নিউজ ডেস্ক:কয়েকদিন টানা দাম বাড়ার পর এখন টানা দরপতনের মধ্যে পড়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের মতো দ্বিতীয় কার্যদিবসেইও প্রায় সবকটি বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম কমেছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক শেয়ারবাজারে।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে কমেছে তার থেকে বেশি। সেইসঙ্গে ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে, সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে।
দুই বাজারে লেনদেনের দুই চিত্র থাকলেও উভয় বাজারে প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে। অবশ্য বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক দুই বাজারেই কমেছে। আর শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়া বা কমার থেকে দুই বাজারেই দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি রয়েছে।
এ দিন শেয়ারবাজার লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে, লেনদেনের সময় আধাঘণ্টা না গড়াতেই একের পর এক বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম কমতে থাকে।
ধীরে ধীরে বিমা খাতের দরপতনের হাওয়া লাগতে থাকে অন্যান্য খাতের ওপরও। ফলে লেনদেনের একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৬ পয়েন্ট কমে যায়। তবে, শেষঘণ্টায় এসে কিছু বড় মূলধনের দরপতনের মাত্রা কমে। অবশ্য এরপরও বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম কমার ধারা অব্যাহত থাকে।
বড় মূলধনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় পতনের হাত থেকে কোনো রকমে রক্ষা পায় প্রধান মূল্যসূচক। কিন্তু বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম গড়পড়তা কমে যাওয়ায় দিনের লেনদেন শেষে দাম কমার তালিকায় বড় হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৭টির এবং ১৭৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে, বিমা খাতের মাত্র ৬টি কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ৪৫টির কমেছে।
এর আগে গত সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দাপট দেখায় বিমাখাত। ফলে এক সপ্তাহেই একাধিক বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম ৩০ শতাংশের ওপরে বাড়ে। এমনকি ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাতটি স্থানই দখল করেছে বিমা খাতের কোম্পানি। আর শুধু ‘এ’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় নিলে শীর্ষ দশটি স্থানই বিমা কোম্পানি দখলে ছিল।
গত সপ্তাহে বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয় মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স এবং গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স। এর মধ্যে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম বাড়ে ৪৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম বাড়ে ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং ৩২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ দাম বাড়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের। আজ এ তিনটি কোম্পানিরই দরপতন হয়েছে।
বিমা খাতে বড় দরপতন হলেও তা ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকের খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৩০ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৯০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিকে মূল্যসূচকের মিশ্র প্রবণতার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭০৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮১১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ১০৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের ৩৫ কোটি ৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, মুন্নু সিরামিকস, জেমিনি সি ফুড, সিমটেক্স, লিগাসি ফুটওয়্যার ও আমরা নেটওয়ার্ক।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২০৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬২টির এবং ৮৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
মন্তব্য ( ০)