• বিশেষ প্রতিবেদন

নদী দখলে অস্তিত্ব হারাচ্ছে ডাহুক

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৩ মার্চ, ২০২২ ১৬:৪০:৫৮

ছবিঃ সিএনআই

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ নদীর দুই পাড় দখলে অস্তিত্ব হারাতে যাচ্ছে ডাহুক নদী। ভারতে উৎপত্তি হয়ে জেলার তেঁতুলিয়া মাঝিপাড়া এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ১৪ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করেছে। কিন্তু বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে ডাহুক। দখল হয়ে যাচ্ছে নদীর দুই পাড়। সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে নদীর গতিপথ। প্রভাবশালী কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নদী দখল করে নির্মাণ করছে স্থাপনা। নদীর গতিপথ বন্ধ করে চলছে চাষাবাদ।

বালু ও পাথর ব্যবসায়ীরা নির্বিচারে নদী থেকে অপরিকল্পিত ভাবে পাথর বালি উত্তোলন করছে। তিন বছর আগে স্থানীয় পাথর ব্যবসায়িরা ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন ক্ষতবিক্ষত করে নদীটি। স্থানীয় নদী-প্রেমিরা ড্রেজার বন্ধের দাবীতে রাস্তায় আন্দোলনে নামে। পরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর হস্তক্ষেপে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বন্ধ হয়ে গেলেও এখনো দখল থামেনি।

স্থানীয়রা বলছেন একসময় বিপুল জলরাসী নিয়ে প্রবাহিত হতো এই নদী । নদীর স্বচ্ছ জলে পাওয়া যেতো নানা রকমের সুস্বাদু দেশি মাছ। নদীর দুই পাড়ে বরই গাছসহ বিভিন্ন রকমের উদ্ভিদের জঙ্গলে বাস করতো নানা ধরনের পশু পাখি। নদী কেন্দ্র করে বালাবাড়ি, মান্ডুল পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের জেলেরা জীবিকা নির্বাহ করতো। দু’কুল প্লাবিত করে প্রবাহের সময় বয়ে আনতো পলি মাটি। চাষাবাদে রাখতো অনন্য ভূমিকা। ডাহুকে পাওয়া যায় দুটি খনিজ সম্পদ। বালি এবং পাথর। এই বালি এবং পাথর দিয়ে নির্মিত হচ্ছে দেশের সড়ক ও স্থাপনা।

সম্প্রতি কাজী ফার্ম নামে একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ি গ্রæপ নদীটির একটি অংশকে নিজেদের জমি দাবী করে গতিপ্রবাহ বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। নদীর চলমান পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে তারা। জানা গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করলেও রাতের অন্ধকারে তারা স্থাপনা নির্মাণ করছেন।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সিনিয়র সাংবাদিক ও বাংলাদেশ নদী রক্ষা আন্দোলনের তেঁতুলিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি আশরাফুল ইসলাম জানান, নদীটি নানাভাবে দখলের কারণে নদীটি অর্ধেক মৃত। ডাহুক নামটির কারণেই নদীটির পরিচিতি আছে সারা দেশে। এপার ওপারের দুটি ইউনিয়নের কয়েক লক্ষ মানুষের  কৃষি এবং কর্মসংস্থানে এই নদীর অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালীদের প্রকাশ্য দখলে নদীটি মরে যাচ্ছে। কাজী ফার্ম নামের একটি ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান ডাহুকের প্রবাহ বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে ডাহুক।

এ ব্যপারে কাজী ফার্মের ডেপুটি ম্যানেজার ( প্রশাসন) আকরামুজ্জামান শেখ জানান, মালিকানা সূত্রে নদীর সীমানা ঠিক রেখে আমরা স্থাপনা করছি। সীমানা নির্ধারনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতাও চেয়েছি আমরা। আপাতত কাজ বন্ধ আছে। সীমানা নির্ধারনের অপেক্ষায় আছি।

তেতুঁলিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ জাবের আহমেদ জানান, নদীর গতিপ্রবাহ বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছিল । আমরা বন্ধ করে দিয়েছি । এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ডাহুক নদীর বিষয়টি আমি অবগত। সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি কাজী ফার্মের দেড় একর জমি নদীতে রয়েছে। এ জন্য নদী শাসন কল্পে নদীর সীমানা নির্ধারণ ও জরিপের জন্য তহশীলদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জরিপের বিষয়টি চুড়ান্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, বিভিন্ন দিক দিয়ে নদীটি দখল হওয়ার কারণে প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আমরা প্রশাসন এ ব্যাপারে জানিয়েছি। ডাহুকের প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে খনন উদ্যোগের প্রয়োজন।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo