• উদ্যোক্তা খবর

৩৬ নারীর স্বপ্না দ্রষ্টা শিরিন

  • উদ্যোক্তা খবর
  • ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৪:২০:০৭

ছবিঃ সিএনআই

মামুনার রশিদ মিঠু, নীলফামারী: সংগ্রামী এক নারীর নাম শিরিন। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে এখন পর্যন্ত ২৯৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন। পাশাপাশি নারীদের স্বাবলম্বী করতে গড়ে তুলেছেন সেনেটারি ন্যাপকিন কারখানা। হয়েছেন ৩৬ নারীর বেচের থাকার অনুপ্রেরণা। বলছি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ির মঈনুল ইসলামের মেয়ে শিরিন আক্তার আশার কথা।

২০১১ সালে সবে প্রাইমারী গন্ডি পেরিয়ে হাই স্কুলে পা রেখেছিলেন তিনি। ঠিক তখন বিয়ে ঠিক হয় আশার। তবে পড়াশুনার তীব্র ইচ্ছা শক্তির বলে বন্ধ করেছিলেন নিজের বাল্যবিয়ে। বিয়ে বন্ধ করায় ছিটকে পরেছিলেন পরিবার থেকে। এসময় ১০ টাকা বেতনে টিউশনি করিয়ে চালিয়েছেন নিজের পড়াশুনা। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ রোধে নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য গড়ে তুলেছেন আসমানী যুব নারী ফাউন্ডেশন' নামের একটি সংগঠন। হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

এখন পর্যন্ত ২৯৪টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন শিরিন। আবার যাতে কোন নারী নির্যাতিত না হয় বা পরিবারের বোঝা না হয় সে জন্য নারীদের সাবলম্বী করতে  তৈরি করেছে আসমানী সেনেটারি ন্যাপকিন নামের একটি কারখানা। সেখানে তার দেখানো স্বপ্নে নতুন করে বাচার উদ্যমে  কাজ করে ৩৬ জন নারী বদলেছেন নিজের জীবন। বাচার স্বপ্ন দেখছেন নতুন করে।

এসব কাজে স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসাবে 'জয়িতা' অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শিরিন। এরপর প্রেরনা মুলক নারী খেতাব, জাতীয় পর্যায়ে গ্রামীন নারী  উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড , আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্লোবাল নারী উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড ও সর্বশেষ জয় বাংলা ইয়থ অ্যাওয়ার্ড-২০২১ পেয়েছেন তিনি।
এছাড়াও  মেয়েদের সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ করায় ২০১৪ সালে স্পেনের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন শিরিন ।
বর্তমানে শিরিন পড়াশুনা করছেন নীলফামারীর মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষে। তার হাত ধরে নতুন করে জীবনের আলো  দেখা অনেকেই স্বপ্ন দেখেন লড়াই করবে নারী উন্নয়নে, হবেন শিরিনের মত উদ্যোক্তা।

আসমানী স্যানিটারি ন্যাপকিন কারখানার ম্যাশিন অপেরাটর গীতা। শিরিনের সাহায্যে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেয়ে এখন কাজ করে চালাচ্ছেন নিজের পড়াশুনা, আর্থিক ভাবে সাহায্য করছেন পরিবারের। চন্দনা রানী বলেন, সেদিন যদি আপু আমার বিয়ে না আটকাতো তাহলে হয়ত আমার জীবনের সব আলো সেখানেই নিভে যেত। এখন আপুর এখানে কাজ করছি, নিজের পড়াশুনা চালাচ্ছি।

রশনা রানী বলেন, অর্থের অভাবে আমার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছিলো। বাবা মা বিয়ের কথা বলত। পরে আমি শিরিন আপুর কথা শুনি। এখানে এসে আপুকে সব বলি। শিরিন আপু আমার পরিবারকে বোঝায় আর আমার সাহস জোগায়। এখন আমি কাজ করে পড়াশুনা করি। আপুর মার্কেটিং বিভাগে কাজ করি ভালোই টাকা আসে পরিবারকেও সাহায্য করি। আমার ইচ্ছা এখানে কাজ করে টাকা জমায় আমিও আপুর মত নারীর অধিকারে কাজ করব একজন উদ্যোক্তা হব।

সুরভী বলেন, এখানে কাজ করে আমার পরিবারকেও সাহায্য করতে পারছি। নিজের পড়াশুনাও চলছে। শিরিন আপুর সাহায্যে এখানে আমাদের অনেকের জীবন পাল্টে গেছে। এখন আপুর মত আমরাও স্বপ্ন দেখি নারীদের নিয়ে কাজ করার। শিরিন আক্তার আশা বলেন, ষষ্ট শ্রেনীতে যখন বিয়ে ঠিক হয় তখন নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। কিন্তু আমি এটা ভেবেছি যে আমি না হয় বেচে গেলাম কিন্তু আমার মত যারা আছে তাদের কি হচ্ছে তারা কি পারছে বাল্যবিবাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে। কীভাবে তাদের রক্ষা করা যায় এই চিন্তা থেকেই নারীদের নিয়ে কাজ করা শুরু। ২০১৪ সালে যখন স্পেনে গেলাম। সেখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নারীর কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করি। এখন পর্যন্ত আমার কারখানায় ৩৬ জন নারী কাজ করছে। স্বপ্ন আছে এই কারখানা একদিন ৩৬ হাজার নারী কাজ করবে এবং আসমানী সারাদেশে একটি ব্রান্ড হবে।

শিরিন আরও বলেন, আসলে নারীদের নিয়ে কাজ করলে তো নানা প্রতিবন্ধকতা আসবেই। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাড়াতে অনেক সাহায্য প্রয়োজন হয়।সরকারি বেসরকারি যে কোন সাহায্য পেলে হয়ত আরও নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হত। এছাড়াও যারা সমাজের বিত্তবান আছে, যারা আমাদের সাহায্য করতে পারবেন তারা যেন আমাদের পাশে দাঁড়ায়।
নীলফামারী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক দিলগীর আলম বলেন, আমাদের থেকে নিবন্ধন নেওয়ার আগে থেকেই শিরিন কাজ গুলো করে। এছাড়াও কম দামে ভালো মানের প্রডাক্ট দিতে পারছে এটা বড় বিষয়ে।  আর সব থেকে বড় কথা সেখানে অনেক নারীর কর্মসংস্থান রয়েছে। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে নানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। অবশ্যই সে যদি কোন সাহায্য চায় আমাদের স্বার্থমত তার অয়াশে দাড়াবো।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo