দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ সুপ্রীম কাের্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, জয় বাংলা শ্লােগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বহু ত্যাগ ও আন্দোলনে মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সম্মানিত স্হানে বসানাে হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বহু আলােচনা, সেমিনারে বক্তব্য হয় কিন্তু চর্চ্চা কম হয়। বঙ্গবন্ধুর চর্চ্চা নিয়ে আমাদের মধ্যে এখনও ঘাটতি রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারবো যদি তার রাষ্ট্রীয় দর্শন গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। তার জন্য আমাদের প্রথমেই ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনে ফিরে যেতে হবে। তিনি বলেছিলেন, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বাে ইনশাআল্লাহ। এই মুক্তির লক্ষ্যই আমাদের ভৌগলিক স্বাধীনতার প্রয়ােজন দেখা দেয়। স্বল্প সময়ে যে সংবিধান রচনা করছিলেন, তার প্রস্তাবনা পড়ার চেষ্টা করলেই বঙ্গবন্ধু কি ধরনের বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, কি ধরনের মুক্তির সংগ্রাম চেয়েছিলেন তা অনুভব করতে পারবাে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, দর্শন ও ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শকে হত্যাই শুধু করা হয়নি, দেশেকে পুর্ব পাকিস্তান বানানাের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল। এ দেশের স্বাধীনতা ২শ বছরর মুক্তির সংগ্রামের ফসল। সে কারনেই ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সংবিধানকে কাটাছেড়া করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনের কারণ বের করলেই অনেক কিছু বের হয়ে আসবে। ধর্ম নিরপেক্ষতার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর কি দর্শন ছিল তা আমরা সকলই জানি। কিন্তু তা চর্চ্চা করি না। তিনি তার প্রত্যেক ভাষনেই ইনশাআল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আমাদের চর্চ্চা ঘাটতি রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ধর্মকে কিভাবে দর্শন করেছেন তা আমরা চর্চ্চা করি না বলেই আজ ধর্ম নিয়ে এতাে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭২ সালে ৪ঠা নভেম্বর যে সংবিধান গৃহিত হয়েছিল সেখানে ধর্ম নিরপেক্ষতার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। ৭৫ এর পরবর্তী সংবিধানকে কাটাছেড়া করে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। আজ আমাদের আলােচনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চর্চ্চ বাড়িয়ে দিতে হবে। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠাের অবস্হানের কথা ঘাোষনা করেছিলেন। দুর্নীতি প্রতিরােধে আমাদের অবস্হান খুবই দুর্বল। তিনি ১৯৭৩-৭৪ সালের বক্তব্যগুলা স্পস্টভাবে উল্লখ করেছেন, এদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ দুর্ণীতি করে না। দুর্ণীতি করে ৫% শিক্ষিত মানুষ। আমাদের শপথ নিতে হবে বঙ্গবন্ধুর দর্শনের উপর ভিত্তি করে দুর্ণীতি, স্বজনপ্রীতি করবাে না। ঘুষখারদের সাহার্য্য করবাে না। তাই চাই আত্ম সমালােচনা, আত্ম উপলব্ধি। তবেই বাংলাদেশ আলােকিত হবে।
আজ ২৬ আগস্ট শনিবার সকালে দিনাজপুরের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী দিনাজপুর জেলা শাখার উদ্যাগে আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শােক দিবস উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু-আলােচনা ও চর্চ্চা শীর্ষক একক বক্ততা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কাের্টর আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম।
এর আগে বক্তব্য দেন ইতিহাসবিদ ১৯৭১ গণহত্যা, নির্যাতন, আর্কাইভ ও বঙ্গবন্ধু যাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন।
স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর জেলা কমিটির সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মােজাম্মেল বিশ্বাস। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান। এসময় উপস্হিত ছিলেন সাধারন সম্পাদক মুর্শিদা বিনতে রহমান,গণহত্যা যাদুঘরের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চৌধুরী শহীদ কাদেরসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা।
মন্তব্য ( ০)