• বিশেষ প্রতিবেদন

সরিষার হলুদ ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৪:০৯:৫৯

ছবিঃ সিএনআই

মোঃ ইমরান মাহমুদ, জামালপুর:  জামালপুর জেলার বিভিন্ন মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। অগ্রহায়ণের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো জেলার প্রতিটি মাঠজুড়ে কেবল চোখে পড়েছে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। এই শীতের শিশির ভেজা সকালে সরিষার সবুজ গাছের ফুলগুলো শীতের সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের দৃশ্য। দেখে যেন মনে হচ্ছে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে গায়ে হলুদ বরণ সেজে।

বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) জামালপুর জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গেলে এমনি চিত্র দেখা যায়। চারপাশে শুধু সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠগুলো। সবুজ শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যেমনি প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। কখনো সবুজ, কখনো সোনালী, কখনো বা হলুদ। এমনি ফসলের মাঠ পরিবর্তনের এ পর্যায়ে হলুদ সরিষা ফুলের চাদরে ঢাকা পড়ছে এ জেলার ফসলের মাঠ।

সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোঁআশ ও বেলে- দোঁআশ মাটিতে বিশেষ করে নদী বিধৌত এলাকায়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় এ অঞ্চলে সরিষা বেশি আবাদ হয়। বর্তমানে সরিষা একটি লাভজনক ফসলে পরিনত হওয়ায় ধীরে ধীরে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গাঢ় হলুদ বর্ণের সরিষার ফুলে ফুলে মৌ মাছিরা মধু সংগ্রহের জন্য গুন গুন করছে। চলছে মধু আহরনের পালা। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। শীতের শিশির সিক্ত মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। মানুষের মনকে পুলকিত করছে। সরিষার ক্ষেতগুলো দেখে মনে হয় কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। হেমন্তকালের মাঠে মাঠে সবুজের অপার সমারোহ এখন আর নেই। দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে সরিষা ও শীতকালীন সবজি মাঠের শোভা বর্ধন করছে। গত কয়েক বছর যাবত এ জেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে।

ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের ইনদুল্লাবাড়ী গ্রামের সরিষা চাষী করিম মিয়া জানায়, গত বছর প্রতিমন সরিষা ১৮-১৯ শত টাকায় বিক্রি হয়েছে। তারা আরও জানান, সরিষার চাষ পদ্ধতি খুব সহজ ও কম খরচে অল্প সময়ে খুবই লাভ জনক ফসল। কার্তিক-অগ্রাহায়ন মাসে দু-একটি চাষ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপন করা হয়।

 

মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের কৃষক নুর-আমিন জানায়, দেশীয় সরিষার জাতগুলোর চেয়ে উন্নত জাতগুলো ফলন বেশী হয়। গত বছওে চেয়ে সরিষা আবাদ ভালো হয়েছে। আশা করি লাভও ভালোই পাওয়া যাবো। আমি ৫বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালা থাকলে ফসল ঘরে তুলতে পারবো।

সরিষাবাড়ি উপজেলার আওনা ইউনিয়নের কৃষক আজাদ মিয়া বলেল, সেচ ও সার লাগে কম তাছাড়া সরিষার পাতা একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার। প্রতি বিঘায় ৪/৫ মন সরিষা হয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে আমাদের উপজেলায় বাড়ছে সরিষা আবাদ।

কৃষি সম্প্রসারণ  অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবছর ২৭ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। অর্জিত হয়েছে ৩২  হাজার ৫শ হেক্টর। গত বছর নির্ধারণ করা হয়েছিলো ২২ হাজার ৫শ হেক্টর, অর্জিত হয়েছিলো ২৩ হাজার ৪’শ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এবছর সরিষার চাষ বেশি হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর প্রত্যেক চাষি বেশি মুনাফা লাভ করবে। চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগই ফুল এসে গেছে এদিকে চলমান ঘন কুয়াশা বেশি দিন স্থায়ী হলে সরিষার ফলনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে শীতের স্থায়িত্ব কমে আসে তাহলে আবাদে কোনো প্রভাব পড়বে না। সরিষা রোপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উঠিয়ে আবার বোরো আবাদ চাষ করা যায় বলে একে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা বলেন , 'এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সম্পূরক রবি শস্য হিসেবে সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে সরিষা বীজ প্রদান করা হয়েছে। এরই মধ্যে চাষকৃত সরিষার বেশির ভাগেই ফুল এসে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এবার সরিষা আবাদি কৃষকরা বাড়তি মুনাফা পাবে বলে মনে করছি।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo