• প্রশাসন

বগুড়ায় ১২০ টাকা খরচে পূরণ হলো ৯৪ জনের পুলিশে চাকরির স্বপ্ন

  • প্রশাসন
  • ২২ এপ্রিল, ২০২২ ১২:২৮:০০

ছবিঃ সিএনআই

সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ কোন ধরণের ঘুষ, সুপারিশ কিংবা দালাল না ধরে শুধুমাত্র ১২০ টাকা খরচে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশে চাকরি যা অতীতের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে অসম্ভব মনে হলেও বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় সেই চিত্র পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। আর এই বছর আবারো বাংলাদেশ পুলিশের কন্সটেবল নিয়োগ পরীক্ষায় শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে ৯৪ জনকে মনোনীত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বগুড়া জেলা পুলিশ।

আর জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করা ছেলে মেয়েরা টাকা ছাড়া সোনার হরিণের মতো এই চাকরি পাবে তা কখনো ভাবতেও পারেনি উত্তীর্ণরা যা প্রকাশ হচ্ছিলো তাদের আনন্দ অশ্রু এবং বাঁধভাঙা উল্লাসে। বুধবার রাতে বগুড়া পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে ‘চাকরি নয়, সেবা’ প্রতিপাদ্যতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষা-২০২২ এর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেন জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম। যেখানে এইবার বগুড়ায় ৯৪ জন চাকরি প্রার্থী পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন যাদের মাঝে ৮০ জন পুরুষ ও বাকি ১৪ জন নারী। জানা যায়, ২০২২ সালে সারাদেশের ন্যায় বগুড়া জেলাতেও পুলিশের "ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে'' ৭ টি ধাপের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৯ মার্চ একশ টাকা ব্যাংক ড্রাফট করে বগুড়া পুলিশ লাইনে ৩ হাজার ২৬০জন ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন ধাপ শেষ করে ৯২৫ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ২৫৬ জন পাশ করেন। পরে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৮০ জন ছেলে ও ১৪জন মেয়েকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করে ফল প্রকাশ করা হয়।

ছেলেদের মধ্যে ফলাফলে ১ম স্থান অর্জনকারী রাব্বী হাসানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বগুড়া শিবগঞ্জের কিচক এলাকার এক দরিদ্র কৃষকের সন্তান তিনি। করোনাকালীন সময়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের কাছে যখন তাদের আপনজনরা যেতো না কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা মানবিকভাবে এগিয়ে এসেছিল দেশের সাধারণ নাগরিকদের পাশে যা তার মন ছুঁয়ে যায় এবং সে সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশে চাকরি করে দেশের মানুষের সেবা করবে। তাই গতবছর একই পদে পরীক্ষা দিয়ে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত এসে চূড়ান্তভাবে উর্ত্তীণ হতে পারেনি কিন্তু হাল না ছেড়ে অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে আজ সে উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়াও শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে বগুড়া জেলা পুলিশ পুরো নিয়োগ পরীক্ষা যেভাবে সম্পন্ন করেছে তাতে তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ফলাফলে নারীদের মধ্যে প্রথম হওয়া সদরের নামুজা এলাকার অনার্স ১ম বর্ষ পড়ুয়া সুমাইয়া আক্তারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অনেক অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে সে আজ এই পর্যন্ত এসেছে। তার বাবা একজন প্রতিবন্ধী। তাদের অভাবের সংসারে দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোট ভাই পড়াশুনা করলেও অভাবের কারণে সে পড়াশুনা বাদ দিয়ে বর্তমানে রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালায়। শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি সে পেতে যাচ্ছে এটি তার কাছে এখনো স্বপ্নের মতোই লাগছে।

তিনি আনন্দ অশ্রম্নতে তার খুশি প্রকাশ করেন। এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, ‘সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বগুড়ায় ৯৪ জনকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়েছে যাদের অধিকাংশ হতদরিদ্র। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে থেকে তারা গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে কঠোর হস্তে দালাল ও প্রতারক চক্রকে দমন করার চেষ্টা করেছে এবং তাতে শতভাগ সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয় নিয়োগের শুরু থেকে জেলা পুলিশের পক্ষে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ব্যাপক প্রচারণাও করা হয়েছে যাতেও মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে ইতিবাচক ধারণা। বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি’র নেতৃত্বে শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে এই নিয়োগ সম্পন্ন করতে পেরে তিনি নিজেও অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত বলে জানান জেলা পুলিশের এই কর্ণধার।

বুধবার রাতে ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আলী হায়দার চৌধুরী (প্রশাসন ও অর্থ), আব্দুর রশিদ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্), শরাফত ইসলাম (সদর সার্কেল), নওগাঁ পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফতাব উদ্দিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজল ই খুদা সহ জেলার অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। ফলাফল প্রকাশ পরবর্তী উর্ত্তীণ সকলকে জেলা পুলিশের পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্ত্তী।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo