• বিশেষ প্রতিবেদন

পাবনায় দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র ‘স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট’

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩ ১৬:১৯:৩৬

ছবিঃ সিএনআই

তোফাজ্জল হোসেন বাবু,পাবনাঃ একদিকে প্রবাহমান পদ্ম নদী। তার ওপর দিয়ে ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ রেলসেতু আর লালনশাহ সেতু মিলে নান্দনিক সৌন্দর্য। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ইপিজেডসহ দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সদর দপ্তর। আর এগুলোকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে নানা সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র ‘স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট’।

বিদেশিদের বিনোদন, আবাসন, মনোমুগ্ধকর অবসর সময় কাটানোর অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত দু’বছরেই অবস্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন নানা বয়সী নানা মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে এই নান্দনিক রিসোর্টটি।

ঢাকা থেকে মাত্র ১৮৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই ধরা দেবে অভিজাত ও আধুনিকমানের এই রিসোর্টটি। পাবনা জেলা শহর থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার আর জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটারের দূরত্বে অবস্থিত রিসোর্টটি। রিসোর্ট থেকে ঈশ্বরদীর উল্লেখ্যযোগ্য সব স্থান দর্শনের জন্য রয়েছে সুন্দর ও আরামদায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রিক বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে রাশিয়ান, বেলারুশ, উজবেকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের সহস্রাধিক নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। রূপপুর গ্রিনসিটি, রাশিয়ান পল্লীর পাশাপাশি পাবনার কয়েকটি রিসোর্ট ও ভিআইপি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন তারা। এগুলোর মধ্যে দৃষ্টি কেড়েছে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট।  

শিল্পপতি খাইরুল গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খাইরুল ইসলাম ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের যাত্রা শুরু করেন। ১০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই রিসোর্টটি। দেশি বিদেশি বিভিন্ন নামিদামি হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্টের সুযোগ সুবিধা এই রিসোর্টেও সন্নিবেশ করতে কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে।

স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের প্রবেশ মুখেই রয়েছে নান্দনিক কারুকার্য। ভেতরে ঢুকতেই বালি সিমেন্টের তৈরি জাতীয় ফল কাঠাল, নান্দনিক ও শৈল্পিক আল্পনা, সুবিশাল দাবার কোট দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। প্রথম দর্শনেই চোখে পড়ে নানা প্রজাতির রঙ-বেরঙেয়ের ফুল। 

বিদেশিদের মনোরঞ্জন, বিনোদন, অবসর সময় কাটানো, সাঁতার কাটা, সুইমিংসহ নানা সুযোগ সুবিধার পৃথক ও নিরাপদ ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম মাফিক বিদেশিদের বাইরে দেশীয় মানুষ এটি ব্যবহার করতে পারছেন। সুইমিংপুলে যেতে যেতে লাল-সবুজের বাসরলতা ফুলের ছোঁয়া আপনাকে নিয়ে যাবে রোমাঞ্চকর এক জগতে। পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঘ, জিরাপ, উঠপাখি, পরি, ঝরনা, পাহাড়ি ঝরনা, ফুলের লাভ রিঅ্যাক্ট, পুষ্পকুঞ্জ, গেমিং জোন। 

গোল পৃথিবীর ওপর বসে আছে জাতীয় পাখি দোয়েল। সিংহ মামা যেন গর্জন করছে। উড়ে যায় শঙ্ক চিল। ভালোবাসার মূর্তপ্রতীক নারী পুরুষের প্রতিকৃতি। জলপরি জল ছড়ানো, গ্রামিন নারীদের কলসি কাঁখে অসাধারণ ও মনোমুগ্ধকর শৈল্পিক চিত্রায়ন, শিশুদের পড়ামুখী করতে কার্টুনের বইপড়া, গিটার হাতে গিরারিস্ট, শিশুদের গেমিং জোনে নানা রাইড। করা হয়েছে ডলফিন ও সিংহ চত্বর। হনুমান, কুমির, নানা প্রজাতির পশুপাখি, সাপ দিয়ে বৃক্ষ সাজানো।

সুবিশাল মনোমুগ্ধকর রিসোর্টে রয়েছে নারী পুরুষের জন্য পৃথক বাথরুম ব্যবস্থা। আছে প্রেমিক যুগলদের জন্য আলাদা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লতাপাতা ঘেরা বসবার ব্যবস্থা। সুসজ্জিত আবাসিক রাত্রি যাপনসহ সব সুযোগ-সুবিধা। বুফে রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাবে নানা রকমের বিভিন্ন স্বাদের দেশি-বিদেশি খাবার। নান্দনিক পার্ক এরিয়ার মধ্যে রয়েছে হানিসুই রাইড, সোয়ান রাইড, কিডস জোন, সুইমিং পুল, পিকনিক স্পট।

অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেফ দিয়ে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার প্রস্তুত এবং প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়। বাংলা, ইন্ডিয়ান, রাশিয়ান, কন্টিনেন্টাল ও চাইনিজের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। সহস্রাধিক মানুষ একসঙ্গে এই রিসোর্ট কাম পার্কে তাদের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠান করতে পারেন।

রিসোর্টটি প্রতিষ্ঠার পর বিদেশি বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিসহ দেশীয় সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন করপোরেট হাউজসহ নানা প্রতিষ্ঠানের পদচারণায় মুখরিত এই প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ভারতীয় হাই কমিশনার, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা পরিদর্শন করেছেন। তারা পরিদর্শন বইতে তাদের অভিমত প্রকাশে সন্তোষ প্রকাশ করেন।      

স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট পরিদর্শনকালে কথা হয় রাশিয়ান, উজবেকিস্তান, বেলারুশসহ কয়েকটি দেশের নারী ও পুরুষ নাগরিকদের সঙ্গে। রাশিয়ান নাগরিক আলেক্সি বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে ভেবেছিলাম আরামদায়ক বিনোদন, অবসর সময় কাটানো এবং রাত্রিযাপনে সমস্যা হবে। কিন্তু আমাদের সব চাহিদা প্রায় পূর্ণ করেছে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট।’

রাশিয়ান নারী নাগরিক নাতালিয়া বলেন, ‘বার ও স্পা ছাড়া সব সুবিধা রয়েছে। ভালো লাগছে অবসর সময় কাটাতে পারছি। এত সুন্দর পরিবেশ সেটা ভাবাই যায় না।’

উজবেকিস্তান নাগরিক আরতুন বলেন, ‘আমরা প্রথমে এই রিসোর্টে থাকতাম। এখন রূপপুর গ্রিনসিটিতে থাকি। কিন্তু আনন্দ, বিনোদন, অবসর সময় কাটাতে এখানে আসি। সব ভালো লাগে। কিন্তু স্পা আর বার না থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’

বেড়াতে আসা দর্শনার্থী কুষ্টিয়ার আসমা খাতুন, সাগর হোসেন, লালপুরের আব্দুল মমিন, বেড়ার শিশির কবীর, সিরাজগঞ্জের সালমা, সুমিতা, ঝর্ণা, পিপুল ইসলাম, মোসাব্বির ও রাজু, পাবনা শহর থেকে আসা হাফিজুর রহমান, মিরাজুল হক, জুয়েল আহমেদসহ বেশ কিছু দর্শনার্থী জানান, এখানে বেড়াতে এসে তারা অভিভূত। সবকিছু তাদের ভালো লেগেছে।

রস্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুনেম তাজওয়ার অহিন বলেন, ‘এই রিসোর্ট একটি থ্রি স্টার হোটেল। এখানে সুন্দর ও বিলাসবহুল আবাসিক কক্ষ রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প ও ইপিজেডে কর্মরত বিদেশি নাগরিকসহ ভ্রমণপিপাসু অনেক মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। পাবনার মধ্যে একমাত্র আমাদের এখানেই বুফে রেস্টুরেন্ট রয়েছে। মাসে অন্তত চারবার বুফে করে থাকি। এ ছাড়ও যেকোনো সময় অতিথিরা এসে বুফে বাদেও আলাদা খাবার অর্ডার করতে পারেন। রাশিয়ান, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, বাঙালি সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা আমাদের কাছে আছে। রয়েছে পিকনিক স্পট। যে কেউ চাইলে এখানে পিকনিক করতে পারেন।’

স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের স্বপ্নদ্রষ্টা আলহাজ্ব খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই বছরের ব্যবধানে যতটুকু করতে পেরেছি তাতেই ব্যাপক সাড়া মিলছে। দেশ-বিদেশে আমার এই রিসোর্টের সুনাম ছড়িয়েছে। আমি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করছি। বিভিন্ন দেশের অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা দেখে এসে দর্শনার্থীদের জন্য সেটি করার চেষ্টা করছি। এখনো অনেক কাজ চলছে। তবে, বিদেশিরা এখানে বেশি আসেন। তারা খুব করে চাইছেন একটি বার স্থাপন করতে। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। আমি আশাবাদী দেশের প্রথম সারির একটি রিসোর্ট বিনোদনপ্রেমী মানুষের জন্য করতে পারবো।’

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo