• সমগ্র বাংলা

আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ২টি শিশু; সিজারে ১টি

  • সমগ্র বাংলা
  • ০৮ আগস্ট, ২০২২ ২২:১৪:১৯

ছবিঃ সিএনআই

আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ  আশুলিয়ায় মোল্লা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ৬টি আল্ট্রাসনোগ্রাফি টেস্ট রিপোর্টেই ২টি বাচ্চা হওয়ার কথা তবে সিজারিয়ান অপারেশনে বাচ্চা প্রসব হয়েছে একটি। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি ভুল রিপোর্টের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার করা হোক।

রোববার আশুলিয়ার দক্ষিণ গাজিরচট শের-আলী মার্কেট এলাকার রেনিসা ভিলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলা  হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর স্বামী মোঃ মামুন মুন্সী সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মোল্লা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক কমপ্লেক্সটি একটি বাসার ফ্ল্যাট ভাড়া অবৈধভাবে পরিচালনা করে আসছিলো। পরিচালনার ক্ষেত্রে, নেই কোনো প্রকার প্রয়োজনীয় সনদপত্র। নেই প্রয়োজন অনুপাতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। দাইমা ও আয়া দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে নার্সের কাজ। সেই সাথে নেই সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল পরীক্ষণ যন্ত্রাংশ।

রুমে ঢুকে দেখা যায় একটি ফ্রিজ রয়েছে। যে ফ্রিজে থাকার কথা রিএজেন্ট। ফ্রিজে মাছ, মাংস, চিনি, মাখানো মুড়ি ও মসলাসহ অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে।

ভুক্তভোগীর স্বামী মামুন মুন্সী বলেন, শুরু থেকেই এই হাসপাতালে আমার স্ত্রীকে চিকিৎসা করাচ্ছি। ডাক্টারের (ফাতেমা বিনতে হাসিব, গাইনি এন্ড অবস) পরামর্শ অনুযায়ী ধারাবাহিক ভাবে ৬ টেস্টেও করিয়েছি এবং গর্ভে ২টি বাচ্চা  থাকার কারণে মা ও বাচ্চা সুস্থ রাখার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে ঔষুধ সেবন করিয়েছি।  ২টা বাচ্চা হবে বিধায় মা ও বাচ্চার ঝুঁকি আছে এ কথা শুনে সিজার করতে এনেছি। তা নাহলে নরমাল ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করতাম। সিজারের বেশ কিছুক্ষণ পর আমাকে জানায় আমার বউয়ের ১টা বাচ্চা হয়েছে। তাহলে আরেকটা বাচ্চা গেলো কই? এখন এরা বলছে তাদের রিপোর্টে নাকি ভুল হয়েছে। এমনকি সিজারের কিছুক্ষণ আগেও হাসপাতালের মালিক ইলিয়াস মোল্লা আমাকে কম্পিউটারে ২টা বাচ্চার হার্টবিট দেখিয়েছে।

আপনি অন্য কোথাও টেস্ট করিয়েছেন? প্রশ্ন উত্তরে মামুন বলেন, মোল্লা জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও অন্য ডায়াগনোস্টিক সেন্টারেও করিয়েছি তারাও ২টা বাচ্চার কথা বলেছে। আমি বাচ্চা দেখতে যখন দৌড়ে কেবিনে যাই ঠিক ঐ মূহুর্তে বাচ্চা কান্না করতেছিলো তখনই কেউ বাচ্চা নিয়ে চলে নিয়ে যাচ্ছিল। যার কারণে আমি আর বাচ্চাটিকে দেখতে পারিনি। পুলিশ আসার পর তারা আমাকে অন্য একটি বাড়িতে নিয়ে যায় এবং ৪ দিন বয়সের একটি বাচ্চা দেখায় যেটা আমার বাচ্চা নয়।

এ ব্যাপারে মোল্লা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টার এর মালিক মোঃ ইলিয়াস মোল্লা বলেন, সকল রিপোর্ট গুলোতেই বাচ্চা ২টা দেখাইছে। কিন্তু ওটিতে নেওয়ার পর যখন সিজারের মাধ্যমে একটা কন্যা শিশু বের করা হয়। তখনই আমরা বুজতে পারি আমাদের রিপোর্ট গুলোই ভুল হয়েছে। দেড় বছর ধরে যে এই হাসপাতালটি চালাচ্ছেন সেই

প্রতিষ্ঠানের বৈধতা এবং রাষ্ট্র ও সেবা গ্রহীতার সাথে প্রতারণা করছেন কিনা? এমন প্রশ্ন উত্তরে তিনি বলেন, আমি এখনো আবেদন করিনি। যেহেতু আজ আমাদের ভুল হয়েছে অতি শিগগিরই আবেদন করবো। আমি রোগীদের সাথে কোন প্রতারণা করছি না তবে সরকারকে দেড় বছর যাবৎ ভ্যাট ট্যাক্স দেইনি এটাই আমার অন্যায় হয়েছিলো। 

এদিকে অভিযুক্ত ডাক্তার ফাতেমা বিনতে হাসিব নিজের দোষ আড়াল করতে ২টা বাচ্চা না হওয়ার পেছনের নানান যুক্তি  উপস্থাপন করেন এবং তার নিজ প্রদত্ত রিপোর্টটি ভুল হয়েছে বলে দাবি করেন। তাহলে ২টি বাচ্চার ক্ষেত্রে মেডিসিন লিখেছেন কেন এবং রোগীর উপর প্রভাব পড়বে কি না?  প্রশ্ন উত্তরে ডা. ফাতেমা বিনতে হাসিব সঠিক কোনো ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারেনি।

এবিষয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সায়েমুল হুদা বলেন, আমি স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। ঘটনাটি অতি দুঃখজনক! এ ব্যাপারে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনা তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা ৯৯৯ এর কল পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও বাদীর অভিযোগ না থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান।

 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo