ করা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরির চারা রোপণ করা যায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে এপিপ্রল পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। অল্প বিনিয়োগে বেশি মুনাফা হওয়ায় এটি চাষে কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেশি।
 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo