
সুনামগঞ্জঃ সুনামগঞ্জে নিজের আপন শিশুকে বিক্রির অপরাধে বাবা সহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযান চালিয়ে বিক্রিত দেড় বছরের শিশু মকবুলকে নরসিংদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার(১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ভিকটিমের পিতা সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানা এলাকার মল্লিকপুর গ্রামের সাব উদ্দিনের ছেলে সালে নুর(৩০), শান্তিগঞ্জ থানা এলাকার বাবনিয়া গ্রামের মৃত আশক আলীর ছেলে মনফর আলী(৪৫), জগন্নাথপুর থানার কাজিরগাঁও গ্রামের মৃত দারিছ মিয়ার ছেলে রমাই মিয়া(৫৫) ও নরসিংদী থানার স্থায়ী বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ সদর থানার খেজাউরা হাছন নগর গ্রামের বসবাসরত মৃত রফিক আলমের মেয়ে লাকি আক্তার(৩৮)।
পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাফিয়া বেগম ও তার স্বামী অভিযুক্ত নুরের মধ্যে পারিবারিক মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় এবং মাফিয়া বেগমকে তার দুই শিশুপুত্র সহ বাবার বাড়ি শান্তিগঞ্জ থানার বাবনিয়া গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। গত এক মাস পূর্বে অভিযুক্ত নুর তার শশুড়বাড়ি বাবনিয়া গ্রামে আসে এবং স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যেতে যায়। মাফিয়া বেগমের স্বামীর সাথে মনোমালিন্যতা থাকার কারণে স্বামীর সাথে যাননি। এরপর নুর তাহার বৃদ্ধ মা অসুস্থতার কথা বলে তার দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে যান। কিছুদিন পর অভিযুক্ত নুর তার শশুড়বাড়ি আবার আসলে মাফিয়া বেগম তার দুই ছেলের কথা জিজ্ঞেস করেন।
তখন নূর মিয়া জানায় যে, তার দুই ছেলে তাহার গ্রামের বাড়িতে আছে। মাফিয়া বেগম তার ছেলেদের দেখার জন্য সেখান থেকে নিয়ে আসার কিথা বললে ছেলেরা তার দাদীর সাথে ঢাকা শহরে আছে বলে জানায় ছেলেদের বাবা। মাফিয়া বেগম তার শাশুড়ির সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে তার বড় ছেলে রাব্বি হাসান নামের এক আত্মীয়ের কাছে আছে। তখন মাফিয়া বেগম তার স্বামীকে ছোট ছেলে মকবুল হাসানের কথা জিজ্ঞেস করলে সে তাল বাহানা করতে থাকে। তখন ছেলের মা মাফিয়া বেগমের সন্দেহ হলে তিনি তার আত্মীয় স্বজনকে সাথে নিয়ে সন্তানের কথা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার স্বামী ও ভিকটিমের পিতা সালে নুর মিয়া জানান, অভিযুক্ত মনফর আলী ও রমাই মিয়ার সহায়তায় অপর অভিযুক্ত লাকী আক্তারের কাছে এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছোট ছেলে মকবুল হাসানকে বিক্রয় করে বলে স্বীকার করেন।
পরবর্তীতে গত রবিবার(১৭ সেপ্টেম্বর) শান্তিগঞ্জ থানায় ভিকটিমের মা মাফিয়া বেগম একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) শুভাশীষ ধরের দিক নির্দেশনায় ও শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরীর তথ্যাবধানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক মোহন রায়ের নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, জগন্নাথপুর, জামলাগঞ্জ থানা এলাকা ও সর্বশেষ নরসিংদী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামীদের আটক এবং ভিকটিমকে উদ্ধার করে।
শান্তিগঞ্জ থানা ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী জানান, শিশু বিক্রির অভিযোগের ঘটনায় ভিকটিমের মা মাফিয়া বেগম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, জগন্নাথপুর, জামলাগঞ্জ থানা এলাকা ও ঢাকার নরসিংদী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৪জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করে আসামীদের বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য ( ০)