• বিশেষ প্রতিবেদন

আখিনূরের স্বপ্ন দেহার দেখার কারিগর “ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ”

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৬:৪৯:২৩

ছবিঃ সিএনআই

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ আখিনূর (৩৬)ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার দাওগাঁও ইউনিয়নের খুব ছোট এবং দূরবর্তী গ্রাম দাওগাঁও এ বসবাস করেন। তার স্বামী মৃত রফিকুল ইসলাম ছোট মেয়ের জন্মের পর পর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যান। নওশিন (১১) নামে তার বড় মেয়ে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের রেজিষ্টার্ড শিশু, যার আইডি নং ৬৯০৩, সে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ২য় মেয়ে সাদিয়া (৭) সে ২য় শ্রেণির ছাত্রী।“আমি এই গ্রামে স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যের বাড়িতে কাজ করে দুই সন্তানের সাথে খুব যন্ত্রণা ও কষ্ট করে একটি ছোট কুঁড়েঘরে থাকতাম যেখানে জীবনযাত্রার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল” আখিনূর দুঃখভরা মনে বলেন।

তার স্বামী জীবিত অবস্থায় ১৫০-২০০ টাকা দৈনিক আয় করতেন এবং মাসে পনের দিনের বেশি নয়। আমি আমাদের সন্তানদের প্রতিদিন অন্তত তিনবার মানসম্পন্ন খাবার খাওয়াতে পারিনি। পরিবারে মাত্র ৬ শতক জমি রয়েছে যা বসতবাড়ি এলাকা। আবাদি কোন জমি ছিল না। আখিনূর এর পরিবারটি অতি দরিদ্র পরিবার হওয়াতে ২০২১ অর্থবছরে ওয়ার্ল্ড ভিশন এর আলট্রা-পোর গ্রাজুয়েশন মডেলের আওতাভুক্ত হয়।  পরে, তিনি বসতবাড়িতে সবজি বাগান করা, আত্মবিশ্বাস তৈরির সেশন এবং দুগ্ধবতী গাভী পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তাগাছা সাউথ এপি থেকে ইউপিজি প্রজেক্ট মডেলের মাধ্যমে একটি গাভী এবং বিভিন্ন সবজির বীজের সহায়তা পান।

বর্তমানে, তিনি তার বসতবাড়ি এলাকায় বছরব্যাপী সবজি চাষ করছেন, জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে মুরগি, কবুতর, ছাগল ও গাভী পালন করছেন। তিনি সবজি চাষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ মুক্তাগাছা সাউথ এপি থেকে বীজ সংগ্রহ করে সবজি চাষ শুরু করেন। প্রথম সঞ্চয়ের ৮০০.০০ টাকা দিয়ে ৫টি মুরগি পালন শুরু করেন। পরবর্তীতে মুরগি পালনের বাচ্চা থেকে বড় করে ১২ টি মুরগি বিক্রি করেন যার মূল্য ছিল টাকা ৩৫০০.০০। এখন তার আরও ১০ টি মুরগি আছে যার মূল্য ১৫০০.০০ টাকা। সেই সাথে তার বাড়িতে ১২টি কবুতর পালন করেন।

মুরগী, কবুতর ও সবজি বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করে। পরবর্তীতে স্থানীয় ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে তা দিয়ে কাজ করে মাসে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আয় করেন। তিনি মুক্তাগাছা সাউথ এপি হতে যে গাভীটি পেয়েছেন তা থেকে একটি বাছুর পেয়েছেন। এখন বাছুরসহ গরুর মূল্য ৭১,০০০.০০ টাকা। তার গাভীর দুধ, ডিম, কবুতরের বাচ্চা, সবজি বিক্রি করে গড়ে দৈনিক আয় এখন ২৫০.০০ টাকা। সম্প্রতি আখিনূর তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে ২টি ছাগল ক্রয় করেছেন। এছাড়া গাভীর দুধ, ডিম, সবজি বিক্রি করে সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে ৬ শতক জমি বন্ধক নিয়েছে।

এই বন্ধকী জমি থেকে যে ধান পায় তা দিয়ে তার অর্ধেক বছরের খাদ্যের সংস্থান হয়। তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা তাদের বসতবাড়ি এলাকায় চাষ করা সবজি খায়। তিনি অদূর ভবিষ্যতে ১০০-১৫০ মুরগি নিয়ে একটি মুরগি খামার করার স্বপ্ন দেখেন। তিনি মুক্তাগাছা সাউথ এপি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে, তিনি অতি দরিদ্র পরিবার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এসেছেন এবং কঠিন পরিস্থিতিতে তার পরিবারকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন প্রতিবেশী অনেকেই তাকে অনুসরণ করেন।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo