• বিশেষ প্রতিবেদন

বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতায় রংপুর

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ২২:২২:৩৩

ছবিঃ সিএনআই

রংপুর ব্যুরো: ভারী বর্ষণ টানা বৃষ্টিতে রংপুর নগরীর  বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।এর ফলে ভোগান্তি আর দূভোগে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। স্থানীয় বলছেন ড্রেস ব্যবস্থা না থাকার কারণে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নগরীতে। 

রংপুর নগরীর প্রধান প্রধান কয়েকটি সড়কে পানি জমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় ও সাধারণ  মানুষকে। বিপাকে পড়তে হচ্ছে  শ্রমজীবী মানুষ। আশ্বিনের এই ভারী বৃষ্টিতে ধানের উপকার হলেও সবজি খেতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।তবে অনেক এলাকায় সব পানি উঠে যাওয়ায়নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের রবিশস্য। 

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে সর্বমোট ১৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ ২৫৯.৪ মিলিমিটার। এটি এ মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। রংপুর আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক অফিসার অরজিৎ কুমার রায় জানিয়েছেন।

টানা বৃষ্টিতে রংপুর নগরীর  ঘুরাতিপাড়া, কেরামতিয়া মসজিদ সংলগ্ন, তাজহাট, বাবুপাড়া, কামারপাড়া, আদর্শপাড়া, নগর মীরগঞ্জ, শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, কলাবাড়ি দর্শনা,  কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, বোতলা, নিউ জুম্মাপাড়া, পূর্ব জুম্মাপাড়া, মর্ডান মোড় সংলগ্ন বিভিন্ন মহল্লা, মুন্সিপাড়া, হনুমানতলা, মুলাটোল, মেডিকেল পাকার মাথা ও জলকর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।রাতভর ও সকাল থেকে বৃষ্টি হয়  ঘর থেকে বের হতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী,দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ।

রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার  জহুরুল ইসলাম বলেন,রাতভর ও  সকালে বৃষ্টি হওয়ায় নগরীতে সৃষ্টি হয়েছে জলবদ্ধতার। এ কারণে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তিনি বলেন সঠিকভাবে ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকার কারণে নগরবাসীকে বারবার ভোগান্তিত হয়। 

রংপুরে নগরীর জুম্মাপাড়া এলাকায়  হাবিবুর রহমান, জালাল মিয়া, সেলিম মিয়া জানান, সকাল থেকে বাসা থেকে বের হতে পারছি না বৃষ্টির ফলে। পুরো রাস্তা ঘাটেই পানি জমে গেছে। জমে গেছে বাড়ির আশপাশ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।এর ফোনে বাচ্চাদের স্কুলে নিতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তারা বলেন সঠিক পরিকল্পনা না থাকার কারণে নগরীতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। 

 রিকশাচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন,একদিন রিক্সা নিয়ে বের হতে না পারলে ধারদেনা বেড়ে যায়। শনিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টির কারণে বাইরে মানুষের চলাফেরা কমে গেছে। রিকশা বন্ধ করে ঘরে বসে দিন পার করছি। এই বয়সে ভিজলে অসুস্থ্য হতে হবে নির্ঘাত। আগের মতো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নাই। গতকাল থেকে রিক্সা বের করতে না পারায় সমস্যা তৈরী হয়েছে। রাতের খাবার নিয়ে চিন্তায় আছি।

নগরীর ফুটপাতের কাপড় ব্যবসায়ী নাসির  হোসেন, আলাউদ্দিন, আব্দুল কাদের বলেন, ভারি বর্ষনের ফলে কাপড়ের দোকান খোলা সম্ভব হয়নি। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষায় আছি, বৃষ্টি কমলে দোকান খুলবো। কিন্তু বৃষ্টি কমার কোন সম্ভাবনা নেই। বাড়ি চলে যাচ্ছি।আমাদের অবস্থা আছে কিনা না করলে বাসায় অনেক কষ্ট করতে হয়। 

এদিকে শনিবার রাত থেকে টানা বর্ষনের কারনে রংপুর নগরীর অনেক এলাকায় বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করছে। মানুষের দুর্ভোগ আর ভোগান্তি হচ্ছে। অনেকের ঘরের ভিতরে খাট পর্যন্ত পানি উঠেছে। আবার অনেকের ঘরের আসবাবপত্র ভিজে গেছে ইতোমধ্যে। অনেকেই আবার উচু স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে আসবাবপত্র।অনেকে দায়ী করছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে।তারা বলছেন ড্রেস ব্যবস্থা সঠিকভাবে এই জলাবদ্ধতা আর পানি উঠে যায় ঘরের ভিতরে।  

তাজহাট,স্টেশন রোড ও আলম নগরের  রফিকুল ইসলাম,আনারুল ইসলাম, রহমান মিয়া  বলেন,শনিবার বিকেল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে।আজ রোববার চলছে বৃষ্টি। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে।অনেক নিচু জায়গা তলিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে আমাদের মতো অনেকেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে নগরীতে অটো রিক্সার সংখ্যা অনেক কম। ফলে অটো রিক্সা চালকরা ভাড়া চাচ্ছেন ইচ্ছামতো। বাড়তি অর্থ গুণতে গিয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন বাক-বিতণ্ডায়। বাড়তি ভাড়া দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ ও ও রংপুর জিলা স্কুলের  শিক্ষার্থী আরিয়ান আবির, গোলাম মোস্তফা,রহিদুল ইসলাম  তারা বলেন, বাড়ি থেকে কলেজ আসা রিক্সা ভাড়া অনেক বেশি ৩০ টাকা,ভাড়া ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।স্কুল আর কলেজ যেতেই হবে ৫০ টাকা ও ৬০ টাকা কোন বিষয় নয়। কিন্তু বৃষ্টি থামছে না শরীরের কাপড় চোপড় ভিজে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে ধান ও সবজি খেতে পানি জমেছে। এই পানি ধানের পোকা দমনসহ অন্যান্য উপকার হলেও ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সবজি খেতে। রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক টাকা থরচ করে বাড়ির সামনে সবজির চাষ করেছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারনে সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমন অনেকের সবজি খেতের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, এখন ধানের মৌসুম। এই বৃষ্টি ধান খেতের জন্য উপকারী। তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সবজি খেতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যেটা পানি নেমে যাওয়ার পর বোঝা যাবে। তবে পানি জমে থাকলে অবশ্যই ক্ষতির মুখে পরবে সবজি চাষিরা।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান,পূর্বের আবহাওয়া অনুযায়ী শনিবার থেকে এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে এ বৃষ্টিপাত আরও দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।তবে আরো বৃষ্টি হতে পারে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তর। তিনি বলেন বেশ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে মানুষ দুর্ভোগে পরছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo