• বিশেষ প্রতিবেদন

যশোরের মাটিতে চাষ হচ্ছে সৌদির আজওয়া খেজুর

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১১ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:১১:৫৫

ফাইল ছবি

মোঃ ওসমান গনি, বেনাপোল (যশোর): যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের বেড়ারু পানি গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন (৫০)। পেশায় তিনি দিনমজুর ছিলেন। ৪ বছর আগে ইউটিউবে  সৌদির আজওয়া খেজুর চাষ পদ্ধতি দেখে খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর এক নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে কিছু সংখ্যাক সৌদির আজওয়া খেজুর বীচ সংগ্রহ করেন তিনি। পরীক্ষামূলক ভাবে খেজুরের বীজ নিজের ২ বিঘা জমিতে রোপণ করেন। গাছ বেঁচে যাওয়ায় নিজের জমিতে সৌদির খেজুরের বানিজ্যিক চাষের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বাবুল হোসেন। পরবর্তীতে পরীক্ষামূলক চাষের পরিধিও বাড়ান। বর্তমানে তিনি তার লিজ নেওয়া দুই বিঘা জমিতে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে পাঁচ শতাধিক খেজুর গাছ রোপণ করেছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি গাছে ফল আসতেও শুরু করেছে। জেলার বাহিরের ব্যবসায়ীদের কাছে ফলন ধরা এক একটি খেজুর গাছের দাম উঠেছে এক লক্ষ টাকা করে।

কৃষক বাবুল হোসেন জানান, প্রথমে ইউটিউবে সৌদির খেজুর চাষ পদ্ধতি দেখি। এরপর সৌদি প্রবাসী আমার এক নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে সৌদির কিছু আজওয়া খেজুর সংগ্রহ করি। লিজ নেওয়া জমিতে খেজুরগুলোর বীজ পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করি। প্রথমদিকে টাকা খরচা করে লিজ নেওয়া জমিতে সৌদির খেজুরের বীজ বুনতে দেখে এলাকার লোকজন পাগল বলে উপহাস করতো। অনেকে বলতো 'টাকা জলে দিচ্ছি'। এরপর দিন যত যায় তত খেজুর গাছের চারা বড় হতে থাকে, পরবর্তীতে আমি  আরও চারশতাধিক বীজ রোপন করি। সেগুলোও আশানুরূপ ভাবে বাড়তে থাকে। বর্তমানে চার বছর আগের রোপন করা কয়েকটি গাছে ফল আসতে শুরু করেছে। 

সেজন্য সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ যদি এগিয়ে এসে সহায়তা করে তবে যশোরের মাটিতে খেজুরের ব্যাপক চাষ করা সম্ভব। তিনি দাবি করেন আজওয়া খেজুর গাছের পরাগায়ণ কৃষি বিভাগের থেকে করার কথা, তবে কৃষি বিভাগ তা করেনি, ফলে গাছের মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে তাকেই পরাগায়ণ করতে হচ্ছে। 

কৃষক বাবুল হোসেনের প্রতিবেশী মহাসিন আলম বলেন, 'বাবুল হোসেন যখন প্রথম সৌদি কেজুরের বীজ রোপন করে তখন গ্রামের মানুষেরা অনেক উপহাস করেছে। তবে তিনি আজ সফল, তার খেজুর গাছে খেজুর আসতে শুরু করেছে। কৃষি বিভাগ একটু নজর দিলে তার পক্ষে খেজুর চাষ আরও সহজলভ্য হবে।'

নাভারণের বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন, পার্শবর্তী উপজেলায় আজুয়া খেজুরের চাষ হচ্ছে শুনে দেখতে এসেছি। আসলে যশোর জেলা খেজুর গাছের জেলা, এ জেলায় সৌদির খেজুর চাষ করা সম্ভব যদি সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা সহায়তা করেন এবং কৃষকদের পাশে থাকেন। এ ছাড়া গ্রামের বেকার যুবকেরা এ চাষে ঝুকলে যশোরের মাটিতে সৌদির আজুয়া খেজুরের ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি গ্রামের এক শ্রেনীর মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। 

এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল- মামুন বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তারা বাবুল হোসেনের আজুয়া খেজুরের বাগান পরিদর্শন করেছে। আমরা তাকে সার্বিক সহোযোগিতা করার জন্য চেষ্টা করবো।

বাবুল হোসেনের দেখাদেখি অনেকেই স্বপ্ন বুনছেন যশোরের মাটিতে খেজুরের বানিজ্যিক চাষ করার। তবে ব্যাংক এনজিও এ খাতে লোন দিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ হস্তক্ষেপ করলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরণের ভুমিকা রাখবে এ খেজুর চাষ, এমনটাই মনে করছেন কৃষি খাতে জড়িতরা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo