তোফাজ্জল হোসেন বাবু,পাবনাঃ পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বাউত উৎসবে মেতে উঠেছিলেন সৌখিন মৎস শিকারীরা। ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন ও চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের বেশ কিছু অংশ জুড়ে বিল রুহুলে এই বাউত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করে শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) তারা একত্রে মিলিত হয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই মৎস শিকার করেন। সৌখিন মৎস শিকারীগণ প্রতি বছরই এই দিনটির জন্য গভীর অপেক্ষা করে থাকেন।
গ্রাম বাংলার মানুষের মাছ ধরা একটি অন্যতম শখ। আর বিশেষ করে বিল পাড়ের মানুষের তো সে শখ আছেই। বাংলাদেশের চির চেনা ও দেশের ঐতিহ্য বিশেষ করে চলনবিল এলাকায় বর্ষার পানি চলে যাওয়ার পর নিম্নাঞ্চলের খাস বা সরকারি জলাভূমিতে কিছু পানি জমে খাকে।
এই পানিতে দেশীয় প্রজাতির নানা ধরণের মাছ আটকে থাকে। আর এইসব স্থানে সৌখিন মাছ শিকারিরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে দল বদ্ধ হয়ে মাছ ধরার উপকরণ পলো, ছোট জাল, ধর্মখড়া, ঠেলা জাল নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, অটো রিক্সা, ভ্যান, নসিমন, করিমন নিয়ে মাছ শিকার করতে আসে।
দলবদ্ধ হয়ে মাছ ধরা এই এলাকায় পলো উৎসব বা বাউত উৎসব নামে পরিচিত।
সরেজমিন শনিবার বিল রুহুল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাবনাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে শৌখিন মাছ শিকারিরা কাকডাকা ভোর বেলার কুয়াশা ভেদ করে বিভিন্ন যানবাহনে এই বিল পাড়ে আসতে থাকে। তাদের হাতে পলো, জাল ঠেলাজাল, ধর্মখড়াসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে বিলের পাড়ে এসে হাজির হয়ে এক সঙ্গে মাছ ধরতে বিলের পানিতে নামে।
তারা মাছ ধরার সময় বিভিন্ন গ্রাম্য স্লোগান দিতে থাকে। কেউ মাছ পেলে সবাই মিলে তাকে আরো উৎসাহ দিতে থাকে। সকল মৎস শিকারীদের হাতে মাছ ধরা পড়ুক বা নাই পড়ুক তাতে কোনো সমস্যা নেই। বছরের এই দিনে সবার সাথে একত্রে মিলিত হয়ে মাছ শিকার করতে আসার মজাই যেন প্রধান উৎসবে পরিনত হয়েছে।
অপরদিকে বিলপাড়ে বিস্কুট, রুটি ও চায়ের দোকান নিয়েও বসেছে অনেকে। মাৎস শিকারিদের কেউ কেউ পেয়েছে সোল, বোয়াল, রুই, গজার। আবার অনেকেই মাছ পায়নি। তবে প্রায় সবার মুখেই ছিল মাছ ধরতে আসার আনন্দ।
শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ সব ধরণের হাজার হাজার শৌখিন মাছ শিকারিদের আনা গোনায় রহুল বিল ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ।
জানা গেছে, ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউপি ও পার্শ্ববর্তী চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউপির কিছু অংশ নিয়ে কয়েক হাজার একর জমি নিয়ে রয়েছে রুহুল বিল।
বিশেষ করে বর্ষার পানি চলে যাওয়ার পর কয়েক শ’ একর জমিতে গভীর পানি থাকে। সেখানে বর্ষার পানিতে আটকে থাকা বোয়াল, সোল, গজার, পুঁটি, সিং সহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ।
তবে মাছ না পেয়ে শুন্য হাতে ফিরে যাওয়া অনেকেই জানান, চায়না দুয়ারী জাল ব্যাবহার করে যত্রতত্র মাছ শিকার করায় দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।
মাছ ধরতে আসা টাঙ্গাইল মধুপুরের ষাটোর্ধ মকলেছ একটি বড় কাতলা মাছ ধরতে পেরেছেন, তা দেখিয়ে তিনি বলেন, এই দিনটিতে রহুল বিলে মাছ ধরার জন্য প্রতি বছর অপেক্ষা করতে থাকি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর পেয়ে মাছ এখনে ধরতে এসেছি। তিনি এর আগেও এই বিলে মাছ ধরতে এসেছেন বলে জানান।
মন্তব্য ( ০)