• রাজনীতি

ফের মামলার জালে বিএনপির নেতাকর্মীরা

  • রাজনীতি
  • ০৬ নভেম্বর, ২০২৩ ১১:০৭:০৭

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ ফের মামলার জালে আটকা পড়ছেন চট্টগ্রাম বিএনপির নেতাকর্মীরা। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে হরতাল-অবরোধ পালন করতে গিয়ে নতুন করে মামলার আসামি হয়েছেন সহস্রাধিক নেতাকর্মী। এরই মধ্যে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতি মূলত নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। নগরীতে সভা-সমাবেশসহ দলীয় বড় কর্মসূচিগুলো তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নেতৃত্বেই হয়ে আসছিল। রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশের সময় এক পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিনি কারাগারে। তার অনুপস্থিতিতে বর্তমানে বেকায়দায় চট্টগ্রামের বিএনপি। নেতাকর্মীরা এখন অনেকটাই অভিভাবকহীন। গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে চট্টগ্রামের অন্য সিনিয়র নেতারাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিছু দিন আগেও মাঠে সক্রিয় ছিলেন এমন নেতাকর্মীদের এখন প্রকাশ্যে দেখা মিলছে না।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক ও বর্তমানে দপ্তর সমন্বয়ক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, মহানগরীর আকবর শাহ এবং পাহাড়তলী থানায় বিএনপি-অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে দুটি মামলা হয়েছে। গত কয়েক দিনে নগর বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে অবরোধের প্রথম দিন ৪০ জন, দ্বিতীয় দিন ২০ জন এবং শেষ দিন ১৫ জন। এ ছাড়া ঢাকায় মহাসমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন চট্টগ্রামের প্রায় ৩০ জন।

তিনি জানান, নগরীর চেয়ে জেলায় বেশি মামলা হয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায় থেকে তথ্য না পাওয়ায় গ্রেফতারের সংখ্যা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। সীতাকুণ্ডু, বোয়ালখালী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ লোহাগাড়াসহ প্রায় সব উপজেলাতেই হরতাল-অবরোধে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নগরী ও জেলায় নতুন মামলা হয়েছে অন্তত ১০টি। এসব মামলায় আসামি এক হাজারেরও বেশি হবে। তার দাবি, সরকার পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়ে এর দায়ভার বিএনপির ওপর চাপানোর চক্রান্ত করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, অবরোধে চট্টগ্রামে অন্তত ছয়টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগরীতে তিনটি বাস, কর্ণফুলী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় একটি করে বাস এবং সীতাকুণ্ডুর পন্থিছিলা এলাকায় একটি ট্রেইলার রয়েছে। এছাড়া নগরীর সিটি গেটসহ বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু ককটেল ও পেট্রলবোমা। এসব ঘটনায় মামলার পাশাপাশি পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। বিএনপির একটি সূত্রের দাবি, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় বিএনপি-অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মামলা হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার জনকে।

সূত্র আরও জানায়, চট্টগ্রামে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকের নামেই মামলা রয়েছে। মামলা আছে কর্মীদের নামেও। নাশকতা, ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা হলেও বিএনপির দৃষ্টিতে সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে ৮৮টি মামলা। সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের নামে আছে ৬৬টি। দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের নামে ৪১টি। নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে নগর বিএনপি নেতা গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহর নামে ১৩৪টি, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আলী মুর্তজা খানের বিরুদ্ধে ১১০টি মামলা রয়েছে। এছাড়া দলের মধ্যম সারির নেতাদের নামে ৮-১০টি করে মামলা আছে। তবে পুরানো মামলাগুলোতে বেশির ভাগ নেতাকর্মীই জামিনে রয়েছেন। এদিকে নতুন মামলার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে গ্রেফতার আতঙ্ক। বাড়িতে থাকছেন না অনেকেই। গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নেতাদের দেখা পাচ্ছেন না কর্মীরা। অনেক নেতার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুরোনো মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে দিতে মাস কেটে যায়। তার ওপর নতুন মামলা আমাদের চিন্তিত করে তুলেছে। একদিকে মামলার খড়গ ঝুলছে। অন্যদিকে নিতে হচ্ছে আন্দোলনের প্রস্তুতি। সব মিলে আমরা এক ধরনের অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে আছি।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo