জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, কক্সবাজার : টেকনাফে পাহাড়ি দূর্বৃত্তের কবল থেকে ১০ম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্র আবদুল আজিজকে রক্ষা করে তার সাহসী বাবা মোহাম্মদ হোছন। অপর এক অপহরনের ঘটনায় ৩ লাখ টাকা মুক্তিপনে ৩ যুবককে মুক্তি দিয়েছে দূর্বৃত্তরা।
দমদমিয়া এলাকার ৩ যুবক রিদুয়ান সবুজ, মোস্তফা ও রহমত উল্লাহকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকায় মুক্তিপনে রবিবার (২৬ মার্চ) বিকাল ৩ টারদিকে মুক্তি দেয়। মুক্তিপন নেওয়ার জন্য তাদেরকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের শরীরে মারধরের জখম রয়েছে। এর আগে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ চেয়েছিল দূর্বৃত্তরা। গত ২২ মার্চ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া ন্যাচার পার্ক এলাকায় ৩ জন যুবককে অপহরণ করে দূর্বৃত্তরা।
এছাড়া গত ২৩ মার্চ দিনগত রাত ৯ টার দিকে মোহাম্মদ হোসেন"র বাড়িতে অপহরণ প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ হোছন ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো মাগরিবের পর থেকে পড়ার টেবিলে স্কুলের পড়া শিখছিলো আব্দুল আজিজ। পড়া শেষ করে রাত ৯ টার দিকে প্রাকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির উঠানে বের হলে হঠাৎ মুখে কালো কাপড় পরা স্বশস্ত্র ৪-৫ জন দূর্বৃত্ত তাকে ধরে পেলে। এসময় তার চিৎকারে বাবা হোছন ঘর থেকে দ্রত বের হলে তাকেও ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু সাহসী হোছন সু-কৌশলে দুই জন দূর্বৃত্তের লম্বা বন্ধুক ধরে টানদিলে ছেলে আজিকে ছেড়ে দেয় এবং আজিজ দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ে। এসময় অপর দূর্বৃত্তের বন্দুকের
আঘাতে আজিজের হাত ভেঙ্গে যায়। এদিকে দূর্বৃত্তের সাথে ধস্তাধস্তি ও তাদের বাড়ির সকলের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে দূর্বৃত্তের দল হোছনকে এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তাকে ফেলে পাহাড়ের দিকে চলে যায় দূর্বৃত্তরা।
এলাকাবাসীরা আরো জানায়, ১৫-২০ জনের দূর্বৃত্তের দল পাহাড়ে অবস্থান করছে দীর্ঘ দিন ধরে। সেখানে বেশিরভাগই রোহিঙ্গা। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ চরম আতংকে দিনাতিপাত করছে।
১৯ মার্চ জাদিমুড়াস্থ জুম্মাপাড়ার একজন কৃষক কে অপহরণ করেছে দূর্বৃত্তরা। তাদের মধ্যে কৃষক ছৈয়দ উল্লাহ ৫ দিন পর ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসে। এখবর সামাজিক মাধ্যমে বেশ চাউর হলেও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্টদের।
পবিত্র রমজান মাসে অপহরণ আতংকে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ায় (২৬ মার্চ) রোববার স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. আলী স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এসময় তিনি সম্মিলিত ভাবে দূর্বৃত্তের মোকাবেলা করার সাহস যোগান এবং রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য ৪ টি দলে বিভক্ত করে পাহারা দল গঠন করেন।
মোহাম্মদ আলী মেম্বার জানান, রোহিঙ্গা দূর্বৃত্তরা পাশের পাহাড়ে অবস্থান করে শান্ত এলাকাকে অশান্ত করে তুলছে। যে কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে। তারা স্বশস্ত্র হওয়ায় ভয়ে রয়েছে এলাকাবাসী। তাদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবী জানান।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আবদুল হালিম জানান, " এ ধরনের অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে বেশ কজন অপহরণ চক্রের সদস্যকে আটক করা হয়েছে। "
উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ উপজেলার বাহারছড়ার ইউপির জাহাজপুরা এলাকা থেকে ৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। তারা হলেন,কলেজ শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন (১৭), রশিদ আলম (২৬), জানে আলম, (৪৫),জাফর আলম (৪০),জাফরুলইসলাম (৩০),ফজল করিম (৩০) ও আরিফ উল্লাহ (৩০) । তারা সকলেই বাহারছড়া ইউপির পূর্ব মাঠ পাড়া এলাকার বাসিন্দা। পুলিশি অভিযান ও
পৃথক মুক্তিপনের মাধ্যমে তারাও ফিরে আসে।
মন্তব্য ( ১)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
রোহিঙ্গা মুক্ত বাংলাদেশ চাই।