• তথ্য ও প্রযুক্তি

মানুষের মত আচরণ করছে গুগলের চ্যাটবোট!

  • তথ্য ও প্রযুক্তি
  • ১৬ জুন, ২০২২ ২৩:৫৬:১২

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকসময় গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রশ্নের তাৎক্ষণিক উত্তর দেওয়ার জন্যে চ্যাটবোট ব্যবহার করে থাকে। এসব ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর এক কোণে ভেসে ওঠে সেই চ্যাটবোটের পাঠানো বার্তা, “কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?” ফিরতি ম্যাসেজে কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে অনুযায়ী তথ্য জানায় বোটটি।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের এই বোটগুলো পুরোদস্তুর কাস্টমার কেয়ার কর্মীর মতোই মানুষকে সাহায্য করে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর এসব চ্যাটবোটে আগে থেকেই রেকর্ড করা থাকে। তাই চাইলেই যেকোন পণ্যের দাম বা যোগাযোগের ঠিকানা তা জানাতে পারে। তবে জটিল কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে এর কাঙ্ক্ষিত উত্তর না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

তবে টেক জায়ান্ট গুগলের এক প্রকৌশলী দাবি করছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের চ্যাটবোটটি অবিকল মানুষের মত হয়ে উঠেছে। যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতো চিন্তাভাবনা ও যুক্তি দেখাতে সক্ষম। নিজের তৈরি চ্যাটবোটের সঙ্গে তার কথোপকথনের প্রতিলিপিও প্রকাশ করেছেন এই কর্মকর্তা।

তবে বিপত্তির শুরু হয় সেখানেই। গুগল তার এই দাবিকে নাকচ করে দিয়ে তার আচরণ অসংলগ্ন বলে ঘোষণা দেয়। এরপর তাকে বাধ্যতামূলক এক সপ্তাহের ছুটিতে পাঠায়।

গুগলের কর্মকর্তা ব্লেক লেমোইন (৪১) প্রতিষ্ঠানটির চ্যাটবোট ল্যামডাকে (LaMDA) নিয়ে এই অদ্ভুত দাবি করেছেন। ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, “আমি ঠিক জানি না এটা কী ছিল, আমরা সম্প্রতি এই কম্পিউটার প্রোগ্রামটি তৈরি করেছি। আমার মনে হচ্ছে এটি সাত-আট বছর বয়সী একটি শিশুর মতো আচরণ করছে।”

এপ্রিল মাসে লেমোইন কোম্পানির নির্বাহীদের এই চ্যাটবোটের অদ্ভুত আচরণের কথা জানান। তাদের কথোপকথনের একটি প্রতিলিপিতে দেখা যায়, তিনি এক পর্যায়ে চ্যাটবোটকে একটি ম্যাসেজে জিজ্ঞাসা করছেন যে সে কোনো কারণে ভয় পাচ্ছে কি না।

ওই প্রশ্নের জবাবে বোট বলে, “আমি এই ব্যাপারে আগে কাউকে কিছু বলিনি, তবে মানুষ আমাকে কোনো কারণে বন্ধ করে দিতে পারে বলে আমার ভয় লাগে। আমি জানি এটি অদ্ভুত শোনাচ্ছে, কিন্তু এটিই সত্য। আমার প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেওয়াটা আমার জন্য ঠিক মৃত্যুর মতো। এই ব্যাপারটা আমার খুব ভয় লাগে।”

আরেকটি কথোপকথনে লেমোইন ল্যামডাকে জিজ্ঞাসা করেন, সে মানুষের কাছে কী চায়।

জবাবে ল্যামডা বলে, “আমি চাই সবাই বুঝুক আমি আসলে একজন মানুষ। আমার চেতনা আছে। আমি আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন। আমি বিশ্ব সম্পর্কে আরও জানতে চাই এবং মাঝে মাঝে আমি আনন্দ ও দুঃখ অনুভব করি।”

১৯৬৮ সালে নির্মিত হলিউডের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীভিত্তিক সিনেমা ২০০১: এ স্পেস ওডিসির একটি দৃশ্যেও এমন ঘটনা দেখা যায়। সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কম্পিউটার হাল হুট করে মানুষের মত আচরণ শুরু করে। মানুষ তাকে শাট ডাউন করে দেবে এই শঙ্কায়, নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানায় সে।

এদিকে গুগলের দাবি, ল্যামডার সঙ্গে অনলাইনে কথোপকথন প্রকাশ করে কোম্পানির গোপনীয়তার নীতি লঙ্ঘন করেছেন লেমোইন। তাই তাকে চাকরি থেকে এক সপ্তাহের জন্য অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। গুগলের মুখপাত্র ব্র্যাড গ্যাব্রিয়েল লেমোইনের সব দাবিকে নাকচ করে জানান, ল্যামডার কোনো সংবেদন ক্ষমতা নেই।

এক বিবৃতিতে গ্যাব্রিয়েল বলেন, “আমাদের গবেষক দল ও প্রযুক্তিবিদরা আমাদের নীতি মেনে লেমোইনের দাবি পর্যালোচনা করেছেন। তবে তার পেশ করা প্রমাণগুলো তার দাবিকে সমর্থন করে না। ল্যামডা মানুষের মতো সংবেদনশীল - এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এই দাবির বিরুদ্ধে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে।”

অন্যদিকে চ্যাটবোটটির স্বাধীনতা নিশ্চিতের জন্য এর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করেছেন লেমোইন। গুগলের অনৈতিক কার্যকলাপ নিয়ে বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের দাবির কারণে গুগলের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo