• আন্তর্জাতিক

 ব্যাপক বিক্ষোভের পর এবার নিরাপত্তার কড়াকড়ি সাংহাইয়ে

  • আন্তর্জাতিক
  • ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ১৮:০৩:৪৩

ছবিঃ সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ দেশ থেকে করোনা নির্মূলে সরকারের নেওয়া ‘জিরো-কোভিড’ নীতির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভের পর চীনের বৃহত্তম শহর এবং প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাইয়ে কঠোর নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার সাংহাইয়ের সব বড় সড়কের স্থানে স্থানে নীল রংয়ের ধাতব ব্যারিকেড দেখা গেছে। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক টহলও পরিলক্ষিত হয়েছে বিভিন্ন সড়কে। এছাড়া দোকান-পাট, শপিংমল ও ক্যাফেগুলোও বন্ধ ছিল এইদিন।

ব্যাপক এই নিরাপত্তার জেরে রোববার রাতের পর থেকে এখন পর্যন্ত সাংহাইয়ে কোনো জনসমাবেশ হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেওয়া ‘জিরো-কোভিড’ নীতির বিরুদ্ধে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমাগত বাড়ছে ক্ষোভ। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশের উরুমকি শহরের একটি আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ১০ জনের মৃত্যু হয়।

ওই আবাসিক ভবনটি শহরের যে এলাকায় অবস্থিত, সেখানকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস— কঠোর করোনা বিধিনিষেধের জেরে ভবনটিতে আটকে পড়াদের উদ্ধারকাজ ব্যহত হওয়ার কারণেই এত মৃত্যু হয়েছে। করোনা বিধিনিষেধ শিথিল থাকলে ওই ১০ জনের মৃত্যু এড়ানো যেত।

বৃহস্পতিাবর এ ঘটনার পর উরুমকির বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁরা লকডাউন তুলে নেওয়ার দাবি জানান। তাদের এই বিক্ষোভ রাজধানী বেইজিংসহ চীনের ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

এর মধ্যেই রোববার রাতে বিক্ষোভ শুরু হয় সাংহাইয়ের উলুমুকি সড়কে। উরুমকি শহরের নিহদের স্মরণে এই সড়কটির নাম পরিবর্তন করে ‘উরুমকি’ রাখার দাবি জনান বিক্ষোভকারীরা। সেই সঙ্গে উরুমকি শহরের নিহতদের উদ্দেশে মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধাও জানান।

চীনের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র সাংহাইয়ে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বাস। ‘জিরো-কোভিড’ নীতির কারণে চলতি বছর এপ্রিল ও মে— দু’মাস লকডাউনে ছিল সাংহাই।

সোমবার সাংহাইয়ের বিভিন্ন সড়কে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং জিরো কোভিড নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ স্লোগান দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ ও নিরপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘাত ও ধস্তাধস্তিও হয়েছে।

সাংহাইয়ে শন জিয়াও নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমি এখানে; কারণ, আমি আমার দেশকে আমি ভালবাসি; কিন্তু সরকারকে নয়… আমি মুক্তভাবে বাইরে বেরোতে চাই, কিন্তু পারছিনা। আমাদের কোভিড নীতি একটি খেলা। বিজ্ঞান কিংবা বাস্তবতার কোনও ভিত্তি এখানে নেই।’

রোববার সন্ধ্যার পর শত শত বিক্ষোভকারী সাংহাইয়ের রাস্তায় জড়ো হয়ে ‘আমরা মাস্ক চাই না, স্বাধীনতা চাই’সহ সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ, এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত ও ধস্তাধস্তি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন বলেন, বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে একটি বাসে তুলে নেয় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে পরে বাসটি চলে যায়। সাংহাইয়ে ২৬ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের মৌলিক মানবাধিকার চাই। পরীক্ষা ছাড়া আমরা আমাদের বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। জিনজিয়াংয়ের দুর্ঘটনা মানুষকে সড়কে নামতে বাধ্য করেছে।’

বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিবিসির এক সাংবাদিকও পুলিশের মারপিট ও গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন। কয়েক ঘণ্টা পর অবশ্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান অবশ্য সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ওই সাংবাদিক নিজের পরিচয় দেননি। যদি দিতেন, সেক্ষেত্রে তাকে ভোগান্তির মধ্যে যেতে হতো না।

দেশটির কোনো সরকারি সংবাদমাধ্যম সাংহাইয়ের বিক্ষোভের সংবাদ প্রচার করেনি; বরং জনগণকে শান্ত থাকা ও ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক কল্যাণের স্বার্থে সরকারের নীতি মেনে চলতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চীনের জিরো কোভিড নীতি ও শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা ও কটাক্ষ অব্যাহত রয়েছে। তবে সোমবার সকাল থেকেই সাংহাই শহর শান্ত বলে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo