• অপরাধ ও দুর্নীতি
  • লিড নিউজ

পাবনায় ঘুষ-কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগে অডিটর ইউনুস আলীর বদলী

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • লিড নিউজ
  • ২৬ জুলাই, ২০২২ ২১:৩৪:০৫

ছবিঃ সিএনআই

তোফাজ্জল হোসেন,পাবনাঃ নানা জলপনা কল্পনার পর ঘুষ, কমিশন নেওয়া ও রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর ইউনুছ আলীর অবশেষে বদলী হয়েছে। ডিভিশনাল কন্ট্রোল অব একাউন্টস, রাজশাহী এর নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ অফিসার ২৬ জুলাই ২০২২ তারিখে স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তাকে ডিএফও পাবনাতে বদলী করা হয়েছে। আগামী ৩১ তারিখে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে।

এর আগে ভাঙ্গুড়া উপজেলায় তার বিরুদ্বে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অফিসের অডিটর ইউনুছ কমিশন ছাড়া কোনো ফাইল হাতে নেন না। নির্দিষ্ট কমিশন দিলেই তিনি চেক ছাড় করেন। নয়তো তিনি নানান অজুহাতে চেকগুলো আটকে রাখেন। অভিযুক্ত ইউনুছ পাবনার চাটমোহর উপজেলার বাসিন্দা এবং গুণাইগাছা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকও। গুণাইগাছা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম অডিটর ইউনুছ আলীর দলীয় পদবীর সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি জানান, প্রায় ৬বছর যাবৎ বর্তমান পর্যন্ত ইউনুছ আলী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ভাঙ্গুড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মো. ইউনুছ আলী গত ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ভাঙ্গুড়া অফিসে যোগদান করেন। এর আগে তিনি পাবনার বেড়া উপজেলা কর্মরত ছিলেন। ভাঙ্গুড়া উপজেলায় তিনি যোগদানের পর ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, জিপিএফ হিসাব নম্বর খোলা, বেতন নির্ধারণ, বকেয়া বিল, জিপিএ চূড়ান্ত বিলসহ কোনো কিছুই মোটা অঙ্কের উৎকোচ ছাড়া স্বাক্ষর করেন না অডিটর ইউনুছ আলী। সরকারি কর্মকর্তা হয়েই আওয়ামীলীগের দলীয় নেতা হওয়াতে কাউকে তোয়াক্কা করেন না। বাধ্য হয়েই তাকে কমিশন দিতে হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিটি চেকের বিপরীতে হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর ইউনুছ আলীকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। না হলে চেক ছাড় করেন না। চুক্তিবদ্ধ না হলে মাসের পর মাস তার পিছে পিছে ঘুরতে হয়। বিশেষ করে সরকারি বিল, অফিসারদের টিএডিএ, অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা প্রভৃতি ক্ষেত্রে টাকা ছাড়া কোন কাজ করেন না। অভিযোগ রয়েছে উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের জনশুমারী কর্মীদের ভাতা উত্তোলন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিল, শিক্ষা অফিসের বিল, নির্বাচন অফিসারের বিল প্রভৃতি ক্ষেত্রে ৫% উৎকোচ নেওয়ার পর তাদের ফাইলের কাজ করেছেন ওই অডিটর।

ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মাষ্টারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ও উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (অব:) আব্দুস সালাম জানান, অবসর ভাতা, গ্রাচ্যুয়িটি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পাওয়ার জন্য অনেক হয়রানি হবার পর বাধ্য হয়ে ওই অডিটর ইউনুছ আলীর দাবি অনুযায়ী তাকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর তিনি তার কাজ করে দিয়েছেন। তারপর তিনি অবসর সুবিধা পান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউনুছ আলী দলীয় পদে থাকার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ফাইল চেক করলে অনেক বিল কমে যায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পুরোবিল দাবি করেন। এই নিয়ে অনেক অফিস প্রধানের সাথে তার বিরোধ হয়। ফলে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় বলে তিনি দাবি করেন। একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে রাজনৈতিক দলে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি পদে থাকলেও স্থানীয় এমপির অনুরোধে আমি এখন নিস্ক্রিয় রয়েছি”।

এ বিষয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, অডিটরদের বিরুদ্ধে অনেকেরই অভিযোগ থাকতে পারে, তবে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অগ্রায়ন করা হবে। অডিটর ইউনুছ আলীর দলীয় পদবীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সমকাল‘কে বলেন, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তার রাজনৈতিক দলের পদবী গ্রহন সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধির সম্পর্ণ পরিপন্থী। তাই এর দালিলিক প্রমাণাদি কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করা হলে তার উপর বিভাগীয় শাস্তি বর্তাবে।

অডিটর ইউনুস আলীর বদলীর বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বদলী সংক্রান্ত একটি পত্র পাওয়া গেছে সেখানে আগামী ৩১ জুলাই ২০২২ তারিখে পদায়নকৃত স্থানে যোগদান করতে বলা হয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দাপ্তরিক প্রধানগণ ও অবসরে যাওয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবিলম্বে ওই অডিটরের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলির সঠিক তদন্ত করার দাবী করেছেন।

 

 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo