• অপরাধ ও দুর্নীতি

বগুড়ায় মোবাইল ফোনের জন্যে বন্ধুকে খুন

  • অপরাধ ও দুর্নীতি
  • ২৮ জুন, ২০২২ ২১:১৮:৩০

ছবিঃ সিএনআই

সঞ্জু রায়,বগুড়া: শখের বসে ছেলের জন্মদিনে বাবা তার আদরের সন্তানকে কিনে দিয়েছিলেন ১৮ হাজার টাকার স্মার্টফোন যে মোবাইল ফোনই কাল হলো বগুড়া শাজাহানপুরের ১৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী নওফেল শেখের। নওফেলের হাতে থাকা মোবাইলটি পেতে ১৬ বছর বয়সী তারই বন্ধু খুন করে তাকে। বন্ধুকে হত্যার পর মোবাইল বিক্রি করে পাওয়া ৫ হাজার টাকা নারীসঙ্গে কাটিয়ে উড়িয়েছেন সেই হত্যাকারী কিশোর।

মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ শাজাহানপুরের শিশু নওফেল হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন পরবর্তী এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবত্তীর্। প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশ সুপার বলেন, মোবাইল ফোনের জন্যই সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নওফেলকে খুন করে তারই বন্ধু। খুনের অভিযোগে নওফেলের বন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর এসব বিষয় তারা জানতে পেরেছেন। 

তিনি বলেন, গত ২০ জুন সন্ধ্যায় বগুড়ার শাজাহানপুরের দাড়িগাছা ফুলবাড়িয়া এলাকায় নওফেল শেখের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়। এর আগে ১৮ জুন থেকে সে নিখোঁজ ছিল। ১৪ বছরের নওফেল একই এলাকার ইসরাইল শেখের ছেলে এবং দাড়িগাছা ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। মরদেহ উদ্ধারের পর তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আলী হায়দার চৌধুরী ও সদর সার্কেল শরাফত ইসলামের তত্ত্বাবধানে শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে পুলিশের চৌকস দল উক্ত মামলার তদন্তে নামে। তদন্তে তার বন্ধুর সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসে। পরে ২৭ জুন দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে অভিযুক্ত ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় জাকিয়া খাতুন বৃষ্টি নামে এক তরুণীও গ্রেপ্তার রয়েছে। ২০ বছরের জাকিয়া খাতুন বগুড়ার শেরপুরের বাসিন্দা। 

হত্যাকান্ডের বিস্তারিত প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবত্তীর্ জানান, ১৮ জুন নওফেলের জন্মদিন ছিল। ওই দিন তার বাবা ইসরাইল ১৮ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি স্মার্টফোন উপহার দেন তার ছেলেকে। সেই মোবাইল নিয়ে নওফেল ওই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে একটি জঙ্গলে যায়। মূলত এ জঙ্গলে এসে তারা প্রায়ই ধূমপান করত।  উক্ত সময় অভিযুক্ত কিশোর পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সঙ্গে একটি মাফলার নিয়েছিল। জঙ্গলে গিয়ে ধুমপানের ফাঁকে মাফলার গলায় প্যাচাঁনো গল্প তুলে এই কিশোর। কিন্তু বন্ধু হওয়ার কারণে নওফেল এসবের কারণ বুঝতে পারেনি। এরই এক পর্যায়ে নওফেলের গলায় মাফলার দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে পেছন থেকে টান দেয়। এতে কিছুক্ষণ ছটফট করে নওফেল মারা যায়। পরে পাশে থাকা একটি বাঁশ দিয়ে মাথায় পরপর দুবার আঘাত করে অভিযুক্ত। মৃত্যু নিশ্চিত হলে সেখান থেকে আরও প্রায় ১৫ হাত দূরে ঝোপের ভিতরে নওফেলের মরদেহ টেনে নিয়ে গিয়ে গুম করে সেই বন্ধু। পরবর্তীতে মরদেহটি উদ্ধার হলে ওই কিশোর সবার অগোচরে পালিয়ে যায়। প্রেস ব্রিফিং এ এসপি সুদীপ আরো জানান, অভিযুক্ত কিশোরের মোবাইল হাতানোর উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন কারণে। তার এক বান্ধবীর সঙ্গে শারিরীক সম্পর্কের জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তার কাছে দ্রুত এ টাকা যোগাড় করতে পারেনি অভিযুক্ত ছেলেটি। এ জন্য এই পথ বেছে নেয় হত্যায় অভিযুক্ত কিশোর। মোবাইল বিক্রির সূত্র ধরে জাকিয়া খাতুন বৃষ্টি নামে ওই তরুণীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, নওফেলের মোবাইলটি হাতিয়ে নিয়ে অভিযুক্ত কিশোর জাকিয়া খাতুনের সঙ্গে দেখা করে। পরে তারা দুজনে শহরের সাতমাথায় একটি দোকানে গিয়ে ওই মোবাইল ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। বিক্রির টাকা নিয়ে তারা দুজনে শহরের গালাপট্টির হোটেল টুইন ব্রাদার্সে ২ হাজার টাকায় রুম ভাড়া করে সময় কাটায়। ওই কিশোরের আরেক বন্ধুও সেখানে এসে মেয়েটির সঙ্গে সময় কাটায়। পরে মেয়েটিকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে অভিযুক্ত কিশোর চলে যায়।

জেলা পুলিশ সুপার জানান, তদন্তে প্রথমে মোবাইল উদ্ধার করা হয়। সেই সূত্র ধরে মেয়েটিকে এবং পরে টঙ্গী থেকে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার কিশোরের দেখানো স্থান থেকে হত্যায় ব্যবহৃত মাফলারও উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবত্তীর্ আরো জানান, গ্রেপ্তার নারী বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। আর অভিযুক্ত কিশোরকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রেস ব্রিফিং এ তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে অভিভাবক ও শিক্ষকদের আহ্বান জানান শিক্ষার্থীদের মানসিক কাউন্সিলিং এর জন্যে। তিনি বলেন, নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে বন্ধুদের মাঝে নানারকম ফ্যান্টাসির জের ধরে ঘটা এই হত্যাকান্ডগুলো সত্যিই কষ্টদায়ক যা প্রতিরোধে সকলকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে।  

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo