• বিশেষ প্রতিবেদন

আরিচা যমুনার তীরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে গঙ্গা স্নান ও সার্বজনিন বারুনী মেলা

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ৩১ মার্চ, ২০২২ ১০:২৩:৪৪

ছবিঃ সিএনআই

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ৩১ মার্চ করোনা মহামারির কারণে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর আরিচায় ‘গঙ্গা’ স্নান’ উপলক্ষে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে বারুনীর মেলা। হিন্দু সম্প্রাদায় পূন্যলাভের আশায় গঙ্গা স্নানে অংশগ্রহন করছেন। বিগত প্রায় দুইশত বছর পূর্ব হতে আরিচায় এই স্নান অনুষ্টিত হচ্ছে।  ঢাকা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, রাজবাড়ী ও ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলার  বিভিন্ন এলাকার হাজার, হাজার শিশু, কিশোর, নারী, পুরুষ স্নানের উদ্দেশ্যে ভোর বেলা থেকেই আসতে শুরু করেছে আরিচা ঘাটের যমুনার পাড়ে। ফলে পূণ্যার্থীদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাটের যমুনা নদীর পাড় ও বন্দর বাজার এলাকা।

বুধবার সকালে আরিচা ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবার সকাল থেকেই আরিচা ঘাটের যমুনা নদীর তীরে হিন্দু পূণ্যার্থীদের ভীড় সবচেয়ে বেশী। যথারীতি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে হাজার, হাজার পূণ্যার্থী নারী-পুরুষ অংশ নিচ্ছেন এ স্নানোৎসবে। শ্রী-শ্রী গঁঙ্গা মাতার পুঁজো করে নদীতে নেমে স্নান করে পবিত্র হচ্ছেন হিন্দু ধর্মালম্বীরা। মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশ তিথি অনুযায়ী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার পর থেকে বারুনি স্নান শুরু হয়ে বুধবার দুপুর সোয়া ১২ টা পর্যন্ত এ স্নান উৎসব চলতে থাকে। আরিচা ঘাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রী অসিত দত্ত জানান, আরিচা ঘাটের যমুনা নদীর তীরে  প্রায় আড়াইশ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথি অনুযায়ী এ বারুনী গঁঙ্গা স্নান উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা এবং ঢাকার ধামরাই, পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে পাপ মোচনের আশায় হিন্দু পূণ্যার্থীরা এখানে আসছেন স্নান করতে। এলাকার পূর্নার্থীরা ছাড়াও এবছর স্নান করতে এসেছেন ভারতের কিছু পূর্নার্থী।

হিন্দু পুরুহিতরা যমুনা নদীর তীরে দাড়িয়ে তাদের ভক্তদেরকে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে স্নান করিয়ে শুদ্ধ করাচ্ছেন। হাজার হাজার  নারী-পুরুষ আবাল-বৃদ্ধা বনিতা পবিত্র এ স্নানে অংশ নিয়ে শুদ্ধ হচ্ছেন। স্নানের সাথে সাথে শ্রী শ্রী গঙ্গা মাতার পুঁজার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট ও লোকনাথ সেবা সংঘ শিবালয় উপজেলা শাখা। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে স্নানের পরে স্নান উৎসবে আগত পূণ্যার্থীদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে।

এবছর মেলায় আগত দর্শনার্থী ও  পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তার দায়ীত্বে রয়েছেন, শিবালয় থানা পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ বাহিনী। এছাড়াও বারুনী স্নান ও মেলার সার্বিক পরিচালনার দায়ীত্বে রয়েছে শিবালয় ৩নং মডেল ইউনিয়ন পরিষদ ও শিবালয় বন্দর ব্যাবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতি। এদিকে, এ স্নানোৎসবকে ঘিরে বুধবার থেকে পাচদিন ব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। প্রতিবছর পাচদিন ব্যাপী এ মেলা হওয়ার কথা থাকলেও আবহাওয়া ও সার্বিক পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে সাতদিন পর্যন্ত মেলা চলতে থাকে। এবারও অনুকুল পরিবেশ থাকলে মেলা সাতদিন চলবে বলে আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
 
আরিচার যমুনা নদীর তীরে বসা ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় শিশুদের  চিত্তবিনোদনের জন্য নাগরদোলা, ট্রেনগাড়ি, যাদু প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন রয়েছে। খেলনা, প্রসাধনী, সাজসজ্জার নানা দোকান, কাঠ,বেত, মাটি, লোহার তৈরী আসবাবপত্রসহ গৃহকাজে ব্যাবহার্য্য সামগ্রীর দোকান,মিষ্টি,বিন্নি- খৈই,সাজ, বাতাসা সহ নানা ধরনের খাদ্য সামগ্রীর দোকান বসেছে এই মেলায়।

শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো.ইয়াকুব আলী শিকদার জানান, আরিচায় ‘বারুনী স্নান’ উপলক্ষে মেলায় শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতি’র পাশাপাশি শিবালয় উপজেলা প্রশাসন, শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদ, শিবালয় থানার পুলিশ প্রশাসন সার্বিক সহযোগীতা করছেন। মেলায় আইন-শৃংখলা ঠিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ ও বন্দর সমিতির নিয়মিত পাহারাদার দিয়ে দিনরাত টহল দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo