• বিশেষ প্রতিবেদন

পদ্মার ভাঙ্গনে দিশেহারা হরিরামপুরের মানুষ

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০১ জুন, ২০২২ ১৯:২৬:৫৯

ছবিঃ সিএনআই

শাহজাহান বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ : পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের নদীর তীরবর্তী কাঞ্চনপুর, গোপীনথপুর, রামকৃষ্ণপুর, বয়ড়া, হারুকান্দি ও ধূলশুড়া ৬টি ইউনিয়নের মানুষ। চলতি বর্ষা মৌসুমের প্রাক্কালে নদীতে নতুন পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে উপজেলার হারুকান্দি ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বসত বাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে।বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাটও পড়েছে হুমকির মুখে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে হারুকান্দি ইউনিয়নের চরকান্দি ও ব্রাহ্মণপাড়ার শেষ অব্দি পর্যন্ত তীর্ব ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।এতে প্রতিদিন প্রায় ২/৩ শো মিটার সমতল ভূমিসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ঝুঁকির মধ্য রয়েছে, আব্দুর কাদের শিকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গরীবপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, গরীবপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প, মির্জানগর বসের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলিয়ানগর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪/৫টি মসজিদসহ বেশ কিছু বসত বাড়ি এবং ফসলি জমি।

এছাড়া হারুকান্দি ইউনিয়নের প্রায় ১কি.মি. ব্যারিবাধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিনই নদী তীরবর্তী স্থানে একাধিক ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলণের কারণে বর্ষার পানি আসতে না আসতেই ভাঙনের শুরু হয়।

হারুকান্দি ইউনিয়নের হারুকান্দি গ্রামের ইদ্রিস মাতব্বর জানান, আমরা প্রতি বছরই নতুন নতুন ভাঙনের শিকার হচ্ছি। এ পর্যন্ত আমার ফসলি জমি ও বসত ভিটাসহ ১৫/২০ একর জমি নদীতে চলে গেছে।

ইউপি সদস্য ইদ্রিস মোল্লা বলেন, আমার বাপদাদার এ পর্যন্ত ২০/২৫ থেকে একর জমি নদীতে চইল্যা গেছে। বর্তমান আমার বাড়িটি এই ইউনিয়নের মৌজায় নাই। অন্য মৌজায় কোনো রকম ঠাই নিয়া আছি। এই ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা করা না হইলে হারুকান্দি ইউনিয়ন খুব তাড়াতাড়িই বিলীন হয়ে যাবে।

হারুকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চুন্নু বলেন, "আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন অবস্থায় মাননীয় সাংসদ মমতাজ বেগম ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. গোলাম মহীউদ্দীন হারুকান্দি ইউনিয়নের শুরু থেকে বয়ড়া ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি প্রায় ৮ দশমিক ৮ কি. মি. জিও ব্যাগ ফেলে একটা অস্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রায় দুই বছর আগে আমার ইউনিয়নে ফেলা সেই জিও ব্যাগ ভেদ করে প্রায় ১কি.মি. ভেঙে জিও ব্যাগসহ নদী গর্ভে চলে যায়। এবার বর্ষার পানি আসতে না আসতেই নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ভাঙনের অন্যতম কারণ হলো, আমার ইউনিয়নের এরিয়াসহ পদ্মা তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে পানির স্রোতের বেগটা তীরে এসে আঘাত করছে।

প্রতিদিন এখানে একই স্থানে ৫/৬টা ড্রেজার সমানতালে বালু উত্তোলন করছে। পদ্মা তীরবর্তি ৬টি ইউনিয়নকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে হলে এই অপরিকল্পিত অবৈধ বালু উত্তোলন রোধসহ স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি জরুরি হয়ে পড়ছে। নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে এসব অবৈধভাবে বালি উত্তোলন রোধসহ পদ্মা ভাঙনরোধ কল্পে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানান তিনি।

অপর দিকে জানা যায়,  উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে গত ৭ দিনের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ১০০ বিঘা ফসলি জমি, ১টি বসতবাড়ি ও ২টি কলার বাগান। এছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে হুগলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ মাদরাসাসহ পাটুরিয়া ঘাট থেকে আসা বাইপাস বাল্লা- কাঞ্চনপুর- গোপীনাথপুর- ঝিটকা সড়কটিও।

এ ব্যাপারে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক জানান, গত এক সপ্তাহের ভাঙনে ৪০০ মিটার এলাকাজুরে জিও ব্যাগসহ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মূলত শুকনো মৌসুমে স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করা না হলে শুধু এ জিও ব্যাগে এই ভাঙন রোধ সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মহোদয় মানিকগঞ্জ আসবেন।সরাসরি তিনি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করবেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া হারুকান্দি ও গোপীনাথপুর উজানপাড়া এলাকার জন্য এডিবির ৩০ কোটি টাকার একটা প্রকল্পের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হয়তো তিন মাস সময় লাগবে। এ প্রকল্প চূড়ান্ত হলে ভাঙনরোধে অনেকটাই কাজ হবে। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে কোনো এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিলে তা সাময়িকভাবে রোধের জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo