• অর্থনীতি

দেশে আবারও ডিমের দাম চড়া, অস্বস্তি ক্রেতাদের

  • অর্থনীতি
  • ০১ অক্টোবর, ২০২২ ১৭:২০:০১

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ সাশ্রয়ী দামে প্রোটিনের অন্যতম বড় উৎস ডিম। কিন্তু সেই প্রোটিনের উৎসও প্রায় হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষকে বেশি ভোগাচ্ছে তা। গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর তৎপর হয় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বিভিন্ন আড়ত ও বাজারে অভিযান চালিয়ে একাধিক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে। সংস্থাটির অভিযানে ডিমের ডজন ১১৫-১২০ টাকায় নেমে আসে।

সেই সময় অভিযোগ ওঠে কারসাজি করে ডিমের বাজার থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করেছে কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান। ডিমের বাজার কিছুদিন স্থিতিশীল থাকলেও সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও অস্থিতিশীল হতে শুরু করেছে বাজার। পর্যাপ্ত জোগান থাকলেও প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ টাকায়।

মিরপুরের মুসলিম বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বাচ্চু বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহের আগে ডিমের ডজন ছিল ১৩৫ টাকা। ২৩ তারিখের পর সেটা আবার ১০ টাকা বেড়ে যায়। এখন কিছুদিন ধরে ১৪৫ টাকা আছে। কখন যে আবার দাম বাড়ে বলতে পারছি না। প্রতি পিস ডিম বিক্রি করছি ১৩ টাকায়। তবে ডজনে কিনলে ক্রেতারা ১১ টাকা কমে কিনতে পারেন।

শনিবার (১ অক্টোবর) মিরপুরের একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুরগির ডিমের মতই চড়া হাঁসের ডিম। প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। আর কোয়েল পাখির ডিম ডজন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। অন্যদিকে ভাঙা ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১০ থেকে ১২ টাকায়।

সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, বাজারে সবকিছুর দামই তো চড়া। দোকানিরা যার কাছ থেকে যত বেশি দাম নেওয়া যায়, সেই চেষ্টাই করেন। আমরা যারা হোস্টেলে থাকি তাদের জীবনধারণ অনেক কষ্টের হয়ে গেছে। একটা ডিম ভেজে নাস্তা করার উপায় নেই, কম খরচে দুপুর কিংবা রাতের মিল চালানোও কষ্টকর হয়ে গেছে।

এদিন মিরপুরের শেওড়াপাড়ার আলিম স্টোরে ডিম কিনতে আসেন নিরোধ চন্দ্র সাহা। এক ডজন ডিমের দাম ১৪৫ টাকা শোনার পর তিনি বিক্রেতাকে দাম কমানোর অনুরোধ করেন। তবে বিক্রেতা সীমিত লাভের কথা উল্লেখ করে দাম কমাননি।

নিরোধ চন্দ্র বলেন, আগস্টে অভিযানের পর ডিমের দাম তো কমলো। মাত্র কদিনে ডজনে ৫০ টাকা বাড়ে কী করে? ডিমের মতই শাক-সবজির দামও চওড়া। মাছ-মাংস মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

তিনি বলেন, অভিযান পরিচালনা করলে যদি ডিমের দাম কমে, তাহলে আবার অভিযান শুরু করা প্রয়োজন।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, একটি ডিমের দাম ১৩ টাকা কোনোভাবেই হতে পারে না। এই দাম অস্বাভাবিক। একটা ডিমের উৎপাদন খরচ ৫-৬ টাকা হলে উৎপাদনকারী সর্বোচ্চ ৮ টাকায় বিক্রি করতে পারেন। সরবরাহ একটু কমে গেলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, ফার্মের মালিক, হ্যাচারি মালিক নানা ষড়যন্ত্র করে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেন।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন হাওলাদার বলেন, খামারিরা ১২ মাসই লস দিচ্ছেন। যখন কোম্পানির প্রচুর ডিম উৎপাদন হয় তখন তারা কম রেটে বিক্রি করেন। যেহেতু তার উৎপাদন খরচ কম। আর যখন উৎপাদন কমে যায় তখন কোম্পানি দাম বাড়িয়ে দেয়। সবাই এখন কোম্পানির দাম ফলো করে। সেই দামেই চলে। গত আগস্টে অভিযানের কারণে কোম্পানি দাম কমায়। কিন্তু দেখা যায়, খামারির উৎপাদন খরচ ৯ টাকা কিন্তু তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৮ টাকায়। কোম্পানি একদিকে ডিমের দাম কমায়, অন্যদিকে মুরগির খাবারের দাম বাড়িয়ে দেয়। কোম্পানি এখন আবার ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে ডিমের সিন্ডিকেট ভাঙতে খামারিরা প্রচলিত বাজার ব্যবস্থা ভাঙার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমরা অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সপ্তাহ খানেকের ভেতরে ঢাকায় ডিমের একটি পাইকারি মার্কেট খুলছি। যেখানে সারাদেশের খামারিদের পণ্য বিক্রি করবো সরাসরি। সেখান থেকে ভোক্তা ও পাইকাররা ডিম, মুরগী কিনতে পারবেন। এখানে প্রফিট খুব কম হবে, কোনো কমিশন থাকবে না। উৎপাদন খরচের সঙ্গে শুধুমাত্র পরিবহন খরচ যোগ হবে। এখান থেকে অন্য বাজারেও আমরা পণ্য দেব।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo