• সমগ্র বাংলা
  • লিড নিউজ

আলমডাঙ্গায় দিলীপ কুমার আগরওয়ালার জনসভা যেন জনসমুদ্র

  • সমগ্র বাংলা
  • লিড নিউজ
  • ০১ জানুয়ারী, ২০২৪ ২২:৫৬:২৫

ছবিঃ সিএনআই

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ চুয়াডাঙ্গা -১ আসনে নির্বাচনী প্রাচার প্রচারনায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। নির্বাচনের তারিখ যত এগিয়ে আসছে ততো ঈগল প্রতীকের পক্ষে জনসমাগম বাড়ছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনী আসনটির সর্বত্র বিরামহীন প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও তার কর্মী-সমর্থকরা। এর ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার আলমডাঙ্গার এটিম মাঠে ৫২ বছর পর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জনসভা ঈগল প্রতীকের অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দুর্নীতিমুক্ত চুয়াডাঙ্গা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দিলীপ কুমার। তিনি উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চান। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি জেলার সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ এসময় ঈগল প্রতীকের স্লোগানে মুখর করে তোলেন।

সোমবার  বেলা ২ টার পর থেকে সমাবেশ মঞ্চ নেতা-কর্মীতে পরিপূর্ণ হতে থাকে। উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর মেয়র, উপজেলা যুবলীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ, উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বড় অংশই এই জনসভায় অংশ নেন। চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ দলে দলে মিছিল নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশাল মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তারা ঈগল প্রতীকের ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল দিয়ে এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন। 

আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র হাসান কাদির গনু মিয়ার সভাপতিত্বে জনসভায় নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন।

তারা তাদের বক্তব্যে বিগত আমলে উন্নয়ন ও সুশাসন নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তারা আশা করেন ঈগল প্রতীকের প্রার্থী দিলীপ আগরওয়ালা বিজয়ী হলে স্মার্ট চুয়াডাঙ্গা গড়ে উঠবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। 

জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, চুয়াডাঙ্গাবাসী আজ পরিবর্তন চায়। তারা আর কোন নির্দিষ্ট পরিবারের গন্ডিতে আটকে থাকতে চায় না। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়ন হলেও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে তার সুফল আসেনি। তাই আমি বিজয়ী হলে এই জেলাকে স্মার্ট চুয়াডাঙ্গায় রূপ দেব। 

দিলীপ আগরওয়ালা আরো বলেন,  এই আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গার ধুলো-মাটি আমার গায়ে লেগে আছে। আমি এই জনপথের মাটি ও মানুষের টানে বার বার ছুটে আসি। এই টানই আমাকে নামিয়েছে ভোটের মাঠে। এই টানই আমাকে নামিয়েছে ঈগল প্রতীক নিয়ে। পরিবর্তনের জন্য। এই জনপদের। কি পরিবর্তন চান আপনারা? ইনশাআল্লাহ সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আপনাদের চেষ্টায় পরিবর্তন আসবেই।

পরিবর্তন না হলে এই জনপদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের স্লোগান হবে, “উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চাই।“  আমি নির্বাচিত হলে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবো, আলমডাঙ্গায় হাসপাতাল হবে, সদরে ৫০০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তরিত করবো। এখানে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করবো।

সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধের আহবান জানিয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক। তাই নির্বাচনের মাঠে হিন্দু-মুসলমান বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। এসময় তিনি প্রত্যেক নির্বাচনী আসনের প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে মডেল মসজিদ, মাদরাসা, গোরস্তান, শ্মশান, মন্দির গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। 

পরিবারের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে দিলীপ আগরওয়ালা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবারের অবদান রয়েছে। আমার মাতামহ ও আপন দুই মামা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর বিহারীদের নারকীয় হামলায় ইতিহাসের কুখ্যাত । আমার মায়ের নামে করা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, “তারা দেবী ফাউন্ডেশনের” কথা আপনারা সবাই জানেন। ব্যক্তি উদ্যোগে আপনাদের পাশে আছি। সব সময় ছিলাম। 

দিলীপ আগরওয়ালা আরও বলেন,  বৃহৎ পরিসরে উন্নয়নের জন্য। ডিও লেটার ছাড়া অনেক কিছুই সম্ভব নয়। একটা স্বাক্ষর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নের জন্য।  তাই চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আমি এমপি হতে চাই। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার মানুষকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করার জন্য  আমি এমপি হতে চাই।

আমি আপনাদের কথা চিন্তা করে এখানে এসেছি। আমাকে সৃষ্টিকর্তা যতটুকু দিয়েছে। তা দিয়ে আমার পরবর্তী তিন প্রজন্ম  সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে।  কিন্তু সবকিছু ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

নির্বাচনী প্রচারণার বাধাঁ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে দিলীপ আগরওয়ালা বলেন, আমার কর্মীরা পোস্টার লাগাতে গেলে, লাগাতে পারছে না। আমার কর্মীদের লাগানো পোস্টার ব্যানার তারা কেটে দিচ্ছেন। আমার কর্মীকে তারা মারধর করছেন। হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। 

এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা এবং আলমডাঙ্গা থানায় ১০ টি জিডি ও মামলা করেছি। ৬ টি অভিযোগ দায়ের করেছি। তারা আমাকে টার্গেট করেছে। আপনারা পেপার পত্রিকায় দেখেছেন, শংকরচন্দ্র ইউনিয়নে আমি নির্বাচনী প্রচারে গেলে, আমার উপর হামলা করা হয়।

পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মানিক অস্ত্র উঁচিয়ে আমাকে হত্যা ও অপহরণ চেষ্টা করে।  ওই ঘটনায় প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। আমি তাদের নিকট কৃতজ্ঞ। মানিক এরেস্ট হয়। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়েই প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। আমার কর্মীদেরকে ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়েছে। কিন্তু আমার কর্মীরা , আমার মতোই সাহসী।

তিনি বলেন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এই সরকারই দিয়েছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গায় বন্টন সমানভাবে হচ্ছে না। আমি নির্বাচিত হলে এসব অনিয়ম, বৈষম্য থাকবে না। আমি এমপি হলে প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি মডেল মসজিস , একটি মডেল মাদ্রাসা ও একটি মডেল পাবলিক কবরস্থান করবো। এছাড়াও প্রতিটা ইউনিয়নে একট মডেল  শ্মশান  ও মডেল মন্দির করবো।

কর্মমুখী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কর্মসংস্থান নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি; বেকার মুক্ত হবে  চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা। কর্মসংস্থান পেলে হাত পেতে অনুদান নেয়ার সংস্কৃতি বন্ধ হবে।  সৃষ্টিকর্তা যদি সুযোগ দেয় , চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের  গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই  জোন করে দেবো। 

তথ্য-প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরে  দিলীপ আগরওয়ালা বলেন, অনলাইনে আউটসোর্সিং ট্রেনিং সেন্টার করে দেবো। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনা করা অবস্থাতেই  অনলাইনে ইনকাম করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেবো। সৃষ্টিকর্তা যদি সুযোগ দেয়, ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা আমি উপহার দেবো।

তিনি আরো বলেন, এছাড়াও কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা, নারী জাগরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, সন্ত্রাসমুক্ত জনপদ, অসাম্প্রদায়িক চুয়াডাঙ্গা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দলিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে আমি কাজ করবো।  

পরিবেশেষ আলমডাঙ্গাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,  ৫২ বছরের ইজারা শেষ করতে হলে ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে। আর এইবার যদি ভোটকেন্দ্রে না যান, তবে ওই পরিবার ১০০ বছরের চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার ইজারা নিবেন। কী করবেন? সিদ্ধান্ত আপনাদের।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo