• বিশেষ প্রতিবেদন

অবৈধ মোবাইল ফোন বিক্রয়কারীদের দখলে বগুড়ার মোবাইল মার্কেটগুলো

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩ ২১:১৫:২৭

ফাইল ছবি

সঞ্জু রায়ঃ বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মোবাইল যা দিনমজুর থেকে কোটিপতি সকলের নিত্যদিনের জীবন-জীবিকার সাথেও সম্পৃক্ত। সাধারণ মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠা এই মোবাইল ফোনের ক্রেতাসাধারণের সুবিধার্থে তাইতো উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বগুড়ায় গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বড় মোবাইল ব্যবসার ক্ষেত্র। কিন্তু বিগত ৫/৬ মাস যাবত আনঅফিসিয়াল বা ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আনা মোবাইল বিক্রেতাদের দাপটে প্রায় দিনভর ক্রেতাশূণ্যই থাকছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের অনেকে। এতে করে একটি অসাধু মহল মোটাঅংকের মুনাফা অর্জন করলেও লোকসানে পরেছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এবং সরকার হারাচ্ছে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব।


বগুড়া জেলা মোবাইল ব্যবসায়ী সমিতি ও ডিলার সমিতির তথ্য বলছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পরও বিশেষ উৎসব পার্বন ছাড়াই প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার মোবাইল সেট বিক্রি হয়েছে বগুড়ায়। যেখান থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১২ কোটি টাকারও বেশী। মাস ছয়েক ধরে অর্ধেকের নীচে নেমে এসেছে বেচাকেনা। এজন্য ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বাজারে নিয়ে আসা আনঅফিসয়াল মোবাইল সেটকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
মোবাইল মার্কেটের এই বেহাল দশার কথা উল্লেখ করে টিএমএসএস মহিলা মার্কেটের মোবাইল ব্যবসায়ী মোঃ ডাবলু জানান, লক্ষ লক্ষ পুঁজি খাঁটিয়ে এখন নুন্যতম লাভের মুখ দেখাও যেন কষ্টসাধ্য হয়ে পরেছে এই ব্যবসাতে। তার মধ্যে দোকান ভাড়া, কর্মচারির খরচসহ আনুষাঙ্গিক খরচ তো আছেই তবে আগে এমন অবস্থা কখনোই ছিলোনা। বর্তমান বগুড়ার মোবাইল মার্কেট এমন হয়েছে যে এমনও দিন যাচ্ছে যেদিন তারা একটি মোবাইলও বিক্রি করতে পারছেন না।

এদিকে মোবাইল ব্যবসাতে হঠাৎ এই প্রতিবন্ধকতার মূল কারণ হিসেবে আনঅফিসিয়াল ফোন বা লাগেজ ফোনকেই দায়ী করে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ মুকুল জানান, প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই ব্যবসায় বৈধপথে এখন লাভের মুখ দেখা অমাবশ্যার চাঁদের মতো। মানুষ যখন অল্প টাকায় লাগেজ ফোন পেয়ে যাচ্ছে তখন তাদের কাছে আর ক্রেতারা আসবে কেন? পরিস্থিতি এমন যে নিজেদের সঞ্চয় ভেঙ্গে তাদের চলতে হচ্ছে এমতাবস্থায় সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান তিনি।

মোবাইল ডিলার ও ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতাদের দাবী, ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসা আনঅফিসিয়াল লাগেজ মোবাইল ফোন কম দামে বিক্রি করছে বগুড়ার  একটি অসাধু মোবাইল ফোন বিক্রেতা চক্র। ফলে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে নিয়ে আসা বৈধ মোবাইল ফোনের বাজারে দেখা দিয়েছে ধ্বস। তাদের দাবী- বগুড়ায় প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার পিস বাটন ফোন বিক্রি হলেও এখন ১৮ থেকে ২০ হাজারে নেমে এসেছে। অন্যদিকে প্রতিমাসে ২০ থেকে ২২ হাজার পিস স্মার্ট ফোনের জায়গায় এখন বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার পিস।

এ বিষয়ে জেলা মোবাইল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখর রায় এবং জেলা ডিলার সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম আসাফুদ্দোজা কার্জন এর সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রতি মাসে বগুড়ায় যেখানে কেনাবেচা হতো ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার মোবাইল। সেই কেনাবেচা নেমে এসেছে ১৫ থেকে ১৮ কোটিতে। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা যেমন লাটে ওঠার দশা তেমনি সরকারও হারাচ্ছে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব। যারা ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বাজারে মোবাইল আনছে তাদের কারণেই দামের একটা বিশাল তারতম্য হচ্ছে সাধারণ মার্কেটে। যেসব ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে মোবাইল আনছে তারা তো আর সেই লাগেজ ফোনের দামে সেট বিক্রি করতে পারবে না। তাই সেই অসাধু মোবাইল ফোন বিক্রয়কারী চক্রকে আইনের আওতায় এনে যখন সকল স্থানে মোবাইলের দাম সমন্বয় হবে তখন মার্কেটের এই বেহাল অবস্থার উন্নতি হবে। তখন ক্রেতারা কোনরকম ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি ছাড়া সেই লাগেজ ফোনও আর নিতে চাইবে না তখন আবারো সুদিন ফিরবে ব্যবসায়ীদের। তবে তারা এটিও আক্ষেপ করে বলেন, আনঅফিসিয়াল বা অবৈধ এই মোবাইলের বিষয়ে বারংবার সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অবগত করলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এতে করে  সেই চক্রের দাপটে তারা ব্যবসায়িকভাবে দিন দিন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যা পুষিয়ে নেয়া অনেক কঠিন হবে তাদের  জন্যে।

এদিকে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলামের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, অল্প কিছুদিন হলে তিনি বগুড়ায় জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেছেন তাই উক্ত বিষয়টি তিনি অবগত ছিলেন না। তবে সাধারণ ব্যবসায়ীরা যারা সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করছে তাদের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণে অতিদ্রুত সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন তিনি। 

 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo