• বিশেষ প্রতিবেদন

মিয়ানমারের বুথিডং কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে  ২ শতাধিক বাংলাদেশী! 

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ১১ মার্চ, ২০২৩ ১৩:১৮:৫৬

প্রতীকী ছবি

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, কক্সবাজার  : মিয়ানমারের বুথিডং কারাগারে আটকে আছে অন্তত দু" বাংলাদেশী। তারা বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ  বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ শিকার করে নাফনদী হয়ে ঘরে ফেরার সময় মিয়ানমার সিমান্ত পুলিশ ধরে নিয়ে সাজা দিয়েছে এমন যেমন রয়েছে।

আবার সাগর পথে মালয়েশিয়াগামী, মিয়ানমারে মাদক পাচারকারীদের পণ হিসেবে গিয়ে পরবর্তী সময়ে সেখানে সরকারি বাহিনীর হাতে আটক হয়ে কারাদণ্ড ভোগ করছে এমনও রয়েছে। সম্প্রতি ( ৫ মার্চ) বুথিডং কারাগার থেকে পাঠানো একটি চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এই প্রতিবেদককে পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,, আমরা এখানে মিয়ানমার বুথিডং কারাগারে বন্দি আছি। আমাদের কে সাগর থেকে ধরে নিয়ে আসছে, নিয়ে আসার পর বর্ডার ক্রস বলে ৫ বছর জেল মারছে, কিন্তু আইনগত ভাবে আছে বর্ডার ক্রস ৬ মাস। এই বিচারটা আমরা আপনার কাছ থেকে চাই।

এখানে মিয়ানমার বুথিডং জেল হাজতে ৯২ জনের সাঁজা শেষ হয়ছে। সাঁজা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে প্রায় ২ বছর হয়ে গেছে আর সাঁজা প্রাপ্ত আছে ৪৪ জন এখানে  টেকনাফ বড়ইতলীর ৫ জন, উখিয়া থানার জালিয়া পালং ইউনিয়ন মাদার বনিয়ার ৩ জন, মহেশখালী উপজেলার  কুতুবজুম তাজিয়া খাটার ৩ জন,  সাবরাং বাহার ছড়া ১ নং ওয়ার্ড ১ জন, বান্দরবন জেলার ২ নং কোহালং ইউনিয়ন এর কিবুক পাড়ার ২ জন, রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানার ১ নং বেতবনিয়া ইউনিয়ন ৯ নং ওয়ার্ডের কালা কাজী পাড়ার ১ জন, বান্দরবন জেলা থেকে ৯ জন, টেকনাফের হোয়াইক্যং তুলাতলী হারুন গুনার ২ জন (মহিলা মেম্বার ছেনুয়ারার বাড়ীর পার্শ্বে),  হোয়াইক্যং নয়া বাজার ৭ নং ওয়ার্ডের নুরুল ইসলামের ছেলে আব্দু রহিম (মাষ্টার ফরিদ এর বাড়ীর পার্শ্বে),  সাবারং ইউনিয়ন শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার ৯ নং ওয়ার্ডের ১৪ জন হচ্ছে  নুরুল কবিরের ছেলে মোহাম্মদ হেলাল, হোসেন আলীর ছেলে জাফর আলম,আব্দু শুক্কুরের ছেলে মোহাম্মদ ইসহাক, লেড়ু মিয়ার ছেলে  মো: জসিম উদ্দীন, মোহাম্মদ মমতাজের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল, পেঠান আলীর ছেলে শবি রহমান, মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে নূর কালাম,ফরিদ আলমের ছেলে আলী আকবর, আব্দু শুক্কুরের ছেলে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আলী হোসেনের ছেলে সোলতান আহমদ ও রশিদ আহমদ (ক্যাম্প পাড়া), কাদির হোসেনের ছেলে মহি উদ্দীন, মৃত মোহাম্মদ আলমের ছেলে মোহাম্মদ রফিক (কচুবনিয়া) ও  মমতাজ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোছাইন ( মধ্যম কুতুবদিয়া)। 

মিয়ানমারের আটক বাংলাদেশী জেলেদের স্বজন টেকনাফের  সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার নুরুল কবির, আবদুল গফুর ও মোহাম্মদ আয়াজ জানান, " মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) গত ২০২২ সালের ১৫ মার্চ জীবিকার তাগিদে সাগরে মাছ ধরতে গেলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছাকাছি সাগরের পূর্ব দক্ষিণ দিকে বাংলাদেশের জল সিমানায় মাছ ধরারত অবস্থায় ৪ টি ফিশং বোট ও জাল সহ ১৮ জন বাংলাদেশী মাঝিমাল্লাকে মিয়ানমারের নৌবাহিনী  ধরে নিয়ে যায়। 

উক্ত ১৮ জন মাঝিমাল্লার মধ্যে ৪ জন অপ্রপ্ত বয়স্ক থাকার কারণে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ১৪ জনকে বিভিন্ন মিয়াদে সাজা দিয়ে মিয়ারমারের বুথিডং  কারাগারে আটক রাখা হয়।  উক্ত আটককৃত মাঝিমাল্লার উপারজিত অর্থ দিয়ে ঘর সংসার চলে। তাদের  একমাত্র আয়ের উৎস সাগরে মাছ ধরে সংসার চালানো। এসব পরিবার গুলো খুব অসহায় ও দিনে এনে দিনে খাওয়া প্রকৃতের লোক। সকলের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি মিয়ানমারের বুটিডং নামক কারাগারের জেল হাজতে আটক থাকার কারণে  অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। কেউ কেউ  অসুস্থ অবস্থায় দিন যাপন করিতেছি। 

এক বছর ধরে সন্তান হারা মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজন ও ছেলে মেয়েরা, এবং পরিবারের অন্যান্য ব্যাক্তি বর্গ তাহাদের অনুপস্থিতে প্রায় অর্ধ পাগল, এমতা অবস্থায় তাহাদের অনুপস্থিতে জীবন নির্বাহ করা খুবই কঠিন ও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাদেরকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদনও করেছেন তারা। 

 এ প্রসংগে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান," নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশী জেলেদের ধরে নিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনা অমানবিক। এ ধরনের ঘটনা প্রতিবেশী দু" দেশের মধ্যে সম্পর্ক বিনষ্ট করে। এসব বিষয়ে সীমান্ত সম্মেলন গুলোতে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। "

এদিকে গত ২০২২ সালের ২১ মার্চ আবেদুজ্জামান নামের এক জেলেকেও নাফনদী থেকে ধরে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তার মা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়ার মাহমুদা খাতুন।  তিনি তার ছেলেকে ফেরত আনার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন। তিনি তার ছেলের বরাত দিয়ে জানান, মিয়ানমারের বুথিডং কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে হচ্ছে তার ছেলে সহ দু শতাধিক বাংলাদেশীকে। দু-বেলা শুধই ভাত দেওয়া হয় ওখানে।আর অন্যান্য সব খাবার কিনে খেতে হয়। তাই মাসে মাসে আটক বাংলাদেশীদের জন্য পরিবার থেকেও উল্টো খরচ জোগান দিতে হয় বলেও জানান তিনি। টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ জানান," আমার  এলাকার আবেদুজ্জামানসহ বেশ কজন বাংলাদেশী জেলে মিয়ানমার কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। তাদেরকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। "

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান বলেন, " মিয়ানমারের আটক বাংলাদেশী জেলেদের বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয়  ব্যবস্হা নেওয়া হয়েছে। "

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo