• অর্থনীতি

স্পেশাল ম্যাংগো ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়, কমেছে আমের বুকিং  

  • অর্থনীতি
  • ১২ জুন, ২০২৩ ১৮:৩৩:৩১

ছবিঃ সিএনআই

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহণে এবারও আশানুরূপ সাড়া নেই আম ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থায় প্রতিদিনই লোকসান দিয়েই চলছে বিশেষ এই স্পেশাল ট্রেনটি। যাহারা অল্প পরিমাণে আম পাঠাচ্ছেন ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে তারাও সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে পড়ছেন ভোগান্তিতে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১৪ দিন ট্রেনটি চালাতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা হবে কি-না এনিয়েই তৈরী হয়েছে সংশয়।

গতকাল রোববার বিকালে সরেজমিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে ৬ টার সময়ও ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন এসে পৌঁছেনি স্টেশনে। অথচ ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল ৬ টার সময়। রাত ৮ টা পর্যন্ত স্টেশনের অপেক্ষা করছিল ট্রেনটি। যার ফলে স্টেশনের বারান্দায় আমের ক্যারেটে ভরা ছিলো। 

অন্যদিকে একই চিত্র রহনপুর স্টেশনেও। এই স্টেশন থেকে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি বিকাল ৪ টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ৪ টার সময় ট্রেনটি স্টেশনেই আসেনি। পরে ট্রেনটি আম বুকিং করে রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় সন্ধ্যা ৬ টা ৩৫ মিনিটে। 

রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ৮ জুন আম পরিবহন হয়েছে ৪ হাজার ৭৫৮ কেজি, আয় হয়েছে ৬ হাজার ২৯৫ টাকা, ৯ জুন ৪ হাজার ৪৮৫ কেজি আম পরিবহন করলে রেলওয়ের আয় হয় ৫ হাজার ৭২৮ টাকা, ১০ জুন ৩ হাজার ৬৮৯ কেজি আম পরিবহন করে আয় হয় ৪ হাজার ৮৬৬ টাকা, ১১ জুন ৩ হাজার ৪৯৯ কেজি ঢাকায় আম পরিবহন করে আয় হয় ৪ হাজার ৬২৬ টাকা।

আমনুরা রেলওয়ে স্টেশন থেকে- ৮ জুন আম পরিবহন হয়েছে ৯০০ কেজি, আয় হয়েছে ১ হাজার ১৮০ টাকা, ৯ জুন ৫২০ কেজি আম পরিবহন করলে রেলওয়ের আয় হয় ৬৯০ টাকা, ১০ জুন ১ হাজার ৮০ কেজি আম পরিবহন করে আয় হয় ১ হাজার ৪১১ টাকা, ১১ জুন ৬৬ কেজি ঢাকায় আম পরিবহন করে আয় হয় ১০৫ টাকা।

৮ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৭ হাজর ৮৮৭ কেজি আম বুকিং  হয়, এতে রাজস্ব আয় হয় ১০ হাজার ৫১৩ টাকা। ৯ জুন ৬ হাজার ৬৫৯ কেজি আম পরিবহন করলে রেলওয়ের আয় হয় ৮ হাজার ৮৭৮ টাকা। ১০ জুন ৫ হাজার ৫৬৬ কেজি আম পরিবহন করে আয় হয় ৭ হাজার ২৫২ টাকা, ১১ জুন ৫ হাজার ৫১৯ কেজি আম পরিবহন করে আয় হয় ৭ হাজার ৯৮ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্য বছর সিডিউল বিপর্যয় ছিল না ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের। কিন্তু এ বছর চারদিনের দুইদিনই সিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে। এমনকি উদ্বোধনের দিনও যথা সময়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি ট্রেনটি। এ জন্য আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। অনলাইন ভিত্তিক আম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মামুন আলী জানান, গত বছর কয়েকদিন ট্রেনে আম পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর একদিনও পাঠান নি। একে তো আম গ্রহণ করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রাহকদের অন্যদিকে এ বছর নাকি নির্ধারিত সময়ে ট্রেন পৌছাছে না। এ অবস্থায় চলতে থাকলে ট্রেন চালুর আসল উদ্দেশ্যই ব্যহত হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার বলেন, রহনপুর থেকে যথা সময়ে ছেড়ে না আসায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়তে দেরি হয়েছে।

২০২০ সালে প্রথমবামের মতো চালু হয় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। তিন বছরের পরিসংখ্যান বলছে ট্রেনটির লোকসানের পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা। পশ্চিম রেলওয়ের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চলাচল করেছে ৪৭ দিন। আম পরিবহন করেছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯ কেজি। এতে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৬ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চলাচল করেছে ৪৯ দিন। আম পরিবহন করেছে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ কেজি। এতে আয় হয়েছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সর্বশেষ গতবছর ২০২২ সালে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৮ কেজি। এতে আয় হয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ১৭৪ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ ৪০ টাকা।

গেল তিন বছরে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন থেকে আয় হয়েছে ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৬৩৮ টাকা। আর ব্যয় করেছে ১ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। যা দিন শেষে রেলের লোকসান ৮৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬২ টাকা।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, আমরা ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটিকে সেবা হিসেবেই দেখতে চাই। এটাতে লাভ নাকি লস হলো তা বিবেচ্য বিষয় নয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই চার বছর ধরে চলছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo