• সমগ্র বাংলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্ববৃহৎ খামার মধুমতি গ্রুপের মধুমতি ডেইরি ফার্ম

  • সমগ্র বাংলা
  • ২০ মে, ২০২২ ১৮:০৮:৩৬

ছবিঃ সিএনআই

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ উন্নয়নে প্রয়োজন, সঠিক উপায়ে উদ্যোগ গ্রহন । আর এই সঠিক উদ্যোগটি গ্রহন করেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় খামার হয়ে উঠেছে মধুমতি ডেইরি ফার্ম । বিভিন্ন প্রজাতির গরু, গাভী, মহিষ ও গাঁড়ল এমনকি ঘোড়া দ্বারা সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে মধুমতি ডেইরি ফার্ম । পাশাপাশি এই ফার্মে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে অন্তত ১৬ জন ব্যক্তির । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট শিবনারায়নপুর গ্রামে গড়ে উঠেছে এই ফার্মটি । মধুমতি গুরুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মাসুদ রানার দীর্ঘমেয়াদী ও সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে ওঠা বিশাল এই ফার্মে রয়েছে অন্তত ২৮৫ টি গরু । যার মধ্যে রয়েছে ১৮৫ টি সাধারণ গাভী, ৭৫ টি গর্ভবতী গাভী যা আগামী ৩ মাসের মধ্যে বাচ্চা দিবে ও ২৫ টি কোরবানি উপযোগী ষাঁড় ।

এছাড়াও এই ফার্মে রয়েছে ১০ টি মহিষ, ২৫০ টি গাঁড়ল ও ৬ টি ঘোড়া । এসব প্রাণীর খাবার, দেখাশোনা ও চিকিৎসা সহ সার্বিক পরিচর্যায় সদা ব্যস্ত রয়েছে অন্তত ১৬ জন কর্মচারী । খামার পরিস্কার করণ, উপযুক্ত পরিবেশ সংরক্ষণ ও গভীর দুধ দহন সহ সকল ক্ষেত্রেই যেন এই ফার্মে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি । সব মিলিয়ে একটি তাক লাগানো খামারে পরিনত হয়েছে এই খামারটি । সরেজমিনে গেলে মধুমতি ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপক মো: মোশারফ হোসেন বলেন, মধুমতি ডেইরি ফার্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা এমনকি বাংলাদেশের একটি মডেল ফার্ম । এত বিশাল এই ফার্মের সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্ম পরিচালনায় প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত এই ব্যবস্থাপক জানান, এই ফার্মে যতগুলো প্রাণী রয়েছে, এগুলোর সার্বিক দেখাশোনা করা অনেক কঠিন কাজ । তবে উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এই কাজটি অনেকটাই সহজ হয়ে পড়েছে । অপরদিকে বিশাল এই ফার্মের শত শত প্রাণীর ময়লা আবর্জনা যাতে করে পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে সেই সুব্যবস্থাও রয়েছে এখানে । গরুর গোবর থেকে বানিজ্যিকভাবে বায়োগ্যাস তৈরি এবং এর অতিরিক্ত অংশ থেকে জৈব সার তৈরি করে তা বাজারজাত করনের গৃহীত পরিকল্পনা চলতি বছরেই বাস্তবায়ন হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি । 

মধুমতি ডেইরি ফার্মের নিয়মিত আয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে এই খামারে বর্তমানে ৩০ টি গাভী থেকে নিয়মিত ৩৫০ লিটার ও মহিষ থেকে প্রায় ৪০ লিটার দুধ সংগ্রহ করে তা বিক্রয় করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা যায় । এদিকে প্রতিবছরই জার্সি, শাহপরান ও অস্ট্রেলিয়ান সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাভী বাচ্চা দিয়ে থাকে যা অত্যন্ত লাভজনক । গাঁড়ল প্রতি ৭ মাস পরপর বাচ্চা দেয় বলে এটিও বেশ লাভজনক বলে জানিয়েছেন খামার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বাচ্চা প্রসবে এই খামারের ঘোড়াগুলোও পিছিয়ে নেয় বলেও জানান তিনি । 

মধুমতি ডেইরি ফার্মের সূচনা, বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মাসুদ রানা বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষিত জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অনেক কম । যার ফলে দিন দিন বেকারত্বের পরিমাণ বেড়েই চলেছে । অপর দিকে আমাদের দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠির মনে চাকরি করার প্রবণতা থাকলেও চাকরি করানোর চিন্তা নেই বললেই চলে । যার ফলে মানুষ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ছে । এসব চিন্তা থেকে ছাত্রজীবনেই মূলত একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা ছিল । যা ছাত্রজীবন শেষ করেই অদ্যাবধি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে এসেছি । 

খামার অনেকেই করে থাকেন, কিন্তু একজন সফল খামারি হতে হলে কোন বিষয়গুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার এমন প্রশ্নের জবাবে এই সফল উদ্যোক্তা বলেন, অর্থ বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীল হলে হবে না, বরং একজন খামার ব্যবসায়ীকে প্রথমত খামার সম্পর্কে সঠিক ধারনা, সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ এবং সরকারি ও বেসরকারি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে । সেই সাথে আনুষঙ্গিক বিষয় যেমন স্বাস্থ্য রক্ষায় খামারের উচ্ছিষ্ট সমূহ পরিকল্পিতভাবে অপসারণ এবং প্রক্রিয়াকরণ সহ সুষ্ঠু পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়ার কথাও জানান তিনি । এত বিশাল খামার পরিচালনা, খাদ্য ও চিকিৎসা সহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টির কথা জানান সফল এই উদ্যোক্তা।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo