• বিশেষ প্রতিবেদন

আশুগঞ্জে দাদনের কাছে বন্দি চাতাল শ্রমিকরা, তারা জানেনা নারী দিবস কী ? 

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৮ মার্চ, ২০২২ ১৬:৩৩:৫২

ছবিঃ সিএনআই

হাসান জাবেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: দাদনের দায়ে শ্রমিক দিবসেও কাজ করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের চাতাল শ্রমিকরা। তারা জানেনা মহান মে দিবস বা শ্রমিক দিবস কি? ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা    তিন শতাধিক চাতাল মিলের অধিকাংশ শ্রমিক দাদন নিয়ে সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে না পেরে বছরের পর বছর চাতালেই অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।কাজ অনুযায়ী সঠিক পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন না তারা। সরেজমিন ঘুুরে বিভিন্ন চাতাল মিলে গিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়- সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান সিদ্ধ করা মাঠে শুকানো এবং তা থেকে চাল তৈরি সব কাজই করে  যাচ্ছেন শ্রমিকরা।

তাদের দাবি পরিশ্রম অনুযায়ী তাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য তো রয়েছেই। নারীরা পুরুষের সমান কাজ করলেও পারিশ্রমিক পায় পুরুষের তুলনায় অনেক কম। যেখানে একজন পুরুষ প্রতিদিন তিনশ’ টাকা পায় সেখানে একজন নারী পায় মাত্র ষাট টাকা। এসব চাতাল শ্রমিকরা জীবিকা নির্বাহের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে আসেন। কেউ ঋণের দায় মাথায় নিয়ে কেউবা সংসারে অভাব অনটন ও নদী ভাঙনে সহায় সম্বল হারিয়ে। মালিকদের কাছ থেকে এককালীন দাদন নেয়ার পর যে বেতন পান তা দিয়ে দাদনের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে জিম্মি হয়ে থাকতে  হচ্ছে তাদের।

কিশোরগঞ্জ থেকে আসা এরশাদ আলী জানান, মিলে আসার সময় মালিক আমাদের ৪৫/৫০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ সোয়া লাখ টাকা দাদন দেন। আমাদের সম্পূর্ণ কাজ প্রোডাকশনের ওপরে। প্রতি বস্তা ধান শুকানো থেকে শুরু করে ডেলিভারি পর্যন্ত ১৮ টাকা দেয়া হয় আমাদের। আমরা ১০/১৫ জন শ্রমিক একটি মাঠগেইলে কাজ করতে দুই/তিন দিন সময় লাগে। তাতে দৈনিক জন প্রতি তিনশত টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে আমাদের বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও অগ্রিম দাদন নেয়ায় ইচ্ছা করলেও আমরা পরিবারের কাছে যেতে পারি না। দাদন পরিশোধ না করা পর্যন্ত তাদের কাছে বন্দি থাকতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাতাল শ্রমিক জানান, এক লাখ টাকার দাদনে বছরে ২০ হাজার টাকা কাটে। বাকি ৮০ হাজার টাকা। এ গুলো বছরে বছরে পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু মালিকরা যে টাকা বেতন দেন তা দিয়ে দাদনের ঋণ পরিশোধ করতে পারি না।

চাতাল কলে কর্মরত নারী শ্রমিক আয়েশা বেগম বলেন, আমরা সারা দিন রৌদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে যে পরিশ্রম করি সে অনুযায়ী আমাদের বেতন পোষায় না। অথচ পুরুষদের থেকে আমাদের কষ্ট বেশি। কিন্তু পুরুষদের তুলনায় আমরা পারিশ্রমিক পাচ্ছি কম। আমরা নারীরা শ্রম বৈষ্যমের শিকার হচ্ছি। এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ চাতাল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হরমোজ আলী বলেন, আমরা দুই বছর আগে সব শ্রমিকদের নিয়ে দাবি দাওয়া, বেতন মজুরি বাড়ানো জন্য আন্দোলন করেছিলাম। তারপরে ২/ ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তবে মিলের মালিক হুশিয়ারি করে দিয়ে বলেন, আমাদের দাদন দিয়ে দাও। কারণ অল্প বেতনে দাদন পরিশোধ করা সম্ভব না। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমাদের মজুরি যেন বাড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

বয়লার মালিক উবায়দুল্লাহ ও কামরুজ্জামান রিপন কিছুটা বৈষম্যের কথা স্বীকার করে বলেন, এটি দীর্ঘদিনের নিয়ম ও প্রথাগতভাবে চলছে। এছাড়া মহিলা ও পুরুষের কাজে কিছুটা বেশ-কম রয়েছে। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারাদেশে আড়ম্বরপূর্ণভাবে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। কিন্তু এ চাতাল-কন্যারা নারী দিবস কী - তা জানেন না। জানার আগ্রহও নেই তাদের। ঘুম ভেঙেই চোখ মুছতে মুছতে তাদের দৌড়াতে হয় চাতালে। সেই ফাঁকে স্বামী-সন্তানদের জন্য রান্না-বান্নাও সারতে হয়। শ্রম, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সমাজের সবক্ষেত্রে নারীদের প্রতি এ বৈষম্যের অবসান নিয়ে কোনো মাথাব্যথাও নেই তাদের। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo