
আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ ঢাকার আশুলিয়ায় শ্রমিক নেতা ইমন শিকদারের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রত্যাহারসহ শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ।
বুধবার সকালে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের শহীদ মিনার চত্বরে মাহাবুবা নীট ওয়্যার নামের কারখানার শ্রমিকসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সমাবেশ করেন। এরপরে একটি বিক্ষোভ নিয়ে ডিইপিজেড মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে থানার সামনে এসে শেষ হয়।
মাহাবুবা নীট ওয়্যার লিঃ এর চাকুরীচ্যুত সুইং সুপারভাইজার মোঃ জাহিদ জানায়, গত কোরবানির ঈদের আগে ২মাসের বেতন না দিয়ে অঘোষিতভাবে কারখানা বন্ধ করে রাখে মালিকপক্ষ। ঈদের পর কারখানা খুললে বেতন চাইলে আমাকে রিজাইন দিতে বলে। আমি রিজাইন দিলেও আজ অবদি আমার বেতন ভাতা পরিশোধ করেনি। একই অভিযোগ করেন কারখানাটির চাকুরীচ্যুত রোজিনা, নাছরিনসহ আরো বেশ কয়েকজন শ্রমিক। রোজিনা আক্তার বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন না দিয়েই আমাদরকে ঘুরাচ্ছেন। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন করছি। বেতন না দিয়ে আমাদের সাথে কারখানা কর্তৃপক্ষ অত্যান্ত নিন্দনীয় ও অমানবিক কাজ করছেন। কোথায় গেলে এসব রক্তচোষা মালিকদের বিরুদ্ধে বিচার পাবো আমরা জানি না। আমরা শ্রমিক নেতাদের কাছে সহযোগিতার জন্যে গিয়েছিলাম। তারা মালিকপক্ষের কাছে বেতন-ভাতা দাবি করলে বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে উল্টো শ্রমিকনেতার বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে।
ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এর সাভার আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ ইমন শিকদার বলেন, মাহাবুবা নীট ওয়্যার লিঃ এর প্রায় ৬৭জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে আমাদের সংগঠনে এসে লিখিত অভিযোগ দিলে গত ০৫/০৯/২২ ইং তারিখ দুপুরে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানায় গেলে কারখানা কর্তৃপক্ষের মোঃ মোক্তার হোসেন ২০/০৯/২২ ইং তারিখে শ্রমিকদের সকল পাওনাদি পরিশোধ করবেন। পাওনাদি পরিশোধে ব্যার্থ হলে কারখানার মালামাল বিক্রি করে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন মর্মে লিখিত দেন। এর দুইদিন পর কারখানা মালিকপক্ষ আশুলিয়া থানায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেন। সেইসাথে আমাকে বকেয়া বেতন বাবদ একলক্ষ ৭০হাজার টাকা দিয়েছে বলে মিথ্যা গুজব ছড়ানোসহ অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করছে । তারই প্রতিবাদে আজ আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও মিথ্যা অভিযোগে হয়রানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। শ্রমিকরা তাদের পাওনা চাইলেই মালিকপক্ষ হামলা মামলা করে তাদের দমন করতে চায়। মালিকপক্ষ যতোই শক্তিশালী হোক, শ্রমিকদের বেতন ভাতা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এ বিষয়ে ঢাকা শিল্প পুলিশ-১ এ লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
মাহাবুবা নীট ওয়্যার লিঃ এর মালিক পক্ষের স্বৈরাচারীতার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়েছেন সাভার আশুলিয়ার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সমূহের নেতৃবৃন্দ ও পোশাক শ্রমিকবৃন্দ।
এ বিষয়ে মাহাবুবা নীট ওয়্যার লিঃ এমডি মোঃ খায়রুল ইসলাম ও মোঃ মোক্তার হোসেন পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, আমরা কাউকে হুমকি প্রদান করিনি। বরং শ্রমিক নেতারাই আমাদের হুমকি দিয়েছে। ব্যবসা করতে গেলে তাদেরকে মাসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে, নাহলে ব্যবসা করতে দিবে না। তাছাড়া শ্রমিকদের বকেয়া বাবদ ইমন শিকদার ও সরোয়ার হোসেন আমাদের কাছ থেকে ১লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এখন তারা আমাদেরকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছে। অনেক শ্রমিক ২/৫ দিন ডিউটি করে চাকুরি ছেড়ে অন্যাত্র চাকুরি নিয়েছে। আমরা কি তার বাসায় গিয়ে বেতন দিয়ে আসবো। তারপরও যদি কেউ বেতন দাবি করেন এবং আমাদের কাছে বেতন পাওনা থাকে, আমরা খাতাপত্র দেখে তাদেরকে পাওনা মিটিয়ে দিবো। কিন্তু শ্রমিক নেতারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। এজন্যই আমরা থানা ও শিল্প পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোঃ সরোয়ার হোসেন, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারোশনের সাভার আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আল কামরান, শ্রমিক নেতা অরেবিন্দু বেপারী, মোঃ ইব্রাহিম, আশিক সরকার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, শাহ- আলম, মোঃ নাছির, মাহবুব আলম বাচ্চু, মোঃ মিজান, জহির রায়হান, রাজু আহমেদ, নাঈম সরকার, মোঃ আগুন, আলমগীর শেখ, শাহাদাৎ হোসেন ও মোঃ খোরশেদ আলমসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সমুহের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।
মন্তব্য ( ০)